ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

‘শারীরিক মিলনের সময় সহিংসতা বাড়ছে’

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৩০

‘শারীরিক মিলনের সময় সহিংসতা বাড়ছে’
ছবি প্রতীকী

সম্মতিসহ শারীরিক সম্পর্কের সময় সহিংসতার ঘটনা স্বাভাবিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এই বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক কাজ করা প্রচারণা কর্মীরা। বিবিসি রেডিও ফাইভ লাইভের একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, যুক্তরাজ্যের ৪০ বছরের কম বয়সী নারীদের এক-তৃতীয়াংশই সঙ্গমের সময় অযাচিতভাবে সহিংসতার (চড় মারা, শ্বাসরোধ করা, থুতু দেয়া) শিকার হয়েছেন।

যেসব নারীর এই ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাদের অন্তত ২০ শতাংশ জানিয়েছেন, পরবর্তীতে তারা ভীত বা বিপর্যস্ত বোধ করেছেন। ২৩ বছর বয়সী অ্যানা জানান, তিনজন আলাদা পুরুষের সাথে সম্মতিক্রমে শারীরিক সম্পর্কের সময় তিনি এধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন।

প্রথমবার তার চুল ধরে টানা হয় এবং চড় মারা হয়। এরপর তার সঙ্গী অ্যানার গলায় হাত দেয়ার চেষ্টা করেন। অ্যানা বলেন, আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। আমি খুবই অস্বস্তি বোধ করি এবং ভয় পাই। কেউ যদি রাস্তায় আপনাকে চড় মারতো এবং গলা চেপে ধরতো তাহলে সেটিকে হামলা হিসেবে দেখা হতো।

নিজের বন্ধুদের সঙ্গে যখন অ্যানা এই অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেন তখনই বুঝতে পারেন যে এরকম ঘটনা অহরহই ঘটছে। তিনি বলেন, এরপর থেকে দেখলাম অধিকাংশ পুরুষই এসব কাজের সবগুলো একসাথে না হলেও অন্তত কোনো একটি করার চেষ্টা করেন।

আরেকবার সঙ্গমরত অবস্থায় তার অনুমতি না নিয়ে কোনো ইঙ্গিত না দিয়েই পুরুষ সঙ্গী অ্যানার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। এ বছরই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা অ্যানা বলেন, তার আরেক সঙ্গী শারীরিক মিলনের সময় তার ওপর এতটাই বল প্রয়োগ করে যে পরবর্তীতে তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষতচিহ্ন থেকে যায়।

‘আমি জানি কিছু নারী বলবেন যে তারা এগুলো উপভোগ করেন। সমস্যা হয় তখনই, যখন পুরুষরা ধরে নেয় যে সব নারীই সেগুলো উপভোগ করবে।’

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাভান্টা কমরেস যুক্তরাজ্যের ১৮ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ২ হাজার ২ জন নারীকে জিজ্ঞেস করেন তারা শারীরিক মিলনের সময় চড়, শ্বাসরোধ, কন্ঠরোধ অথবা থুতু দেয়া উপভোগ করেন কিনা এবং অযাচিতভাবে এরকম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি তাদের পড়তে হয়েছে কিনা।

এক-তৃতীয়াংশের বেশি নারীই (৩৮ শতাংশ) এই ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান। ৩১ শতাংশ নারী জানিয়েছেন তারা এরকম ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন। কিন্তু তা তাদের অনুমতি সাপেক্ষে ছিল। আর ৩১ শতাংশ নারী বলেছেন তাদের এ ধরণের কোনো অভিজ্ঞতা হয়নি, এ সম্পর্কে জানেন না অথবা তারা এ নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন।

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা সেন্টার ফর ওমেন্স জাস্টিসের মতে এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা বদ্ধি পাওয়ায় বোঝা যায় যে শারীরিক সম্পর্কের সময় অবমাননাকর, ঝুঁকিপূর্ণ ও সহিংস কাজের অনুমতি দেয়ার জন্য নারীদের ওপর চাপ বাড়ছে।

আমি আতঙ্কিত হয়ে যাই

এমার বয়স ত্রিশের কোঠায় এবং তিনি মাত্রই দীর্ঘ সময় টিকে থাকা একটি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তারপর তিনি একরাতের জন্য এক ব্যক্তির সাথে শারীরিক মিলন করেন।

‘আর সে সময় কোনো কিছু না জানিয়েই সে আমার শ্বাসরোধ করে। আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই এবং আতঙ্কিত বোধ করি। সেসময় আমি কিছু বলিনি কারণ আমার চিন্তা হয় যে, এই ব্যক্তি আমার ওপর জোর প্রয়োগ করতে পারে।’

এমাও মনে করেন যে নীল ছবি দেখেই ওই ব্যক্তির মাথায় এ রকম চিন্তা এসেছে। মনে হচ্ছিল সে অনলাইনে এরকম কিছু দেখেছে এবং সেটাই বাস্তব জীবনে চেষ্টা করছে।

গবেষণায় উঠে আসে যে, যারা শারীরিক মিলনের সময় চড়, শ্বাসরোধ, কন্ঠরোধ বা থুতুর মত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তাদের ৪২ শতাংশ সেগুলো মেনে নিতে চাপ বোধ করেছেন বা তাদের জোর করে সেগুলো মেনে নিতে রাজি করানো হয়েছে।

সহিংসতা স্বাভাবিক হয়ে উঠছে

শারীরিক সম্পর্কের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ স্টিভেন পোপ এই ধরনের কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব প্রতিদিনই দেখতে পান বলে জানান। এট একটি নীরব মহামারি। মানুষ এগুলো করে কারণ তারা মনে করে যে এটি স্বাভাবিক, কিন্তু এর প্রভাব ক্ষতিকর হতে পারে। অনেকসময় এরকম কাজ সম্পর্কের অবমূল্যায়ন করে। আর সবচেয়ে খারাপ বিষয় হলো, এটি সহিংসতাকে গ্রহণযোগ্যতা দেয়।

তিনি মন্তব্য করেন, যারা এ ধরনের কাজ করে তারা এর নেতিবাচক দিকগুলো সম্পর্কে জানে না। সচেনতা কর্মী ফিওনা ম্যাকেঞ্জি বলেন যে এই জরিপের ফল রীতিমত ভীতিকর।

আমি প্রায়ই নারীদের কাছ থেকে শুনি যে শারীরিক মিলনের সময় সঙ্গী তাদের চড় মেরেছে, থুতু দিয়েছে, শ্বাসরোধ করেছে, ঘুষি দিয়েছে বা গালিগালাজ করেছে। যদিও ওই সঙ্গীর সাথে সম্মতিক্রমেই মিলনে জড়িয়েছিলেন নারীটি। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওয়াইএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত