ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিশ্বের ভয়ঙ্কর-সুন্দর ৫ সেতু

  ফিচার ডেস্ক

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৩৩  
আপডেট :
 ১১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৮:১৭

বিশ্বের ভয়ঙ্কর-সুন্দর ৫ সেতু
সেতু যখন ভয়ঙ্কর সুন্দর। ছবি: সংগ্রহ।

দূরত্ব কমানো, চলাচল সহজ আর মালামালের নিরাপদ বহন তথা জীবনযাত্রাকে সহজ করার উদ্দেশ্যেই নির্মাণ করা হয় সেতু। দুর্গম এলাকা, জলপথ, গিরিখাত বা পাহাড় থেকে জনপদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে এসব সেতু রাখে মূল ভূমিকা। সেতুর নির্মাণশৈলী আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক সময় বিবেচিত হয় পর্যটনস্থান হিসেবে। কিন্তু চলাচলের ক্ষেত্রে এই সেতুগুলো সব সময়ই যে আরামদায়ক অভিজ্ঞতা দেবে, তা কিন্তু নয়। কখনো কখনো হয়ে ওঠে ভয়ঙ্কর। বিশ্বের নয়নাভিরাম অথচ ভয়ঙ্কর এমন কয়েকটি সেতু সম্পর্কে পাঠকদের জন্য বিশেষ আয়োজন।

১. নরওয়ের রোলারকোস্টার নাকি সেতু

ব্রিজটি দেখতে সাধারণ সেতুর মতো নয়। নরওয়ের এই ব্রিজটি দেখলে আপনার মনে হবে একটি দীর্ঘ রোলারকোস্টার। মূল ভূখণ্ড রমসদাল উপদ্বীপ থেকে রাস্তার সংযোগ ঘটিয়েছে ব্রিজটি। কাউন্টির এভারোয়ায় দ্বীপে অবস্থিত তীক্ষ্ম বাঁকানো খাড়া এই রোলারকোস্টারটি। সেতুর মাঝখানে দাঁড়ালে মনে হবে দুই পাশের শেষাংশ ভয়ঙ্করভাবে জলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছে।

নরওয়ের রোলারকোস্টার সেতু। ছবি: সংগ্রহ।

২৬০ মিটার (৮৫০ ফুট) দীর্ঘ সেতুটি ছয় বছর ধরে এই অঞ্চলের বৈরী পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে এর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়। সর্বসাধারণের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয় ১৯৮৯ সালের ৭ জুলাই। এক কোটি ২২ লাখ নরওয়েজিয়ান ক্রোন ব্যয় করা হয়েছিল সেতুটি সম্পন্ন করার জন্য। এখানে হারিকেন এবং বৃষ্টিসহ বিশাল পানির তরঙ্গ প্রায়ই আঘাত হানে। তাই ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে এই নাটকীয় রূপে স্টোরেসিসুন্দেট ব্রিজটি তৈরি করা হয়।

২. আয়ারল্যান্ডের ১০০ ফুট উঁচু দড়ির সেতু

আয়ারল্যান্ডের কেরিক-এ-রেডি সেতু। ছবি: সংগ্রহ।

স্থানীয়ভাবে ব্রিজটিকে কেরিক-এ-রেডি বলা হয়। বিখ্যাত এই ব্রিজ অবস্থিত উত্তর আয়ারল্যান্ডের কাউন্টি এন্টরিমের বেলিনটোয়ের কাছে। ব্রিজটি তৈরি করা হয় দড়ি দিয়ে ১৭৭৫ সালে। ক্যার্রিক-এ-রেডের ছোট্ট দ্বীপটিকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এই সেতু। ৬৬ ফুট দৈর্ঘের এই ব্রিজের উচ্চতা ১০০ ফুট। ভূস্বৈর্গিক দৃশ্য, শিলা, সমুদ্রসৈকত এবং পানির ওপরে অবস্থিত ব্রিজ দেখার জন্য পর্যটকরা প্রচণ্ড আকর্ষণ অনুভব করেন।

পর্যটকদের যথেষ্ট সাহসিকতার পরিচয় দিতে হয় এত উঁচুতে সরু ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটতে ও শূন্যতা সামলাতে। এ কারণে এই সেতুকে ভয়ঙ্কর সেতু বলা হয়। সেতুর মাঝ বরাবর গিয়ে কেউ যদি প্রবলভাবে ভীতি অনুভব করেন, তখন তাকে নিজের সাহসিকতার জোরে আবার ফিরে আসতে হয়। বর্তমানে এটি পরিচালিত জাতীয় ট্রাস্টের মালিকানাধীন। প্রথমে এটি নিজেদের ব্যবহারের জন্য দ্বীপে বাসকারী জেলেরা তৈরি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে পর্যটক আকর্ষণ এর মূল উদ্দেশ্য।

৩. যুক্তরাষ্ট্রের সানশাইনে আসেন আত্মহত্যার জন্য

সানশাইন ব্রিজ। ছবি: সংগ্রহ।

আত্মহত্যার জন্য আলোচনায় থাকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের সানশাইন ব্রিজটি। জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয় ১৯৮৭ সালে। তারপর থেকেই থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুশ মানুষ এখান থেকে নদীতে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। ৬.৭ কিলোমিটার দীর্ঘ, ৯৪ ফুট প্রশস্ত ব্রিজটির উচ্চতা ৪৩০ ফুট। ঠিক এই কারণে নিশ্চিত মৃত্যু ঘটানোর জন্য মানুষ এটিকেই বেছে নেন। এই ব্রিজের সবচেয়ে লম্বা স্প্যানটির দৈর্ঘ্য ১২ শত ফুট। প্রতিদিন প্রায় ৬০ হাজারের মতো যানবাহন চলাচল করে।

বর্তমানে আত্মহত্যার স্থান হিসেবে কলঙ্কমাখা সেতুটির একটি অন্ধকার অতীত রয়েছে। ১৯৫৪ সাল থেকে আরেকটি সেতু ছিল এখানে। ১৯৮০ সালে তা বন্ধ হয় বড় রকমের দুর্ঘটনার কারণে। একদিন ঘণ্টায় ৭০ মাইল বেগে তেড়ে আসা ঝড়ের কবলে পড়ে বিশাল একটি বাহক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের স্প্যানে আঘাত হানে। ফলে ব্রিজ ধারণ করে রাখা স্প্যানটি নিমিষেই ধসে পড়ে। যার ফলে ব্রিজের ১২০০ ফুট রাস্তা পানির নিচে চলে যায়। এ সময় একটি বাসসহ বেশ কয়েকটি ছোট যানবাহনও পানির নিচে চলে যায়। সেই ঘটনায় কমপক্ষে ৩৫ জন মারা যায়। আরও অনেকে আহত হয়। এমন ঘটনা এখন পর্যন্ত আর ঘটেনি। কিন্তু এই সেতু থেকে নিয়মিত আত্মহত্যার ঘটনা মানুষের মাঝে ভীতির সৃষ্টি করে।

৪. রাশিয়ার ভিতিম পার হওয়া দুঃসাধ্য

রাশিয়ার ভিতিম সেতু। ছবি: সংগ্রহ।

রাশিয়ায় অবস্থিত ভিতিম রিভার ব্রিজের উচ্চতা তেমন বেশি নয়। আবার দৈর্ঘও কম। তবে কেন এটিকে বিপজ্জনক বলা হয় তার কারণ হিসেবে বলা যায়, স্বল্পদৈর্ঘ্য আর স্বল্প উচ্চতার ব্রিজটি পার হওয়াই আপনার জন্য হতে পারে দুঃসাধ্য ব্যাপার। রেলিংবিহীন পুরনো কাঠামোয় ছয় ফুট প্রস্থের সংকীর্ণ এই ব্রিজটি যে কোনো গাড়ি চলাচলের জন্যও কঠিন। ৫৭০ মিটার (১৮৭০ ফুট) দীর্ঘ ও ৫০ ফুট উঁচু এই ব্রিজটি বছরের অর্ধেক সময় থাকে বরফের জন্য পিচ্ছিল। এখানে প্রায়ই ঘটে নানা দুর্ঘটনা।

নদীর এপার থেকে ওপারে মালামাল পরিবহনের জন্য প্রথম দিকে নৌকা ব্যবহার করা হতো। কিন্তু বরফের জন্য মালামাল পরিবহনে ব্যাঘাত ঘটতো। আবার বরফ না থাকলেও নদীর পানির স্রোত থাকে প্রচণ্ড গতির। এতে নৌকাগুলো ভেঙে যেত বেশিরভাগ সময়। তাই ব্রিজের ওপর দিয়ে ছোট রেলগাড়িতে করে পণ্য আনা-নেয়ার কাজ করা হতো। এখন ব্রিজটির কিছু অংশ ক্ষয়ে গেছে। সব মিলিয়ে ভিতিম হতে পারতো রোমাঞ্চকর রাফটলিংয়ের জন্য উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু জনবিচ্ছিন্নতার জন্য তা আর হয় না।

৫. ভয় দেখাতেই কানাডার কেপিলানো

কানাডার কেপিলানো সেতু। ছবি: সংগ্রহ।

কানাডার ভ্যানকোভারে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া পার্কে অবস্থিত কেপিলানো সাসপেনশন ব্রিজটি। আপনাকে ভয় দেখাবার জন্যই ঝুলন্ত এই ব্রিজটি যেন নির্মিত হয়েছে। অনবরত কাঁপতে থাকা ব্রিজটিতে হাঁটতে হলে কিছুটা সাহস নিয়েই এগোতে হবে পর্যটকদের। সুন্দর ব্রিটিশ কলম্বিয়ার দ্রুতগতির ক্যাপিলানো নদীর ওপরে ১৮৮৯ সাল থেকে ২৩০ ফুট উচ্চতায় পাথুরে পাহাড়ের মাঝখানে সাসপেনশন ব্রিজটি চালু রয়েছে। প্রথমে এটি নির্মাণ করা হয় এটি রশি এবং সিডার ফলক ব্যবহার করে। তবে অল্পদিনের মধ্যেই ক্যাপিলানো সেতুটি দুর্ঘটনার জন্য সমালোচিত হতে থাকে।

ব্রিজটির নিচে আছে বিস্তীর্ণ গিরিখাত। প্রতিবছর এটি পুনর্গঠন করা হয় বিপদ এড়ানোর জন্য। নিরাপত্তা বাড়াতে এখানে দড়ির বদলে এখন ব্যবহার করা হয় কেবল তার। ১৯৫০ সালে পাটাতনে ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিট। সেতুটির নিরাপত্তা বাড়াতে ৪৫০ ফুট দীর্ঘ স্প্যান ব্যবহার করা হয়েছে। এত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার পরও জঙ্গলের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সেতুটি এখনো এমন ভাবে ঝাঁকুনি দেয় তাতে সাহসী ব্যক্তিটিও ভয় পেয়ে যান।

বিশ্বখ্যাত ভয়ঙ্কর সুন্দর সব সেতু। যা দেখলে চোখ জুড়ায়, তবে হৃদকম্পনও বেড়ে যায়। পাওয়া যায় মৃত্যুর হাতছানি। ছবি। সংগ্রহ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনআর/এনএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত