মঙ্গোলিয়ান কাজাখদের ৬০০০ বছরের ঐতিহ্য
ফিচার ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৬:৩৮ আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৬:৪৩
পৃথিবীর অন্যতম দূরবর্তী এলাকা মঙ্গোলিয়ার পশ্চিমে অবস্থিত আলতাই অঞ্চল। আধুনিক সভ্যতার ছোয়া লাগেনি এখানে। শীতে এই এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকায় দেখা যায় বরফে ঢাকা পাহাড়ের শীর্ষ, আবার গরমের দিন একই এলাকা ধূসর হয়ে যায়। ভৌগলিকভাবে এলাকাটি যথাক্রমে মঙ্গোলিয়া, কাজাখস্তান, চীন ও রাশিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা। তবে কোনো সীমান্ত দেয়াল নেই। ফলে অনেক সময় বোঝাও যায় না যে, কোন জায়গাটি কোন রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। তবে আমাদের আজকের আলোচনায় প্রাসঙ্গিক জায়গাটি মঙ্গোলিয়ার অন্যতম প্রদেশ বাইয়ান আলিগির অন্তর্ভুক্ত।
আলতাইয়ের এই নিষ্ফলা ভূমিতে একটি বিশেষ আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে। এই এলাকার উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩,০০০ মিটার। বহুকাল আগে কাজাখস্তান থেকে তারা এখানে এসে বসবাস শুরু করেন, তাই তাদের নাম কাজাখ। এদের মাথায় থাকে শিয়ালের চামড়া ও পশমের সমন্বয়ে তৈরি একধরনের বিশেষ টুপি আর দেহে থাকে ভেড়ার চামড়া ও পশমের সমন্বয়ে তৈরি বিশেষ পোষাক।
মঙ্গোলিয়ার আলতাই পর্বতের গা ঘেসে বিস্তৃর্ণ পার্বত্য ভূমি অঞ্চল। ঘোড়ার পিঠে চড়ে এবং প্রসারিত হাতে একটি সোনালি ঈগল নিয়ে কাজাখ শিকারীদের দুঃসাহসিক অভিযানের ইতিহাস ৬০০০ বছরের পুরনো। শূন্যের নিচে তাপমাত্রা ও প্রখর শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাঁচার জন্য পশুর চামড়া পরিহিত রুক্ষ চেহারার বাবা ও তার ছেলের ঘোড়ার পিঠে করে যাত্রা, তাদের প্রসারিত হাতে চোখবাঁধা বিশাল আকৃতির সোনালি ঈগল। যখনই নিচের সমভূমিতে একটি শিয়াল দৌড়ে যায়। ঈগলের চোখের বাধনটি খুলে দেয়া হয় এবং ঈগলটি তার শিকার ধরার জন্য উড়ে যায়। এর এটাই একজন পাক্কা শিকারীর দক্ষতার ও সম্মান অর্জনের পরীক্ষা।
একুশ শতকে তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে দৃশ্যটা অনেকের কাছে অনেকটাই বিরল। কিন্তু কাজাখদের এই ঐতিহ্য প্রকৃত অর্থেই কোনো আধুনিক কিছু নয়। ব্রোঞ্জ যুগের গুহার চিত্রকর্মেও এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এটাও উল্লেখ পাওয়া যায় চেঙ্গিস খান তার নাতিকে সাথে নিয়ে ঈগল দিয়ে এই শিকারের বিশেষ ভক্ত ছিলেন। মঙ্গোলীয়ার আলতাই পর্বতশ্রেণীর পাদদেশে বসবাসকারী কাযাখদের কাছে এটা একটা ট্রেডিশন। যা তারা আজও ধরে রেখেছে।
ঈগল দিয়ে শিকার কেন?
সোনালি ঈগল দিয়ে শিকারের প্রধান উদ্দেশ্য মাংস নয়, মূলত তাদের প্রধান উদ্দেশ্য পশম ও চামড়া সংগ্রহ। প্রধান শিকার হলো লাল এবং করস্যাক শিয়াল (ছোট প্রজাতির হলুদাভ বাদামি শিয়াল), খরগোশ, বনবিড়াল এবং মাঝে মধ্যে ছোট জাতের নেকড়ে; যারা কেউই বৃহৎ আকৃতির শক্তিশালী সোনালি ঈগলের শক্তি এবং ক্ষীপ্রতার কাছে কিছুই নয়। এই ঈগলগুলোর ওজন প্রায় ৭/৮ কেজি হয়ে থাকে।
সাইবেরিয়ান সোনালি ঈগল, বেরকুট (berkut) নামে পরিচিত এ ঈগলের উপ প্রজাতিটি (sub-species) হলো পৃথিবীর সবচেরে বড় ঈগলগুলোর মধ্যে অন্যতম। সাধারণত শিকারের কাজে ব্যবহার করা হয় বৃহৎ আকৃতির স্ত্রী ঈগল, এদের ডানা প্রায় ২ মিটার লম্বা এবং পায়ের নখর গুলো প্রায় ৬ সেঃমি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।
৮ কেজি ওজনের এ বৃহৎ পাখির মাধ্যমে শিকারের জন্য একজন ঈগল শিকারী ‘র প্রয়োজন হয় বিশেষ কৌশল, সামর্থ্য এবং সাহসের। প্রতি হাজারে শুধুমাত্র ২৪০ জন কাজাখ ঈগল দিয়ে এ শিকার কৌশলের সাথে জড়িত। এ কৌশলটি প্রধানত আংশিক যাযাবর কাজাখদের মধ্যে বংশ পরম্পরায় চলে আসছে। সাধারনত শীতের সময়ই এ শিকার অভিযান পরিচালিত হয়ে থাকে।
ঈগল দিয়ে শিকারের অন্য একটি কারণ হলো এদের ঘ্রাণ শক্তি প্রখর। দূর থেকে এরা গন্ধ পেয়ে শিকারের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে
অন্যরা যা পড়ছেন:
> ভারত শাসন করা আফ্রিকান রাজা মালিক আনদিল