ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

কর্মক্ষেত্রে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে করণীয় (শেষ পর্ব)

  লায়লা নাজনীন

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৩৪

কর্মক্ষেত্রে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে করণীয় (শেষ পর্ব)
প্রতীকী ছবি

আগের দুই পর্বের ধারাবাহিকতায় এবার তৃতীয় পর্বে আলোচনা করবো আরো প্রয়োজনীয় পাঁচটি সফটস্কিল নিয়ে। জীবনে চলার পথে অনেক সময় আমরা দেখি সম্পদশালী বা অর্থবিত্তের অধিকারী মানুষ সময়ের দুরবস্থায় নিঃস্ব আবার অনেকে ভালো পজিশনের জব হারিয়েছে এমনও হয়। একমাত্র জ্ঞান, অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার ফলে ফিরে পাওয়া যায় সব কিছু। আপনার ধন সম্পদ চুরি হতে পারে, আইডিয়া কপি হতে পারে কিন্তু আপনার দক্ষতা কেউ আপনার থেকে চুরি বা কপি করতে পারবে না। তাই নিজেকে যত বেশি দক্ষতা সম্পন্ন করবেন তত বেশি ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হবে এবং আপনি নিরাপদ ও সুনিশ্চিত থাকবেন।

ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স : বর্তমান সময়ে বহুল আলোচিত এবং প্রয়োজনীয় একটি স্কিল হচ্ছে EI (Emotional Intelligence). ইআই শুধু কর্মক্ষেত্রেই না সামাজিক, পারিবারিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও সফল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ একটি সফট স্কিল। ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স আমাদের একধরনের দক্ষতা, যার সাহায্যে আমরা আরেকজনের ইমোশনকে বুঝতে পারি। আরেকজনের ইমোশনকে বোঝা সে অনুযায়ী রিএক্ট করা সেই সাথে নিজের ইমোশনকে কন্ট্রোল ও পরিচালনা করাই ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স। নব্বইয়ের দশকে এই শব্দটি প্রথম সংজ্ঞায়িত হওয়ার আগে, এইচআর নেতা এবং ব্যবসায়ী পেশাদাররা এই স্কিলটির তেমন গুরুত্ব দেয়নি বা আবেগ এবং বুদ্ধিমত্তাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ জ্ঞানীয় ফাংশন হিসাবে বিবেচনা করেনি। আজ, কর্মক্ষেত্রে সংবেদনশীল বুদ্ধি (ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স) মনোবিজ্ঞানী এবং এইচআর বিশেষজ্ঞদের দ্বারা একটি উচ্চতর অধ্যয়ন করা ধারণা। আপনি ইমোশনালি ইন্টেলিজেন্ট কিনা বুঝবেন কীভাবে? ধরুন আপনার কোনো বন্ধু বা কলিগ আপনার কাজের সমালোচনা করছে। আমরা স্বভাবত কি করি? সমালোচনা নিতে পারি না, সাথে সাথে রিঅ্যাক্ট করে বসি, ঝগড়া শুরু করে দেই। ইমোশনালি ইন্টিলিজেন্ট ব্যক্তিরা সাথে সাথে সাথে রিএক্ট করে না। সেটা কে নানান আঙ্গিকে চিন্তা ভাবনা করে দেখে এই ক্রিটিসিজম কে পজিটিভলি নেয় এবং সেটা থেকে ভুল সংশোধন বা শেখার চেষ্টা করে। আমাদের দেশে ইআই-এর অভাব আমরা অনুভব করি। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে অফিস আদালত রাস্তা ঘাটে সব খানেই যেমন মানুষ মুখিয়ে থাকে একজন আরেকজনের সাথে লড়াই করার। যেমন : সোশ্যাল মিডিয়াতে ধরেন আপনার মন খারাপ দুঃখ সুখের কথা লিখলেন। আরেকজন খোঁচা মেরে কমেন্ট করে বসলো। ব্যাস, শুরু হয়ে গেলো যুদ্ধ। আবার রাস্তায় একজনের গাড়ির সাথে আরেকজনের গাড়ি ধাক্কা খেলো। শুরু হয়ে গেলো ভাংচুর। অফিস এ বস আপনাকে কাজের জন্য বকা দিলো, তখন আপনার মনে হয় ধ্যাৎ রিজাইন দিয়ে চলে যাই ।বস ভুল ধরিয়ে দিলে বা বকা দিলে সেটাকে খতিয়ে দেখতে হবে এবং সেটা লার্নিং হিসাবে নিয়ে চেষ্টা করতে হবে, যাতে নেক্সট টাইম এর পুনরাবৃত্তি না হয় । কর্মক্ষেত্রে টীম ওয়ার্ক এবং লিডারশিপ ক্যাপাবিলিটি এবং কনফ্লিক্ট রিসলভ এর জন্য বর্তমান সময়ে ইমোশনাল ইন্টিলেঞ্জেন্ট এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য ।

ক্রিটিকাল থিংকিং অ্যান্ড প্রব্লেম সলভিং : ক্রিটিকাল থিংকিং কর্ম ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্কিল। যদিও এই স্কিলটি এখন ও ততটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। প্লেটো এবং সক্রেটিসের মতো প্রাথমিক গ্রিক দার্শনিকদের সময় থেকেই সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা (ক্রিটিকাল থিংকিং) অনেক বিতর্ক ও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং আধুনিক যুগে ও এটি আলোচনার বিষয় হিসাবে অব্যাহত রয়েছে। ক্রিটিকাল থিংকিং হচ্ছে কোনো তথ্য বা ঘটনার বাস্তবতা ও ধারণার মধ্যে যৌক্তিক সংযোগ বোঝার জন্য স্পষ্ট এবং যুক্তি যুক্তভাবে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা। একটা সময় ছিল যখন কোন ইনফরমেশন দরকার হলে পাঠাগারের বই আর খবরের কাগজ এই ছিল আমাদের সম্বল। কিন্তু বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট এর যুগে সেটা অনেক সহজ সাধ্য হয়েছে বৈকি । কিন্তু ভুয়া ইনফরমেশন ও অনেক বেড়েছে। ফলে ঘটনা ও বাস্তবতার মাঝে মিল খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাই কোনো কিছু ঘটলেই সাথে সাথে জাজমেন্টাল না হয়ে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করতে হবে: কি হয়েছে? কেন হয়েছে? কীভাবে হয়েছে? কখন হয়েছে? কোথায় হয়েছে? বর্তমান সময়ে জব ইন্টারভিউতে ক্রিটিকাল থিংকিং এবিলিটি পরীক্ষা করা হয় এবং তাদের প্রায়োরিটি দেয়া হয় কারণ ক্রিটিকাল থিংকিং এবিলিটি যত ভালো হবে সে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় বিষয় গুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে এবং সমস্যাগুলি সমাধান করতে পারবে ।

মোটিভেশনাল স্কিলস : কর্মক্ষেত্রে মোটিভেশনাল স্কিলস অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।মোটিভেশন কাজের মান ভালো করে মোটিভেশন এর উৎস অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক হতে পারে। আমরা অনেক সময় মা বাবা, ভাই বোন, আত্মীয় স্বজন , অফিস কলিগ, বস এর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকি কখনো টিচার, মেন্টর এর মাধ্যমে। কখনো বা কোনও মোটিভেশনাল স্পিকার এর স্পিস এর মাধ্যমে বা কারো জীবনের সফলতার গল্প শোনার মাধ্যমে। কারণ যেটাই হউক না কেন আপনার নিজের ভিতরের কিছু করার অদম্য ইচ্ছাটা ও আপনাকে প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করতে পারে শত প্রতিকূলতার মাঝেও লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। নিজে অনুপ্রাণিত হওয়ার পাশাপাশি ভালো কিছু করার জন্য পরিবারের মানুষদের, কর্মক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য অফিস কলিগদের এবং সর্বোপরি দেশ ও দশের কল্যাণে সর্বস্তরের মানুষকে অনুপ্রাণিত করা উচিত। আপনার একটি সুন্দর কথা ও কাজ হতে পারে অন্য একটি মানুষের অনুপ্রেরণার কারণ, সুতরাং মোটিভেশনাল স্কিল সম্পর্কে সবাইকেই জানা উচিত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অন্যকে অনুপ্রাণিত করতে হবে অবশই ভালো এবং পজিটিভ কাজের জন্য। এত এত মোটিভেশনাল স্পিকার ও তাদের স্পিচ এর মাধ্যমে নিজের বিচার বুদ্ধি দিয়ে গ্রহণ করতে হবে, সেগুলোই যা আমাদের সঠিক পথ দেখাবে এবং আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।

এডাপ্টিবিলিটি এবং ফ্লেক্সিবিলিটি: একবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন সফট স্কিলস গুলোর মধ্যে এডাপ্টিবিলিটি এবং ফ্লেক্সিবিলিটি গুরুত্ব পেয়েছে । নিয়োগ কর্তারা এমন কর্মী নিয়োগ করতে চায়, যারা কিনা যেকোনো পরিবেশের সাথেই মানিয়ে যায় বা নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারে।পাশাপাশি যেকোন ধরণের পরিবর্তনকে সহজেই গ্রহণ করতে পারে।অনেক সময় প্ল্যান অনুযায়ী সব কাজ হয় না । তখন আমাদের অবস্থা বুঝে কাজ করতে হয় এবং টীম এর সবার সাথে এডজাস্ট করে কাজ করতে হয়। ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্ট ব্যক্তিরা এক্ষেত্রে সহজেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে। বিশ্বায়ন, ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভোল্যুশন এবং টেকনোলজির দ্রুত পরিবর্তন দিন দিন বাড়ছে । কর্মক্ষেত্রে অব্যাহত চ্যালেঞ্জ বৃদ্ধির এই সময়ের দৌড়ে তারাই টিকে থাকবে যাদের আছে এডাপটাবল ও ফ্লেক্সিবল হওয়ার সহজাত মনোবৃত্তি। তাই জরুরি এখন এডাপ্টিবিলিটি এবং ফ্লেবিলিটি স্কিল নিয়ে চর্চা করা ।

নেগোসিয়েশন দক্ষতা : নেগোসিয়েশন হল এমন গুণ যা দুটি বা ততোধিক দলকে কোনও সমঝোতায় পৌঁছাতে সাহায্য করে। এ স্কিল একটি প্রতিষ্ঠানের কম বেশি প্রত্যেকটি ডিপার্টমেন্টেই দরকার। আপনি যদি মানবসম্পদ বিভাগে কর্মরত থাকেন, তবে আপনার কর্মী নিয়োগের সময় স্যালারি নেগোসিয়েট করার দরকার হবে। যদি সাপ্লাই চেইন বা পার্চেজ বিভাগে কাজ করেন, তবে পণ্য বা কাঁচামাল ক্রয়ের সময়ে সরবরাহকারীদের সাথে নেগোসিয়েট করার দরকার হবে। যদি মার্কেটিং এ জব করেন, তবে পণ্য বিক্রয়ের সময়ে কাস্টমার এর সাথে নেগোসিয়েট করার দরকার হবে। ভালো নেগোসিয়েটর হওয়ার জন্য দরকার কমিউনিকেশন, প্লানিং এবং কৌশলগত জ্ঞান। ভালো নেগোসিয়েশন টেকনিক আর স্কিলস এর জন্য আপনি হতে আপনার অর্গানাইজেশন এর একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মী। সূত্র: বণিক বার্তা

লেখক: প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা, স্টার সিনেপ্লেক্স

আরো পড়ুন:

কর্মক্ষেত্রে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে করণীয় (পর্ব-১)

কর্মক্ষেত্রে নিজের গুরুত্ব বাড়াতে করণীয় (পর্ব-২)

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত