রোজ খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
জীবন-শিল্প ডেস্ক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ১৪:৫৪ আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২০, ১৫:০৭
খেজুর খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। খেজুরকে প্রাকৃতিক শক্তির উৎস বলা হয়। ভিটামিন, আঁশ, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ খেজুর একজন সুস্থ মানুষের শরীরে আয়রনের চাহিদার প্রায় ১১ ভাগই পূরণ করে। প্রতিদিন সকালে ৩-৪ টি খেজুর খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। বিশেষত যারা কনসিটপেমন বা কোনো ধরণের পেটের রোগে ভুগছেন তাদের জন্য তো এই ফলটি মহৌষধির চেয়ে কম নয়।
পুষ্টিগুণে ভরপুর ও আয়রনের অন্যতম উৎস খেজুর। প্রতিদিন ডায়েটে রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়ে, তেমনি স্থূলতার হাত থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়। তাই খেজুরকে ডায়েটে রাখার কথা বলেন পুষ্টিবিদরা।
শুকনো খেজুরেও শরীরের দরকারি খনিজ মেলে। ভিটামিনের চাহিদাও পূরণ হয়। মরু অঞ্চলের এ ফলের ঔষধিগুণ ও স্বাদ, দুই কারণেই এটি জনপ্রিয়। এ ছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে প্রচলিত খেজুরের বদলে শুকনো খেজুরকে ডায়েটে রাখতে বলেন বিশেষজ্ঞরা।
খেজুরের পুষ্টিগুণ
সুস্বাদু আর বেশ পরিচিত একটি ফল, যা ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। খেজুরের পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে বলা হয় চারটি বা ৩০ গ্রাম পরিমাণ খেজুরে আছে ৯০ ক্যালোরি, এক গ্রাম প্রোটিন, ১৩ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ গ্রাম ফাইবার এবং আরও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। তাই খেজুর খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শরীরের ক্লান্তিভাব দূর হয়। আছে প্রচুর ভিটামিন বি, যা ভিটামিন বিসিক্স মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
খেজুর শরীরে শক্তি জোগায়
শুকনো খেজুর ওজনের শতকরা ৮০ ভাগই চিনি এবং সে কারণেই সরাসরি রক্তে চলে যায়। আর সে কারণেই শুকনো খেজুরকে মরুভূমির গ্লুকোজ বলা হয়ে থাকে।
ব্লাড প্রেশার কমাতে সাহায্য করে
বিশেষজ্ঞের মতে, খেজুরে থাকা উচ্চ মাত্রার ভিটামিন ‘বি’ নার্ভকে শান্ত করে রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
খেজুর মনকে উৎফুল্ল করে
খেজুরে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফেন, যা সিরোটোনিন হরমোন তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া এই মিষ্টি ফল মনে আনন্দের অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়, খুশি রাখে।
স্ট্রেস কমায়
স্ট্রেস ও নার্ভাসনেসের কারণে মাথা ব্যথা হলে তা সহজেই দূর করতে পারে খেজুর। খেজুরে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, যা স্ট্রেস দূর করতে সহায়ক।
হাড় শক্ত করে খেজুর
ভিটামিন ‘কে’-তে ভরপুর খেজুর। হাড়কে মজবুত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে ভিটামিন ‘কে’।
রক্তস্বল্পতায় দূর করে
রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীরা প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন, তার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করে খেজুর।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় রাতে পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। পর দিন সকালে খেজুর ভেজানো পানি পান করুন। দূর হবে কোষ্ঠকাঠিন্য।
খুসখুসে কাশি দূর করে
সাধারণত যাদের খুসখুসে কাশি হয় তারা ২০-২৫ গ্রাম খেজুর, ২ কাপ গরম জলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ওই খেজুর চটকে নিয়ে সরবতের মতো করে খেলে খুসখুসে কাশি থেকে ১৫ দিনের মধ্যে উপকার পাবেন।
ত্বককে টানটান রাখে
অনেক সময়ে বয়স বাড়ার ফলে মুখের চামড়া কুঁচকে যায়। খেজুরে ভিটামিন বি রয়েছে। যা ত্বকের পক্ষে অত্যন্ত উপকারি। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৪-৫টি খেজুর নিয়ম করে খান। দেখবেন আস্তে আস্তে দাগ মিলিয়ে যাবে।
মস্তিষ্ক সচল রাখে
খেজুরের সব থেকে বড় গুণ হল খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে। আমাদের ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তির জোগান দিতে সক্ষম এই খেজুর।
খেজুর যেভাবে রাখবেন
তাজা খেজুর সরাসরি ফ্রিজে রাখা ভালো এবং কয়েকদিনের মধ্যেই তা খেয়ে ফেলা উচিত। তবে শুকনো খেজুর বা খোরমা কিছুদিন রেখে খাওয়া যায়। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে তাতে যেন পোকা বা ফাঙ্গাস না পড়ে। এরকমটা হলে খেজুর সাথে সাথেই ফেলে দেওয়া উচিত।
সাবধান!
যাদের মাইগ্রেন বা প্রচণ্ড মাথা ব্যথার সমস্যা রয়েছে, তাদের খেজুর না খাওয়াই ভালো। কারণ ছোট মিষ্টি খেজুরে ‘টিরামিন’ বলে যে পদার্থটি রয়েছে, তা মাথা ব্যথা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া আর যারা ডিপ্রেশনে ভুগছেন, তাদের জন্যও খেজুর খাওয়া ঠিক নয়। এক্ষেত্রে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনআর/আর