আব্রাহাম লিংকন হত্যা ও আসামীর জেল পালানোর প্রচেষ্টা
ইতিহাস-ঐতিহ্য ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৩০ আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৭:৩৬
সকল রহস্যপ্রেমীকদের শিহরিত করে রূপালী পর্দার অভিনেতাদের মৃত্যুকূপ ভেদ করে মুক্ত জগতে প্রবেশ করার রোমাঞ্চকর দৃশ্য। খুব কম সংখ্যক মানুষই আছে যারা দ্যা শশাংক রিডেম্পশন কিংবা প্রিজন ব্রেক দেখেছেন কিন্তু জেল পালানোর রহস্য নিয়ে রোমাঞ্চিত হননি। শুধু একটি ভুল সিদ্ধান্ত কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে গোটা জীবনের জন্য। ঠিক এমনটাই হয়েছিল তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের হত্যাকারী জন উইলকিস বুথের সহযোগী ডা. স্যামুয়েল মাডের সাথে।
সালটা ছিলো ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দ। প্রেসিডেন্ট লিংকনের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কারণে সকলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং সবাইকে পাঠানো হয় লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন ফ্লোরিডার ড্রাই টরটুগাস দ্বীপে অবস্থিত ফোর্ট জেফারসন কয়েদি খানায়।
সে সময় আমেরিকার সবচেয়ে দাগী আসামীদের জন্য ফোর্ট জেফারসন কয়েদিখানা হিসেবে ব্যবহার হতো। পরিবেশ হিসেবে মোটেও বসবাসের জন্য ভালো ছিলো না ফোর্ট জেফারসন কয়েদিখানায়। বিভিন্ন রোগ আর ব্যাধিতে ভরপুর ছিল সেখানকার পরিবেশ। সভ্য লোকালয় ছেড়ে সবার মতো ডা. মাড ও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি। তবে সব পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলে আসার ২ মাসের মাথায় ডা. মাড জেল পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। এখানে আসার পর দুই মাসে অন্তত ৩০ জন কয়েদি জেল থেকে পালিয়েছে। পালানোর রাস্তা একটাই সেটার হলো জাহাজে করে লুকিয়ে পালানো।
কয়েদিদের চলাচলে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া ছিল কারন ড্রাই টরটুগাস দ্বীপটি লোকালয় থেকে খুবই বিচ্ছিন্ন হওয়ায় জন্য। কয়েদিরা চাইলে নিজেদের ইচ্ছা মতো করে জীবনযাপন করতে পারতো। বর্তমান জেলখানাগুলোর মতো সেখানে কোন কড়াকড়ি ছিলো না।এখান থেকে যাতায়াত বলতে সপ্তাহে একদিন জাহাজ নোঙ্গর করতো প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী এবং অন্যান্য রসদ পৌঁছে দেয়ার জন্য। শুধুমাত্র সেদিন কয়েদিদের চলাচলের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হতো। জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের সুযোগ নিয়েই অনেক কয়েদি তাদের পালানোর রাস্তা করে নিতো।
পরিকল্পনা সাজানোর ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানী ছিলেন ডা. মাড। তার পরিকল্পনার কথা কেউ কোনদিন বুঝতেই পারেনি। এক সময় তিনি ড্রাই টরটুগাসে নোঙ্গর করা জাহাজ থমাস এ. স্কট এর তরুণ নাবিক হেনরি কেলির সাথে একটি সমঝোতায় যান। খুব সহজে সামান্য অর্থের বিনিময়ে কেলি ডা. মাডকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়ে যায়। কারন সেই সময় কেলির বয়স কম ছিলো কম।
হেনরি কেলির সহযোগিতায় ডা. মাড জাহাজের ভিতরে প্রবেশ করে ফেলেন এবং জাহাজের নিচের অংশে কয়লা রাখার ঘরে নিজেকে লুকিয়ে ফেলেন। কিন্তু বেচারা ডা. মাডের সেদিন সত্যিই কপাল বেশ খারাপ ছিল। তবে ফোর্ট জেফারসনে এমন কেউ ছিল না যে ডা. মাডের চেহারা চিনে না। পণ্য খালাসের সময় ফোর্ট জেফারসনের মালামাল রক্ষক জনাব জ্যাকসন ডা. মাডকে লক্ষ্য করেন জাহাজের ভিতর প্রবেশ করতে। সাথে সাথে তিনি নিরাপত্তাকর্মীদের জানিয়ে দিলেন যে, ডা. মাড জাহাজের ভিতর গিয়েছে এবং ফেরত আসেনি!
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্যমতে, ডা. মাড জাহাজের জ্বালানি ঘরে লুকিয়ে ছিলেন। একজন অফিসার সেখানে থাকা কয়লার বাক্সগুলোতে তার তলোয়ার চালিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। এরই একটিতে লুকিয়ে ছিলেন ডা. মাড। অফিসারের তলোয়ারের খোঁচা খেয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠেন তিনি এবং সাথে সাথেই ধরা পড়ে যান। জেল পালানোর চেষ্টার শাস্তি হিসেবে তাকে স্বশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং সকল গার্ডের নজরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইট ভাঙ্গার মতো কঠোর পরিশ্রম করতে হতো ডা. মাডকে।
১৮৬৯ সালে মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বাকি সময়টা এভাবেই কাটান তিনি। তবে পালিয়ে যাওয়া চিলো তার ব্যর্থ কৌশল মাত্র। অবশেষে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৮৮৩ সালের ১০ই জানুয়ারি মাত্র ৪৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ডা. মাড।
বাংলাদেশ জার্নাল/এনআর/এইচকে