ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

নীল জলরাশির খেলা সেন্টমার্টিন দ্বীপ

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২২, ১১:১৮

নীল জলরাশির খেলা সেন্টমার্টিন দ্বীপ
ছবি: সংগৃহীত

সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবালদ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।

কবে প্রথম এই দ্বীপটিকে মানুষ শনাক্ত করেছিল তা জানা যায় না। প্রথম কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিল জিঞ্জিরা। উল্লেখ্য এরা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো।

কালক্রমে চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষ এইদ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতো। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপের বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরাছিল মূলত মৎস্যজীবি।

যতটুকু জানা যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবার। এরা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ। আগে থেকেই এই দ্বীপে কেয়া এবং ঝাউগাছ ছিল। সম্ভবত বাঙালি জেলেরা জলকষ্ঠ এবং ক্লান্তি দূরীকরণের অবলম্বন হিসাবে প্রচুর পরিমাণ নারকেল গাছ এই দ্বীপে রোপণ করেছিল।

কালক্রমে পুরো দ্বীপটি একসময় 'নারকেল গাছপ্রধান' দ্বীপে পরিণত হয়। এই সূত্রে স্থানীয় অধিবাসীরা এই দ্বীপের উত্তরাংশকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে অভিহিত করা শুরু করে।

১৯০০ খ্রিষ্টাব্দেরদিকে ব্রিটিশ ভূ-জরীপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসাবে গ্রহণ করে। জরীপে এরা স্থানীয় নামের পরিবর্তে খ্রিষ্টান সাধু মার্টিনেরনামানুসারে সেন্টমার্টিন নাম প্রদান করে। এরপর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের বাইরের মানুষের কাছে, দ্বীপটি সেন্ট মার্টিন নামেই পরিচিত লাভ করে।

দ্বীপটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড হতে আসা যাওয়া করে। সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে। একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল।

পরিষ্কার স্বচ্ছ পানি। কোথাও নীলাভ রং, কোথাও বা হালকা সবুজ আভা। যত দূর চোখ যায়, পানির নিচের সবকিছুই স্পষ্ট। এ এক অপূর্ব দৃশ্য। কখনো বা বিভিন্ন রঙের ডোরাকাটা রঙিন মাছ দেখা যাচ্ছে, কখনো বা সবুজ কোরাল, ব্রেইল কোরাল উঁকি দিচ্ছে।

ভাগ্য ভালো থাকলে বাংলা চ্যানেলের আশপাশে ডলফিন কিংবা জেলি ফিশের দেখাও মিলে যেতে পারে। নভেম্বর থেকে মার্চ, এই সেন্টমার্টিনেই কচ্ছপের ডিম পাড়া দেখা যায়। স্কুবা ডাইভিং ও স্নোরকেলিং দুটোই করা যাবে। পানির গভীরে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে পুরোদস্তুর তৈরি হয়ে তবেই স্কুবা ডাইভিং করা যাবে। এ জন্য সাঁতার জানতেই হবে। অন্য দিকে স্নোরকেলিংয়ের জন্য অতটা প্রস্তুতির দরকার নেই। লাইফ জ্যাকেট এবং চোখ ও নাক ঢাকার মাস্ক হলেই চলবে। পানির খুব একটা গভীরেও যেতে হবে না। হেঁটেই পানির নিচে সব কিছু দেখতে পারবেন। সাঁতার না জানলেও চলে। তবে স্নোরকেলিংয়ের জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হলো ছেঁড়াদ্বীপ। এর জন্য সেন্ট মার্টিন থেকে ট্রলারে করে যেতে হবে ছেঁড়াদ্বীপে।

কীভাবে যাবেন:

বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য প্রথমে যেতে হবে কক্সবাজার। ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফে যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়েদাবাদ থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। ১০-১২ ঘণ্টার এই ভ্রমণে ভাড়া বাস অনুযায়ী সাধারণত ৯০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। অথবা ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার এসে তারপর কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়া যাবে। এছাড়াও ঢাকা থেকে প্লেনে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।

কক্সবাজার থেকে লোকাল বাস, সিএনজি বা মাইক্রোবাস/জিপ ভাড়া করে টেকনাফ যাওয়া যাবে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সময় লাগে অবস্থা ভেদে প্রায় ১-২ ঘণ্টা। ভাড়া যানবাহন ভেদে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

পর্যটন মৌসুমে (অক্টোবর থেকে মার্চ মাস) টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাত্রী পারাপারে ৬-৭টি জাহাজ চালু থাকে। এগুলোর মধ্যে কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন, আটলান্টিক, বে ক্রুজ, কর্ণফুলী, গ্রিন লাইন উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও এই সমুদ্র রুটে বেশ কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে।

জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। জাহাজের শ্রেণিভেদে যাওয়া-আসার ভাড়া ৫৫০ থেকে ১ হাজার টাকার মতো। সেন্টমার্টিনের জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজগুলো সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সেন্টমার্টিন থেকে ফেরত আসে বিকেল ৩টার দিকে।

কোথায় খাবেন:

পর্যটকদের খাবারের জন্য রয়েছে এখানে বেশ কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ। সন্ধ্যা বেলা হোটেল-রেস্তোরাঁর সামনে পথের দু’ধারে, সৈকতের পাশে নানা রকম মাছ, কাঁকড়া, অক্টোপাস সাজিয়ে বসে দোকানিরা। তেলে ভাজা মাছের সুগন্ধে চারদিক মৌ মৌ করে। রাতে প্রায় সব হোটেলের আঙিনায় চলে মাছের বার্বিকিউ উৎসব।

কোথায় থাকবেন:

সেন্টমার্টিনে থাকার জন্য বেশ উন্নতমানের কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। অনেক বাড়িতেও আছে পর্যটকদের জন্য থাকার ব্যবস্থা। এছাড়া তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থাও রয়েছে। নিজের সাধ্যমতো যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই ভাড়া আগে মিটিয়ে নিতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/স্বর্ণ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত