ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

চেরি ফুলের দেশে

  -শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২১, ০৫:২৭

চেরি ফুলের দেশে

১৭. আবার টোকিও

ইকোহামা, হিরোশিমা, ওকাইয়ামা ও কিওটো জাপানের ঐতিহ্যবাহী চার শহরে ১০ দিন অবস্থান করে ৪ অক্টোবর আমরা ফিরে আসি আবার টোকিও। এ ১০ দিনের স্মৃতি অত্যন্ত মধুর। অনেক কিছু দেখেছি, শিখেছি। জাপানের গ্রাম দেখারও সুযোগ হয়েছে। গ্রাম মানে যত্রতত্র বাড়ি নয়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবাস নয়। একত্রে বেশ কিছু বাড়ি। গ্রামের অধিকাংমই কাঠের তৈরি জাপানি শ্বাশত নকশার বাড়ি। সাথেই স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকান এবং বিনোদনের বিভিন্ন ধরনের কেন্দ্র। যে কৃষক মাঠে ফসল ফলায়, নদীতে মাছ ধরে সবারই জন্য একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা। সমবায় ভিত্তিতে চাষ হয়। আবার কেউ কেউ একাও চাষ করে। আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। যন্ত্রের মাধ্যমে চাষ। কৃষক, শ্রমিক আর উচ্চশিক্ষিত বড় চাকরিজীবী নাগরিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সবাই সমান। পরিকল্পিতভাবে গ্রাম গড়ে উঠেছে। বিদ্যুৎ-পানিসহ সকল সুযোগ-সুবিধা সর্বত্র। শহরে যে চাকরিজীবী বাস করে, আর গ্রামে যে কৃষক বাস করে তাদের সবাই আধুনিক সভ্যতার সকল সুযোগ পান। লেখাপড়া ক্ষেত্রেও কৃষকের ছেলে যে সুযোগ শহরের চাকরিজীবীর ছেলেরা একই সুযোগ পেয়ে থাকেন। গ্রাম ও শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য নেই।

বুলেট ট্রেনে আড়াই ঘণ্টা ভ্রমণ করে কিওটো থেকে টোকিওতে এসে পৌঁছাই দুপুর সাড়ে ১২টায়। আবার টোকিও এর বিখ্যাত গিনজার মিতসুই আরবান হোটেলে। আগে যে রুমে ছিলাম এবারও সে একই রুমে। আর ৬ দিন থাকব টোকিও। ১০ অক্টোবর দেশের উদ্দেশে রওনা। ১০ দিন বাইরে থেকে সবাই কমবেশি ক্লান্ত ছিলাম। তাই ৪ অক্টোবর কিওটো থেকে ফিরে বিশ্রাম নেয়া ছাড়া কোনো কর্মসূচি ছিল না। শুধু দু’বেলা খাবারের জন্য বাইরে যাওয়া। আবার হামবার্গারের দোকান কর্মচারীরা আমাদের দেখে বেশ খুশি হলো। একজন এসে বলল, ‘আমরা মনে করেছিলাম তোমরা দেশে ফিরে গেছ।’ তাদের সাথে ইকোহামা আর কিওটোর কথা হয়। জাপানের নাগরিক হয়েও তারা অনেকেই কিওটো দেখেনি; যায়নি ওকাইয়ামা। তবে হিরোশিমা গিয়েছে সবাই। বিকেলে দল বেঁধে আমরা টোকিও এর বিভিন্ন এলাকা পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াই ১০ জন একত্রে বসে নিজ নিজ দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে বিছানায় যাই গভীর রাতে। আগে যেমন ধরাবাঁধা কর্মসূচি ছিল এখন তেমন নেই। যার যার ব্যক্তিগত ইচ্ছায় কর্মসূচি তৈরি করা হয়েছে। তাই টোকিও এর বাকি ৫ দিনে ১০ জন আমরা একত্রে হয়েছি বিদায়ের আগের দিন। এর মধ্যে কখনো গাইড, কখনো এফপিসি’র কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে এককভাবে অথবা অন্য দু’একজন মিলে ইচ্ছামতো মানুষজনের সাথে মিশেছি, কথা বলেছি। রাজনীতির প্রতি আমার আগ্রহ বেশি। তাই আমি আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম সে দেশের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে। আর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাহায্যদাতা দেশ জাপানের সাহায্যদাতা সংস্থার কর্মকর্তা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে মিলিত হওয়ার ব্যক্তিগত ইচ্ছা ব্যক্ত করে রেখেছিলাম। টোকিও ফিরে দেখি সবার সাথেই আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

৫ অক্টোবর বিকাল ৪টায় আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছায় প্রথম সাক্ষাৎকারের কর্মসূচি জাইকা অফিসে। জাইকা মানে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি। হোটেল থেকে আড়াইটার সময় বের হয়ে এফপিসি’তে আসি। দুপুর ৩টায় একজন দোভাষী এলেন। টোকিওর একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির ছাত্রী দোভাষীর সাথে পরিচয় পর্ব সমাপ্তের পরই রওনা দেই জাইকা অফিসের উদ্দেশে। টোকিওতে সেদিন সকাল থেকেই বৃষ্টি ছিল। আমার ছাতা ছিল না তাই বেশ কিছুটা পথ ভিজে সাবওয়েতে তিনটা ট্রেন বদলিয়ে সিনঝুকি স্টেশনে গিয়ে পৌঁছি। জাপান তথা বিশ্বের সর্ববৃহৎ রেলস্টেশন সিনঝুকি। মিনিট নয় এরও কম সময়ে বিভিন্ন লাইনে এ স্টেশনে একটা করে ট্রেন আসা-যাওয়া করে। সিনঝুকি স্টেশনে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। আমাদের গ্রামের বাজারের মতো অবস্থা কোথাও কোথাও জনসভার মতো অবস্থা মনে হয়। ট্রেন ধরার জন্য কেউ দ্রুত হাঁটছে বা কেউ দৌঁড়াচ্ছে। কে কত তাড়াতাড়ি যেতে পারে প্রতিযোগিতা সর্বত্র। তবুও স্টেশনে শৃংখলার কোনও অভাব নেই।

ট্রেন থেকে নেমে বেশকিছু পথ পায়ে হেঁটে বের হবার রাস্তায় এসে আমার চোখ পড়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকা বিধ্বস্ত কিছু লোকের দিকে। সংখ্যায় ৫০ জনের কম হবে না। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। কারও সামনে ছোটখাটো পাত্র বা প্লেট। আবার কেউ শুয়ে আছেন। কারও বুকে পিঠে জাপানি ভাষায় পোস্টার সাঁটা। পাগলের মতো প্রলাপ বকছে। কেউ কেউ উচ্চৈঃস্বরে আওয়াজ দিয়ে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। আমি দোভাষীর কাছে জানতে চাই এরা কারা? দোভাষী জবাব দিলেন এরা গৃহহীন, এদের চাকরি নেই। তাই স্টেশনে যাত্রীদের কাছ থেকে সাহায্য চাইছে। আমি বুঝলাম এরা ভিক্ষুক। ভিক্ষুক দেখে অবাক হলাম। বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত ধনী দেশে ভিক্ষুক এ আবার কেমন কথা! দোভাষীকে জিজ্ঞেস করি তারা কেন ভিক্ষা করে? তিনি জানান, উন্নয়নের সাথে সাথে গৃহহীন, চাকরিহীনের সংখ্যাও বাড়ছে। কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। যাতে কিছু লোক গরিব হয়ে যাচ্ছে। সরকারি একজন কর্মকর্তা জানালেন অর্থনৈতিক মন্দার খবর সত্য। কিন্তু স্টেশনে বসে যারা সাহায্য চায় তাদের অনেকেই কাজ করতে চায় না। কাজের চাইতে মানুষের কাছে হাত পাততে তারা পছন্দ করে বেশি।

স্টেশন থেকে বাইরে এসেও দেখি বৃষ্টি। আবার ভিজতে হল। দোভাষীর কাছে যে ছাতা আছে তা দু’জনের মাথায় তুললে দু’জনকেই ভিজতে হয়। তাই আমি ছাতা ছাড়াই হাঁটতে থাকি। স্টেশনের কাছেই জাইকা অফিস। ৫০ তলা ভবনের ৪৭ তলায় জাইকা অফিস। পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তা সিনঝু টুটসুকুর সাথে আমার সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা। ৪টার ৫ মিনিট আগেই জাইকা অফিসের নির্দিষ্ট বিভাগে গিয়ে পৌঁছি। কর্মকর্তা টুটসুকুর সাথে পরিচয় পর্বের পর আনুষ্ঠানিক আলোচনা। ইংরেজি কম বলতে পারেন টুটসুকু। তাই দোভাষীর মাধ্যমে আলোচনা। জাইকা কর্মকর্তা বাংলাদেশে তাদের প্রকল্প বাছাই, প্রকল্প সাহায্য প্রক্রিয়া এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। জাপানি সরকারি অর্থ জাইকা সাধারণত বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ও সামাজিক ক্ষেত্রে ঋণ ও সাহায্য দিয়ে থাকে। বিশ্বের ১৪০টি দেশকে জাইকা সাহায্য ও ঋণ দিয়ে আসছে। বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, মেঘনা সেতু নির্মাণ ও ঘূর্ণি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণে তাদের সাহায্যে কাজ হচ্ছে বলে কর্মকর্তাটি জানান। তিনি জানান, বাংলাদেশ মাঝে মাঝে এমন সব প্রকল্পের জন্য সাহায্য ও ঋণ চায় অনেক সময় জাপান সরকার সেসব বিষয়ে সাহায্যের যৌক্তিকতা খুঁজে পায় না। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট দেশগুলো প্রকল্প তৈরি করে ঋণ বা সাহায্য চাওয়ার পর জাপানি বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা মঞ্জুর করে থাকেন। তিনি বলেন, পরস্পরকে বুঝতে সমস্যার কারণেই মাঝে মাঝে ভুল বোঝাবুঝি বা প্রকল্প গ্রহণে দেরি হয়। জাপানে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, বিদেশিদের নিয়োগের ব্যাপারে জাপানে কোনো নির্দিষ্ট এরিয়া নেই। যার যার ইচ্ছামতো নিয়োগ করতে পারে। তিনি জাপানে বসবাসরত বাঙালিদের সম্পর্কে বলেন, এখানে তারা বেশ ভালো আছে। কেউ কেউ হোটেল, রেস্টুরেন্টও দিয়েছে। আবার ব্যবসাও করছে।

বিদায় নেয়ার সময় জাইকা কর্মকর্তা বলেন, আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নে সাহায্য অব্যাহত রাখব। তবে আমাদের একটাই প্রত্যাশা সাহায্য যেন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়। টোকিও এর শেষ দিনগুলোতে আমাদের তেমন কর্মসূচি ছিল না। তাই বেশিরভাগ সময় ঘুরে বেরিয়েছি। আর খাবারের সমস্যা থাকায় সময় সুযোগমতো বাঙালি স্টাইলের হোটেল খুঁজেছি। ৬ অক্টোবর এমনি একদিন ছিল। শ্রীলঙ্কার শান আর আমি যতটুকু পারা যায় হেঁটেছি। প্রায় দু’ঘণ্টা হাঁটার পর হোটেলে ফিরে আসার পথে একটা সাইনবোর্ড দেখে শান থেমে যায়। উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকে পেয়েছি। আমি জানতে চাই কি পেয়েছো? শান হাত দিয়ে সাইনবোর্ডটি দেখিয়ে বলল, আমরা আজ এখানেই লাঞ্চ করব। শ্রীলঙ্কার খাবারের ব্যাপারে আমার কোন ধারণা ছিল না। তবুও তার উৎসাহে যাতে ভাটা না পড়ে সেজন্য সাথে গেলাম। আন্ডারগ্রাউন্ডে ছোট একটা রুমে দিয়ে ভিতরে গেল রেস্টুরেন্ট আর রয়েছে বার। শান যুবকের সাথে পরিচিত হল। দুজন বেশ কিছুক্ষণ সিংহলি ভাষায় কথা বলে। পরে শ্রীলঙ্কার যুবক খাবার নিয়ে এল মোরগ পোলাও। আমি দেখে আশ্চর্য হলাম। বিরিয়ানির প্রতি আমার সব সময়ই এক ধরনের আকর্ষণ আছে। আমরা দু’জনেই পেট ভরে খেলাম। রান্নাও আমাদের দেশের মতো। এরপর জাপানে যে তিনদিন থেকেছি এক বেলা শ্রীলঙ্কার রেস্টুরেন্টে হয় খিচুড়ি-মাংস না হয় বিরিয়ানি খেয়েছি।

বিকেলে কোজিমা সানের সাথে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী জাপানের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের অফিস এলডিপি অফিসে যাই। তখন জাপানে এলডিপি ক্ষমতাসীন। দশতলা বিরাট অফিস। আমরা যখন যাই তখন দেখি চারিদিকে পুলিশ ঘেরা। এলডিপি’র বিরুদ্ধে তখন আন্দোলন চলছিল। এমনকি নিজ দলের তরুণরাও নানা কারণে দলের হাইকম্যান্ডের ওপর ক্ষুব্ধ। দলের মধ্যে অন্তর্কলহ ছিল চরম। তাই অফিসের চারদিকে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা। দলের অফিসে প্রত্যেক কর্মকর্তার জন্য আলাদা আলাদা রুম এবং প্রতি সম্পাদকের জন্য কনফারেন্স রুম আছে। এছাড়াও অনেক কমিটি রুম আছে। আমাদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল এলডিপি’র সহ-সভাপতির সাথে। তিনি একই সঙ্গে দলের নীতি সংস্কার কমিটির সদস্য এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দলের তরুণ সদস্য এবং জাপানবাসী রাজনীতির যুগোপযোগী সংস্কার চেয়েছিল। এলডিপিও সংস্কার কমিশন গঠন করেছিল। কিন্তু সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়। যে কারণে ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে এলডিপি’ টানা ৩৮ বছর দেশ শাসনের পর নির্বাচনে হেরে যায়। মি. ইশি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানেন। জাপান এয়ার লাইন্সের বিমান ছিনতাই করে ঢাকা অবতরণের সময় তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। বাংলাদেশ সম্পর্কে বেশ খোঁজ-খবর রাখেন।

জাপানের রাজনীতি এবং সংস্কার নিয়ে এলডিপি নেতা ইশি’র সাথে ৫০ মিনিট কথা হয়। তিনি খুবই ব্যস্ত ছিলেন। তবুও সময় দিয়েছেন। তিনি জানান, জাপানে রাজনীতি খুবই ব্যয়বহুল। অর্থ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। কর্মীদের অর্থ দিতে হয় আর নির্বাচনের সময় অর্থ হচ্ছে মূল উপাদান। যে বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারে তার অবস্থান ভাল থাকে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ জন্য চাঁদা সংগ্রহ করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। আর এ কারণে সমস্যাও হয়। বহু আসন ব্যবস্থায় অর্থ ব্যয়ের প্রতিযোগিতা চলে। এ অবস্থার অবসানে তার দল রাজনৈতিক সংস্কার চায় বলে তিনি জানান। কোবে এলাকা থেকে ২০ বছর ধরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে আসছেন মি. ইশি। জাপানের রাজনীতিতে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি আমাদের জানিয়েছিলেন, রাজনৈতিক সংস্কার আনতে না পারলে এলডিপি’র জন্য ভবিষ্যতে বিপর্যয় হতে পারে। তার কথাই ঠিক হয়েছে। এলডিপি সংস্কার আনতে পারেনি। তাই তাদের ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। ইশির সঙ্গে কথা বলে যখন ফিরে আসি তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। রাতে ঘযশ-এর বদরুল হোটেল রুমে আসে। আগেই তার সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল। জাপান রেডিও-এর পক্ষ থেকে আমার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবে। টোকিও এর বাইরে যাওয়ার আগেই তারিখ ঠিক হয়। বাংলাদেশের ছেলে বদরুলের সাথে জাপান রেডিও-র কধীঁযরৎড় ডধঃধহধনষব আসেন। বদরুল এনএইচকে বাংলা বিভাগের ভাষাবিশারদ হিসেবে কাজ করছেন। আর ডধঃধহধনষব বাংলা বিভাগের প্রধান। সুন্দর বাংলা বলতে পারেন ভদ্রলোক। জাপানকে আমি কীভাবে দেখেছি, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সে দেশের মানুষ সম্পর্কে আমার ধারণা কি মূলত এ বিষয়ে ১০ মিনিটের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে বদরুল। সাক্ষাৎকার নিয়ে যাওয়ার সময় ডধঃধহধনষব আমার হাতে একটা প্যাকেট তুলে দিয়ে বললেন, এটা আপনার জন্য জাপান রেডিও-এর উপহার। তারা বিদায় দেয়ার পর প্যাকেট খুলে দেখি একটা ক্যামেরা। এনএইচকে-এর মনোগ্রামখচিত ক্যামেরাটি বেশ দামি। পরদিন ৭ অক্টোবর জাপান সোস্যালিস্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসডিপি) নেতার সাথে সাক্ষাৎকারে মিলিত হই। সংসদের উচ্চকক্ষের একজন সদস্য। জাপানের একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা। জাপান-বাংলাদেশ সমিতির তিনি প্রধান। বাংলাদেশের শিক্ষার উন্নয়নে তিনি জাপানে একটি তহবিল গঠন করেছেন। বছর বছর বাংলাদেশ সফরে আসেন তানেদা। তার সাথে সাক্ষাতের স্থান ছিল উচ্চকক্ষের সদস্যদের অফিস ভবনে। জাপানে সকল সংসদ সদস্যের জন্য অফিস আছে।

পার্লামেন্ট ভবনের সাথেই এ অফিস। প্রত্যেক সদস্যকে সরকারিভাবে একজন সেক্রেটারি দেয়া হয়। সদস্যদের প্রয়োজনীয় আরও বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা আছে। অত্যন্ত চটপটে স্বভাবের লোক তানেদা। কথায় বুঝলাম বাংলাদেশের প্রতি তার বেশ দরদ। বাংলাদেশ সম্পর্কে তার বিভিন্ন প্রকাশনা আমাকে দেখালেন। তানেদার সাথে আমি জাপানের রাজনীতি নিয়ে কথা শুরু করি। তিনি বলেন, জাপানের ইতিহাসে ক্রান্তিকাল চলছে। পুরনো ধাচের রাজনীতি, নেতৃত্ব ও অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে আর এগুনো যাবে না। তাই সব কিছুতেই সংস্কার দরকার। তিনি বারবার এলডিপি’র শাসনের বিভিন্ন দুর্বল দিক তুলে ধরেন। তানেদা তখন বলেছিলেন এলডিপি’র বিদায়ের ঘণ্টা বেজে গেছে। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। তার সাথে সাক্ষাতের ৯ মাস পরই এলডিপি শাসনের আপাত অবসান হয়। কিন্তু চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী তানেদার দল এসডিপি এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারেনি। বরং এসডিপি আগের চাইতে খারাপ করেছে। এলডিপি থেকে বের হয়ে আসা জাপান নিউ পার্টি, এসডিপি এবং অন্যদের সমন্বয়ে তখন কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়। এককালীন এলডিপি’র নেতা হোসাকাওয়া প্রধানমন্ত্রী ও মি. হাতা উপ-প্রধানমন্ত্রী হন। চলবে...

আগের পর্ব (১৬) পড়ুন

বাংলাদেশ জার্নাল/আর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত