ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৯ মে ২০২২, ১৪:২২  
আপডেট :
 ০৯ মে ২০২২, ১৪:৪১

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
ছবি: সংগৃহীত

মন খারাপ, বিরক্ত লাগা বা ক্লান্ত হয়ে যাওয়া আমাদের জীবনেরই অংশ। মাঝে মাঝে আমাদের জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে যা আমাদের মনকে খুব গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায়। তখন চারপাশের কোনো আনন্দ আমাদের ছুঁতে পারে না। দিনের পর দিন আমরা ডুবে রই গভীর হতাশায়। আর সে সময়ই ডিপ্রেশন ভর করে আমাদের ওপর। তবে ডিপ্রেশন এবং সাধারণ মন খারাপের মধ্যে তফাত রয়েছে।

তাই ডিপ্রেশনকে ডিল করতে হলে আগে বুঝতে হবে ডিপ্রেশন-এর লক্ষণগুলো কি কি।

ডিপ্রেশন-এর লক্ষণগুলো

  • প্রতিদিনের কাজগুলো ঠিকভাবে করে উঠতে না পারা।
  • যেকোনো কাজেই অনেক বেশি ক্লান্ত বোধ করা। এই ক্লান্তি শুধুমাত্র শারিরিক ক্লান্তি নয়, মানসিক ক্লান্তিও।
  • পছন্দের কাজ যেমন বই পড়া, ছবি আঁকা, মুভি দেখা ইত্যাদিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
  • সর্বদা দমবন্ধকর অনুভূতি অনুভব হওয়া, কাঁদতে ইচ্ছা করা, সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা বা খুবই নিরাশ বোধ করা।
  • অস্বাভাবিকভাবে ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া।
  • সবকিছু এলোমেলো লাগা, পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে না পারা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা।
  • খুব বেশি ঘুমানো বা একেবারেই ঘুম না হওয়া।
  • নিজেকে একেবারে অক্ষম মনে করা, নিজের প্রতি অপরাধবোধ হওয়া।
  • সর্বদা মেজাজ খিটখিটে থাকা।
  • সর্বোপরি, নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করা।

এই লক্ষণগুলো যদি আপনার আচরণের মধ্যে খুঁজে পান, তাহলে বুঝবেন এবার আপনাকে একটু সিরিয়াসলি ভাবতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। আর যদি না হয় তখন দেরি না করে বা এই বিষয়টিকে অবহেলা না করে একজন অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া উচিৎ।

ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠার উপায়

আপনজনের সংস্পর্শে থাকা: জোর করে হলেও নিজেকে সোশ্যালাইজেশন-এর ভেতরে রাখুন। এর মানে ফেসবুক বা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক-এ পড়ে থাকা নয়। নিজের পরিবারে সাথে সময় কাটান, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাড়ি যান বা তাদের বাড়িতে ডাকুন। নিজেকে একা করে ফেলবেন না।

এক্সারসাইজ: ডিপ্রেশন কাটাতে এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা দারুণভাবে মুড লিফট করে। শরীরের ঘাম ঝরার পাশাপাশি মনের কষ্ট ঝরাতেও সাহায্য করে। এর জন্যে জিম-এ যেতে হবে বা ওয়েট লিফটিং করতে হবে তা কিন্ত নয়। সকালবেলা উঠেই ৩০ মিনিট হেঁটে আসুন। চাইলে বিকেলেও এটি করতে পারেন। তবে সকালটাই এর জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বাইরের বিশুদ্ধ বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে নিতে হাঁটলে মনের ভার অনেকটাই কমে যাবে।

রুটিন: ডিপ্রেশন-এ পড়লে কাজের রুটিন ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এটা একদিনে ঠিক হবার নয়। যেভাবেই হোক প্রতিদিন ঠিক একই সময়ে ঘুমুতে যাবেন এবং চেষ্টা করবেন একই সময়ে উঠতে। রোজ খাবার এবং গোসলের জন্য নির্ধারিত সময় রাখবেন এবং চেষ্টা করবেন যেনো সেই সময়েই তা করা যায়। পড়াশোনা থাকলে সেটার জন্য ঘড়ি ধরে সময় রাখবেন, সেই সময়ে হয়তো আপনার মনোযোগ থাকবে না, না থাকলেও পড়ার টেবিল থেকে উঠবেন না। যতবার অন্য কিছু মনে পরবে, ততবার নিজেকে বুঝিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করবেন।

লক্ষ্য নির্ধারণ করা: এই সময় নিজেকে খুব অক্ষম মনে হয়, নিজের ওপর বিশ্বাস বা ভরসা কিছুই থাকে না। তাই প্রতিদিনের একটা কাজের তালিকা বানিয়ে সেটা সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করুন। শুরুতেই বড় কোনো কাজের বোঝা নিয়ে নিজেকে আরও চাপের মধ্যে ফেলবেন না। অল্প অল্প করে শুরু করুন। তারপর একটু একটু করে সেটা বাড়ান। একেবারেই কোনো কাজ না হবার চেয়ে অল্প করে কাজ হলেও তো ভালো।

খাবার নিয়ন্ত্রণ: এই সময়ে কেউ হয়তো অনেক বেশি খান। যেমন চা, সিগারেট, মিষ্টি বা জাঙ্ক ফুড। কেউ আবার অ্যালকোহল পর্যন্ত ধরেন। এইগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। অতিরিক্ত চা বা কফি ডিপ্রেশন বাড়ায়। যাই খান নিয়ম করে খাবেন। বিকেলে চায়ের জন্য একটা সময় নির্ধারিত রাখবেন। সে সময়ে আয়োজন করে চা খান। দেখবেন ভালো লাগবে। খুব জাঙ্ক ফুড খেতে ইচ্ছে করলে নিজেকে কোনো একটা কাজের দায়িত্ব দিয়ে সেই কাজ পূরণ হলে তবেই সেই খাবারটি খান। অন্যদিকে কেউ আবার একেবারেই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেন। তাদের বলবো, আপনারা রান্নাকে শখ হিসেবে নিন। নিজে রাঁধলে খেতেও ইচ্ছে করবে। একইসাথে মনও ভালো থাকবে।

নতুন কিছু করা: জীবনে যে কাজগুলো নানান ব্যস্ততায় করা হয়ে ওঠেনি সেগুলো করার চেষ্টা করুন। আমি যেমন আমার খারাপ সময়ে বেশ কিছু ওয়াল হ্যাংইন সেলাই করেছিলাম। এগুলো আপনাকে ব্যস্ত রাখবে এবং আপনার মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করবে। এখন ইউটিউব-এ শেখা যায় না এমন কিছু নেই। আমিতো ছবি আঁকা শেখা শুরু করেছিলাম, যেই কাজটি করতে ভালো লাগে সেটিই করুন।

অনেকে হয়তো এই পর্যায়ে বলবেন, এগুলো করতে পারলে তো আর ডিপ্রেশন-এ ভুগতাম না। কথা সত্যি। ভীষণ ডিপ্রেশন-এ পড়লে সাধারণ কাজও কঠিন লাগে। শুরুটা করুন। এখানে ইচ্ছা শক্তিটাই আসল। আপনি কি হারিয়ে যেতে চান নাকি নিজেকে খুঁজে পেতে চান? সেটা ঠিক করুন। অন্যকে সময় দেয়ার আগে নিজেকে সময় দিন। অন্যকে ভালবাসার আগে নিজেকে ভালবাসুন। সময় নিন, তবু নিজেকে ফিরে পাওয়ার আগ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

বাংলাদেশ জার্নাল/স্বর্ণ/রাজু

  • সর্বশেষ
  • পঠিত