ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

আহসান মঞ্জিল জাদুঘর হয়ে ওঠার গল্প

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২১, ১৫:৫৯  
আপডেট :
 ০৩ জুন ২০২১, ১৬:০৬

আহসান মঞ্জিল জাদুঘর হয়ে ওঠার গল্প

ঢাকার পুরনো স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য আহসান মঞ্জিল। নবাব পরিবারের বহুল স্মৃতি বিজড়িত এই প্রাসাদটি এখন জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আহসান মঞ্জিলের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ঢাকার শত বছরের পুরনো ইতিহাস। বর্তমানে এটি পরিচালিত হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক।

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আহসান মঞ্জিলের এই জায়গায় একটি রংমহল ছিল। যেটি নির্মাণ করেছিলেন তখনকার জমিদার শেখ এনায়েতউল্লাহ। তার ছেলে মহলটি ফরাসি বণিকের কাছে বিক্রি করে দেন এবং খাজা আলিমুল্লাহ ফরাসিদের কাছ থেকে আবার কিনে নেন। তার ছেলে নওয়াব আবদুল গণি ১৮৫৯ সালে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। সেই কাজ শেষ হয় ১৮৭২ সালে। ১৮৯৭ সালের এক টর্নেডোয় ভবনটির অনেক ক্ষতি হয়, পরে নবাব আহসানুল্লাহ তা আবার সংস্কার করেন।

জমিদারি উচ্ছেদ আইনে ১৯৫২ সালে ঢাকার নবাব এস্টেট তৎকালীন সরকার অধিগ্রহণ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর নবাব পরিবারের অধিকাংশ ব্যক্তিরা বিদেশে পাড়ি জমান। এ দেশে যারা ছিলেন তারা বিরাট এ প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণে অক্ষম ছিলেন। যার ফলে এটি ক্রমাগত ধ্বংসের দিকে যেতে থাকে।

১৯৭৪ সালে নবাব পরিবারের উত্তরসূরিরা ভবনটি নিলামে বিক্রি করে দেয়ার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু দূরদৃষ্টি সম্পন্ন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভবনটির গুরুত্ব অনুধাবন করেন। তিনি ১৯৭৪ সালের ২ নভেম্বর প্রাসাদটি নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেন। এরপর এটি সংস্কার করে জাদুঘর ও পর্যটনকেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন।

আহসান মঞ্জিল প্রাসাদ ও তৎসংলগ্ন চত্বর সরকার অধিগ্রহণ করে সেখানে জাদুঘর স্থাপনের কাজ শুরু করেন ১৯৮৫ সালের ৩ নভেম্বর। ১৯৯২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

মঞ্জিলটি দুটি অংশে বিভক্ত, পূর্বপাশের গম্বুজযুক্ত অংশকে বলা হয় প্রাসাদ ভবন অথবা রংমহল। পশ্চিমাংশের আবাসিক প্রকোষ্ঠাদি নিয়ে গঠিত ভবনকে বলা হয় অন্দরমহল। প্রাসাদ ভবনটি আবার দুটি অংশে বিভক্ত। মাঝখানে গোলাকার কক্ষের ওপর অষ্ট-কোণ বিশিষ্ট উঁচু গম্বুজটি অবস্থিত। পূর্বাংশে দোতলায় বৈঠকখানা, গ্রন্থাগার, গার্ড-রুম ও তিনটি মেহমান কক্ষ এবং পশ্চিমাংশে রয়েছে একটি নাচঘর, হিন্দুস্তানি কক্ষ এবং কয়েকটি আবাসিক কক্ষ রয়েছে।

আহসান মঞ্জিলের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে- দোতলা থেকে সরাসরি প্রাসাদের আঙিনায় নামার প্রশস্ত সিঁড়ি। নিচতলার পূর্বাংশে রয়েছে ডাইনিং হল, পশ্চিমাংশে রয়েছে বিলিয়ার্ড কক্ষ, দরবার হল ও কোষাগার। প্রাসাদ ভবনটির উভয় তলার উত্তর ও দক্ষিণে রয়েছে সুপ্রশস্ত বারান্দা।

আহসান মঞ্জিলের ৩১টি ঘরের মধ্যে ২৩টি ঘর বিভিন্ন প্রদর্শনীর জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। নয়টি ঘর লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে পাওয়া এবং ফ্রিৎজ কাপের দ্বারা ১৯০৪ সালে তোলা ছবির সাথে মিলিয়ে সাজানো হয়েছে।

মঞ্জিলের তোষাখানা ও ক্রোকারিজ কক্ষে থাকা তৈজসপত্র এবং নওয়াব এস্টেটের পুরনো অফিস এডওয়ার্ড হাউস থেকে পাওয়া বিভিন্ন নিদর্শন সংরক্ষণ করে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য রয়েছে, নওয়াব আমলের ডাইনিং রুম, নওয়াবদের ব্যবহৃত বড় বড় আয়না, আলমারি, সিন্দুক, কাচ ও চিনামাটির থালা-বাসন, আরো আছে নওয়াবদের অতি বিশ্বস্ত হাতির মাথার কঙ্কাল দাঁতসহ, নওয়াব আমলের বিভিন্ন ধরনের অলংকৃত রুপা ও ক্রিস্টালের তৈরি চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন ধরনের তৈলচিত্র, ফুলদানি, আতরদানি, পানদান, নবাবদের ড্রয়িং রুম, নাচঘর ইত্যাদি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফএম/কেআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত