ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র মুহুরী প্রজেক্ট

  সাহেদ সাব্বির

প্রকাশ : ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:০৪  
আপডেট :
 ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:২০

দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্র মুহুরী প্রজেক্ট

ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায় বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে মুহুরী সেচ প্রকল্প। নৈসর্গিক শোভা ও মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন এখানে ছুটে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। নদীর পাড়ে সবুজ বনানী ঘেরা মায়াবী পরিবেশের সাথে সাগরের ঢেউ মিলেমিশে একাকার। প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা দেখে অনেক আনন্দ পায় দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পর্যটকদের সংখ্যাও। নদীতে চলে সারি সারি নৌকা। মাঝি ধরে মাছ। মাছ ধরা ও নৌকা ভ্রমণের দৃশ্য ভ্রমণ পিয়াসী মানুষদের আকৃষ্ট করে।

ঈদ, বিজয় দিবস-স্বাধীনতা দিবসসহ অন্যান্য দিবসে আরো জমে উঠে এ পর্যটন এলাকা। শীতকালে অতিথি পাখির আগমন ও তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে এ এলাকা। এখানে যে আসে তাকেই নিঃস্বার্থভাবে মুগ্ধ করে এখানকার অপরূপ প্রকৃতি। নদীর পানিতে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাই ভোর থেকে রাত অবধি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসেন মুহুরী সেচ প্রকল্পে।

১৯৮২ সালে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ সেচ প্রকল্প নির্মিত হয়। এ প্রকল্পের ৪০ গেট বিশিষ্ট রেগুলেটর ও ক্লোজার ড্যাম রয়েছে। এর ৫০০ গজ দূরে অবস্থিত দেশের প্রথম বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যা ৬ একর ভূমির ওপর ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৫ সালে স্থাপন করা হয়। এর ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। মুহুরী নদীতে ভাসমান মাছ চাষ, নদীতে জাল ফেলে জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, ডেইরি ফার্ম, নার্সারি ও এগ্রো খামারসহ ইত্যাদি চোখ জুড়ানো দৃশ্য মনে রাখার মতো।

খেটে খাওয়া মানুষ এ প্রকল্পকে ঘিরেই জীবিকা নির্বাহ করে। আবার কেউ কেউ জাল ফেলে সাগর থেকে ফেনী নদীতে ভেসে আসা চিংড়ি পোনা সংগ্রহ করে।

কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর পর্যটন কেন্দ্র বা নগরী হিসেবে গড়ে ওঠার কথা থাকলেও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা বা ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের সদিচ্ছার অভাবে কাঙ্ক্ষিত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। নেই কোনো ভালো মানের হোটেল বা মোটেল। তাই বিদেশি পর্যটক এখানে আসতে চান না।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আধুনিক একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে সরকারের এখান থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো। শুধু দরকার মানসম্মত আবাসিক হোটেল।

মুহুরী সেচ প্রকল্পে যাতায়াতের একমাত্র বাহন সিএনজিচালিত অটোরিকশা। কিন্তু মুহুরী নদীর কোল ঘেঁষে যে পিচঢালা সড়ক সেটি দিয়ে যাত্রীবাহী পরিবহন যেমন বাস, মিনিবাস চলাচল সম্ভব। এছাড়া, ছোট্ট একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হয়। তিন যুগের অধিক সময়েও প্রকল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই এখানে ছিনতাই হয়। আবার ভ্রমণের নাম করে কতিপয় লোকজনকে আপত্তিকর কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এ অবস্থায় বিব্রত এলাকার মানুষ। আবার সত্যিকারে পর্যটককেও লাঞ্ছিত হতে দেখা গেছে। এলাকার উঠতি বয়সি বখাটে তরুণরা যুগলদের দেখলে সুযোগ বুঝে তাদের খারাপ মন্তব্য করে। এছাড়া, টাকা-পয়সা,গহনা, দামি মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। আবার কখনো নারী পর্যটককে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়।স্থানীয় বাসিন্দা গাজী হানিফ ক্ষোভের সাথে জানান, এলাকা ও স্থাপনাগুলো মনোরমভাবে সাজানো ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। আর পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে পারলে এখানে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।

সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন জানান, অপার সম্ভাবনাময় এ এলাকা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়ার পাশাপাশি বেকার লোকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হতো। কারণ প্রতিদিন প্রকল্প এলাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত লোক প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে আসেন।

এ বিষয়ে ফেনী-৩ আসনের সাংসদ সদস্য লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকারিভাবে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ডিও লেটার প্রদান করা হয়েছে। আমরা খুব শিগগিরই মুহুরী প্রকল্প এলাকাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করব।

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত