ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

অভিশংসন তদন্তের মুখে ট্রাম্প

অভিশংসন তদন্তের মুখে ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন তদন্ত আগামী বুধবার থেকে প্রকাশ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। এর ফলে আরও চাপের মুখে পড়লেন ট্রাম্প। যদিও এখনও তার দল ও সমর্থকরা প্রেসিডেন্টের প্রতি অব্যাহত আনুগত্য প্রকাশ করে চলেছেন।

অভিশংসন বা ইমপিচমেন্টের মাধ্যমে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করা সহজ কাজ নয়। পার্লামেন্টর উভয় কক্ষে যথেষ্ট সমর্থন না পেলে এমন পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়ে যায়। এর অর্থ হচ্ছে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের মাধ্যমে সরাতে হলে তার নিজ দলের পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্যকে তার বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে। দলীয় স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে কেবল দেশের স্বার্থে এমন বিরল অবস্থান নিলে তবেই বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাসীন ব্যক্তিকে পদচ্যুত করা সম্ভব। কখনও কখনও বিপুল সংখ্যক জনমতের কারণে দলীয় এমপিরা এমন অবস্থান গ্রহণ করতে বাধ্য হয়ে থাকেন। তবে বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে দেশের মানুষ এমন ধারণা পোষণ করছেন কিনা, সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। চলতি সপ্তাহে ইমপিচমেন্ট তদন্ত শুরু হওয়ার পর তার ইঙ্গিত মিলবে।

মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষে প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট তদন্তের শুনানি চলছে। রুদ্ধদ্বার কক্ষে অনেক ব্যক্তির কাছ থেকে সাক্ষ্য প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি। বুধবার থেকে প্রকাশ্যে সেই পর্ব শুরু হবে। মার্কিন টেলিভিশনে সেই ঘটনা সরাসরি সম্প্রচারিত হবে বলে জানা গেছে।

এর আগে মাত্র একবারই কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিলো। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জের ধরে ১৯৪৩ সালে অভিশংসনের মাধ্যমে পতন ঘটেছিলো তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের। সিনেটে ওয়াটারগেট শুনানির পর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে আমেরিকার মানুষ আবার এমন ঘটনার সাক্ষী হবে কিনা সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

১৯৪৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট নিক্সনের বিরুদ্ধে আনীত অভিশংসনের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিল। এরপর ১৯৯৮ সালে বিল ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে তদন্ত নিয়েও মার্কিনীদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা গিয়েছিল। বর্তমানে টেলিভিশনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও উত্তপ্ত হয়ে উঠবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই নিয়ে চতুর্থবার ইমপিচমেন্ট তদন্ত শুরু হতে চলেছে।

ধারণা করা হচ্ছে, বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল ইতোমধ্যেই প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে বলেই প্রকাশ্যে শুনানির পথে অগ্রসর হয়েছে। গোপন অধিবেশনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বেশ কিছু প্রতিলিপিও প্রকাশিত হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সম্পর্কে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে ট্রাম্প যেভাবে এক বিদেশি রাষ্ট্রের উপর যে পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তা ইম্পিচমেন্টের কারণ হতে পারে বলে বিরোধীরা মনে করছে।

অভিযোগ উঠেছে, ডেমোক্র্যাটিক দলের অন্যতম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন ও তার পুত্র সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করতে ট্রাম্প নাকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। জানা যায়, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত না করলে ইউক্রেনের নির্ধারিত মার্কিন সামরিক সাহায্য বন্ধ রাখার হুমকি দিয়েছিলেন ট্রাম্প।

ইমপিচমেন্ট তদন্তে অগ্রগতি ঘটলে এবং প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আরও স্পষ্ট তথ্যপ্রমাণ জোগাড় হলে পরবর্তী পর্যায় শুরু হতে পারে। এর জের ধরে সাধারণ মার্কিন জনগণের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা দ্রুত হ্রাস পেলে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলের অনেক পার্লামেন্ট সদস্যও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যথেষ্ট সমর্থনের ভিত্তিতে মূল ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। এ অবস্থায় পদত্যাগ করতে পারেন ট্রাম্প।

তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প শিবিরে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং বিরোধীদের এমন চাপ উপেক্ষা করে রিপাবলিকান দলের পার্লামেন্ট সদস্যরা প্রেসিডেন্টের প্রতি অব্যাহত সমর্থন প্রদর্শন করে চলেছেন। একই সঙ্গে তারা বিরোধী দলের আনা এই ইমপিচমেন্ট তদন্তকে বিরোধীদের বড় ষড়যন্ত্র হিসেবেই দেখছেন।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত