ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

পাকা তালের যত গুণাগুণ

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৩:০২

পাকা তালের যত গুণাগুণ

প্রকৃতিতে এখন চলছে ভাদ্র মাস। কথায় বলে ভাদ্র মাসের গরমে তাল পাকে। ভাদ্র মাসের ‘তালপাকা’ গরমে তাল নিয়ে লেখাটা খুব আনন্দদায়ক নয়। ব্যাপারটা একটু বেতালই বটে! আবার এই ভাদ্রের গরমেই পাকা তাল খেতেই হয়। ভাদ্র মাসে পাকা তালের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হওয়ার সময়। ইতোমধ্যে বাজারে পাকা তাল চলে এসেছে। পাকা তালের রস থেকে নানা ধরনের পিঠা-পায়েস তৈরি হয়।তালের মধ্যে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদান ও পুষ্টিগুণ আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

তালের পুষ্টিগুণ: পাকা তালের খাদ্যপযোগী প্রতি ১০০ গ্রামে জলীয় অংশ ৭৭.২ গ্রাম, খনিজ০.৭ গ্রাম, আঁশ ০.৫ গ্রাম, আমিষ ০.৭ গ্রাম, চর্বি ০.২ গ্রাম শর্করা ২০.৭ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৯ মিলিগ্রাম ও খাদ্য শক্তি ৮৭ কিলোক্যালরী রয়েছে। তালের রস শ্লেষ্মানাশক। এটি মূত্রকর , প্রদাহ ও কোষ্ঠকাঠিন্য নিবারণ করে। রস থেকে তৈরি তালমিশ্রি সর্দি কাশির মহৌষধ, যকৃতের দোষ নিবারক ও পিত্তনাশক।

তালের উপকারিতা: পাকা তালের রস দিয়ে নানা ধরনের পিঠা, গুড়, মিশ্রি, ইত্যাদি তৈরি করা যায়। আজকাল তাল দিয়ে জিলাপি, রসমালাই, রোল, পুলি পিঠা, তালের বড়া ইত্যাদিও তৈরি করতে দেখা যায়।

তালের পিঠা: বর্ষার বিকেলে, কি স্যাঁতসেঁতে সন্ধ্যায় তালের পিঠার চেয়ে মজাদার আয়োজন আর হয় না। কিন্তু পাকা তাল ছেঁকে তা থেকে রস আলাদা করার ঝামেলার জন্য অনেকেই এই আয়োজনে হাত দিতে দু’বার ভাবেন। তাল খাওয়ার নানা উপায় আছে। তবে পাকা তালের ক্বাথ জ্বাল দিয়ে ঘন করে খেয়ে থাকেন অনেকে। এর সঙ্গে নারকেল, দুধ, চিনি, কলা ইত্যাদি মিশিয়ে আরো নানা স্বাদের খাবার তৈরি হয়। এর মধ্যে আছে—

তালসত্ত্ব: তালের রস ও চিনি দিয়ে বানানো হয় তালসত্ত্ব। এটি রোদে শুকিয়ে সারা বছর খাওয়া যায়। অনেকে ভাত ও দুধের সঙ্গে এই তালসত্ত্ব খেয়ে থাকেন।

তালের জুস: তালের ক্বাথ, দুধ, চিনি দিয়ে জুস বানানো যায়। তাল যেহেতু ভাদ্র মাসে পাকে, সেই সময়ের গরমে এই জুস খাওয়ার প্রচলন রয়েছে।

তালের বড়া: তালের ঘন নির্যাসের সঙ্গে ডিম, চালের গুঁড়া, গুড় বা চিনি এবং কখনো নারিকেল দিয়ে তালের পিঠা তৈরি করা হয়। গ্রামগঞ্জে এই পিঠার ঐতিহ্য রয়েছে। তালের পিঠার সুন্দর সুবাস রয়েছে।

তালের কেক: কেকের সব উপকরণের সঙ্গে তালের রস মিশিয়ে কেক বানানো হয়। এর রং খুবই আকর্ষণীয় হয়। তালের কেকের মধ্যে চিনি কম এবং ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করলে ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগীদের জন্য ভালো খাবার হতে পারে।

তালের সেঁকা পিঠা: চিনি, দুধ, নারকেল যোগ করে তালের ক্বাথ জ্বাল দিয়ে তার সঙ্গে চালের গুঁড়া বা আটা মিশিয়ে কলাপাতায় খামির রেখে চুলায় সেকে নিয়েও খেতে দেখা যায়। এ ছাড়া তালের রুটিও একটি মজাদার নাশতা।

বলাই বাহুল্য, তালের পিঠার সবগুলো রেসিপি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- যত ঝামেলা ঐ তাল ছেঁকে কাঁথ বের করাতেই। ধৈর্য ধরে একবার রস তৈরি করতে পারা মানে অর্ধেক কাজ গুছিয়ে ফেলা। বাকি থাকল কেবল অন্যান্য উপকরণগুলো ঠিকঠাক মেশানো। এরপর পিঠা তৈরির প্রক্রিয়া একদম পান্তা ব্যাপার। তালের রস থেকে যেসব পিঠা তৈরি হয় তার মধ্যে তালের বড়া, কলাপাতায় তালের পিঠা, তালের পাটিসাপটা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পাকা তালের উপকারিতা: সদ্য আহরিত তালের রস পানীয়। তাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণসমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। তাল-দুধ, তাল-মুড়ি, আঁটির ভেতরের সাদা শাঁস খুবই মুখরোচক খাবার। এসব খাবার খেলেও মুখের রুচি বাড়ে। হজমও হয় ভাল। পাকা তালের রস কনফেকশনারীতে শুকনো খাবার প্রস্তুত করনের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে।

এ ছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষায়ও তাল ভূমিকা রাখে। তাল ভিটামিন বি-এর আধার। তাই ভিটামিন বি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে তাল ভূমিকা রাখে। তালে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে, যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ ভালো করতে তাল ভালো ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে/টিআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত