ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

চুল পাকার রহস্য ও সমাধান পেয়েছে বিজ্ঞানীরা

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২০, ১২:৫১

চুল পাকার রহস্য ও সমাধান পেয়েছে বিজ্ঞানীরা

মানসিক চাপে চুল কেন সাদা হয়ে যায়, তার প্রতিকার কী কিংবা কিভাবে চুল পেকে যাওয়া ঠেকানো যাবে, সে রহস্যের সমাধান বের করেছে বিজ্ঞানীরা।

ইঁদুরের ওপর চালানো এক পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, যেসব স্টেম সেল গায়ের এবং চুলের রং নিয়ন্ত্রণ করে তীব্র ব্যথা থেকে উদ্ভূত চাপে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এইভাবে দেখা গেছে, মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে গাঢ় রঙ এর ইঁদুরের গায়ের সমস্ত লোম পেকে সাদা হয়ে গেছে।

ব্রাজিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই গবেষণার ফলাফল ধরে সামনের দিনে বয়স বাড়ার সাথে সাথে চুলের রঙ বদলে যাওয়া ঠেকানোর ওষুধ আবিষ্কার সহজ হতে পারে।

৩০ বছরের পর নারী পুরুষ যে কারেই চুল সাদা হতে শুরু করতে পারে, যদিও স্বাভাবিকভাবে বয়স বাড়ার লক্ষণ হিসেবে চুলের রং পরিবর্তন হয়। তার সাথে জিনের মানে বংশের লোকের চুল পাকার ধরণ ও সময়ের একটা সম্পর্ক থাকে। তবে, মানসিক চাপে যে চুল পেকে সাদা হয়ে যায়, এ কথা বহুকাল ধরেই প্রচলিত আছে।

কিন্তু বিজ্ঞানীরা এতদিন জানতেন না, ঠিক কিভাবে সেটা হয়।

সাও পাওলো ইউনিভার্সিটি এবং হার্ভাড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে মেলানোসাইট স্টেম সেল সম্পর্কিত, যেটি মেলানিন উৎপাদন করে। মেলানিনের মাত্রার হেরফেরের কারণে চুল ও গায়ের রঙ এর ফারাক হয় মানুষের।

নেচার সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় হার্ভাডের বিজ্ঞানী অধ্যাপক ইয়া-সিয়ে সু জানিয়েছেন, আমরা এখন নিশ্চিত যে মানসিক চাপের কারণে মানুষের চুল অকালে পেকে যেতে পারে এবং সেটা কিভাবে হয়, এখন আমরা তা জানি।

স্থায়ী ক্ষতি

গবেষকেরা বৈজ্ঞানিক নিরীক্ষার জন্য ইঁদুরের শরীরে তীব্র যন্ত্রণা সৃষ্টির মাধ্যমে এই পরীক্ষা চালিয়েছেন। তাতে দেখা গেছে, অ্যাড্রেনালিন এবং কর্টিসল নিঃসরণ হয়, হৃদপিণ্ডের গতি ও রক্তের চাপ বেড়ে যায়, এবং তাদের নার্ভাস সিস্টেমে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। এবং চূড়ান্তভাবে এর ফলে ইঁদুরের মধ্যে ব্যাপক চাপ তৈরি হয়।

ক্রমে এই প্রক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেয়া হয় এবং দেখা যায় চুলের ফলিকলে থাকা মেলানিনে আঘাত করতে শুরু করে এই প্রক্রিয়া।

বিজ্ঞানী অধ্যাপক ইয়া-সিয়ে সু বলছেন, আমি ধারণা করেছিলাম স্ট্রেস বা মানসিক চাপ শরীরের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু আমাদের ফলাফলে আমরা যা দেখেছি তা কল্পনারও বাইরে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে পিগমেন্ট-পুনঃরুৎপাদনকারী স্টেম সেলগুলো সম্পূর্ণ নিঃশেষ হয়ে যায়। এবং এরপর আর আপনার পিগমেন্ট তৈরি হবে না। ফলে ক্ষতিটা স্থায়ী।

আরেক পরীক্ষায় গবেষকেরা দেখেছেন, কিছু ইঁদুরের লোমের রং পরিবর্তন থামিয়ে দেয়া হয়েছিল, তাদেরকে অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ দেবার মাধ্যমে যা তাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। এবং শারীরিক যন্ত্রণায় থাকা ইঁদুরের সঙ্গে এই চাপমুক্ত ইঁদুরের অবস্থা তুলনা করতে গিয়ে দেখা যায় তাদের স্টেম সেল ক্ষতিগ্রস্ত হবার পেছনে এক ধরণের প্রোটিন দায়ী।

সাইক্লিন-ডিপেন্ডেন্ট কিনাস সিডিকে নামে এই প্রোটিনকে যখন দমন করা হয়, তখন ইঁদুরের লোমের রং বদল থেমে যায়। আর এর মাধ্যমেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন কিভাবে চুলের রং পরিবর্তন ঠেকানো যাবে, অর্থাৎ ওষুধ তৈরির সময় এই সিডিকে নামে এই প্রোটিনকে নিয়ন্ত্রণের কথা মাথায় রেখেই সেটা করতে হবে।

আর একে চুল পাকা ঠেকানোর পথ পেয়ে যাওয়া ভাবছেন না অধ্যাপক ইয়া-সিয়ে সু। তিনি বলছেন, এটি মানুষের ওপর পরীক্ষা করা শুরুর প্রক্রিয়া আরম্ভ করবে মাত্র। সেই সঙ্গে শরীরের অন্যান্য অংশের চুলও কেন পাকে সেটাও বুঝতে পারছি আমরা। সূত্র: বিবিসি বাংলা

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত