ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

শীতে শুধু পাহাড় সমুদ্রে নয়, যেতে পারেন উত্তরেও

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:০৪

শীতে শুধু পাহাড় সমুদ্রে নয়, যেতে পারেন উত্তরেও

শীতের উপস্থিতি সাতসকালে টের পাওয়া যায়। রোদের চেহারা থাকে স্নিগ্ধ। তারও আগে ঝিরঝির কুয়াশার ধূসর পর্দা যেন চোখের সম্মুখে। বিকেলগুলোও অদ্ভুত সুন্দরে আচ্ছন্ন থাকে। এই সময় থেকে আমাদের ভ্রমণের যাত্রা শুরু হয়। আমরা সাধারণত ছুটে যাই সমুদ্রে, পাহাড়ে, জঙ্গলে। কিন্তু আমাদের দেশের উত্তরে যে অপূর্ব সৌন্দর্য আড়াল পড়ে আছে, তার খবর অনেকেই জানি না।

শহরটার নাম রাজশাহী। বিশ্ববিখ্যাত পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত প্রায় ৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিভাগীয় শহর রাজশাহী। সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এ শহরের উত্থান। আগে এ জেলার সদরদপ্তর ছিল নাটোরে। ১৮২৫ সালে সেটি নাটোর থেকে রাজশাহীতে স্থানান্তরিত হয়। রেশম উৎপাদন কেন্দ্র এবং পদ্মা নদীর তীরবর্তী শহর হওয়ায় ইংরেজ বণিকদের সহজেই নজর কাড়ে রাজশাহী। পর্যায়ক্রমে ওলন্দাজ, ফরাসি, ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে এ শহরে। ওলন্দাজ রেশম কারখানার ভবনটি ছিল বড়কুঠি নামে পরিচিত। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইউরোপীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর সদর দপ্তর বসেছিল বড়কুঠিতে। উনিশ শতকের শেষ দিকে বড়কুঠি ব্রিটিশদের কাছ থেকে মেদিনীপুর জমিদার কিনে নেয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর একে বেসামরিক সরবরাহ বিভাগের গুদামঘর করা হয়। ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে বড় কুঠি হয় ভাইস চ্যান্সেলরের বাসভবন ও কার্যালয়।

এই শহরটা দেখতে গিয়ে রিকশাতেই উত্তম। মানে সাজানো গোছানো ছিমছাম পরিপাটি এই শহরে ঘুরে বেড়াবেন রিকশায় করে। তারপর যাবেন টি বাঁধে। ইংরেজি অক্ষর টি এর আদলে টি বাঁধ। পদ্মা নদীর সৌন্দর্য কি শুধুই বর্ষায়? নদীর সীমারেখা যতদূর, ততদূর মুগ্ধতা ছড়ানো থাকে শীতে বসন্তেও। এখানে বসে জীবনের অন্যতম সুন্দর বিকেল কাটিয়ে আসতে পারবেন খুব সহজেই।

উত্তরবঙ্গে ভ্রমণের প্রাক্কালে সকলেই আগে ধারণা নিতে চায় বরেন্দ্র জাদুঘরের। রাজশাহী সদর হাপতালের সামনে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। নাটোরের দিঘাপাতিয়ার জমিদার শরৎ কুমার রায়, আইনজীবি অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় এবং রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রামাপ্রসাদ চন্দ্র- পুমখ ব্যক্তির প্রচেষ্টায় ১৯১০ সালে এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত। ১৯১৬ সালে মূল জাদুঘর ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল। ১৯৬৪ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের দায়িত্ব বর্তায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। আটটি গ্যালারিতে প্রায় দেড় হাজার প্রস্তর ও ধাতব মূর্তি, দুই হাজারেরও বেশি প্রাচীন মুদ্রা, প্রায় এক হাজার পোড়ামাটির ফলক ছাড়াও হাজারো নিদর্শন প্রদর্শিত হচ্ছে এ জাদুঘরে।

রাজশাহী সরকারী কলেজের কাছে দরগা পাড়ায় ঘুরে যেতে পারেন প্রথম দিনেই। এখানেই রয়েছে এ অঞ্চলের দরবেশ পুরুষ শাহ মখদুমের (র) সমাধি। ১২৮৭ সালে তিনি বাগদাদ থেকে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আসেন। ১৩১৩ সালে চিরকুমার এ দরবেশ মৃত্যুবরণ করেন। আলীকুলী বেগ ১৬৩৫ সালে তার সমাধির উপরে এক গম্বুজ বিশিষ্ট সৌধ নির্মাণ করেন। পুরনো জনপদে এসে পুরনো জায়গাগুলোই আগে দেখে নিতে হয়।

দ্বিতীয় দিনটা বেছে নিতে পারেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জন্য। ক্যাম্পাসের দেয়াল ঘেঁষে রাস্তায় যাবার সময়ও টের পাওয়া যায় না, দেয়ালের ওপাশে কী নিপুণ এক জায়গা। শুরুতেই কাজলা গেট দিয়ে ঢুকে পড়ুন ক্যাম্পাসে। ডানপাশে যেতেই পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর এক জায়গা। সেটার নাম প্যারিস রোড। দুই পাশে গগণ শিরিষ। অনেক উঁচু মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। তার পাশ দিয়েই সবুজ দেবদারুর সারি সারি মিছিল। শীতের এই সময়টায় ক্যাম্পাসে ডালিয়া কসমস আর গাঁদা ফুলের যে অপূর্ব চেহারায় আচ্ছাদিত থাকে, সেটা না দেখলে বোঝা কঠিন।

তারপর চলে যান সাবাস বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের এই স্মারক ভাস্কর্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার সবুজ চত্বরে মুক্তাঙ্গনের উত্তরপাশে অবস্থিত। রাকসু এবং দেশের ছাত্রজনতার অর্থ সাহায্যে শিল্পী নিতুন কুন্ড এই ভাস্কর্যটি বিনা পারিশ্রমিকে নির্মাণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৯২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম ‘সাবাশ বাংলাদেশ’ উদ্বোধন করেন। এই স্মৃতিস্তম্ভে আছে দুজন মুক্তিযোদ্ধার মূর্তি। একজন অসম সাহসের প্রতীক, অন্য মুক্তিযোদ্ধার হাত বিজয়ের উল্লসে মুষ্টিবদ্ধ হয়েছে পতাকার লাল সূর্যের মাঝে।

একই দিনে নির্জন এই ক্যাম্পাসে ঘুরতে ঘুরতে যেতে পারেন অনিন্দ্য স্থাপত্যকলার কেন্দ্রীয় মসজিদ, শহীদ মিনার, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা, ক্যাফেটেরিয়া, সিলসিলা, টুকিটাকি, লাইব্রেরি চত্বর, ইবলিশ চত্বর, শহিদুল্লাহ ও মমতাজউদ্দীন কলা ভবনের সামনের আমতলায় আর যেতে পারেন পশ্চিম পাড়ায়।

জেনে নিন রাজশাহী যাওয়া ও থাকার খবরাখবর: ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে রাজশাহী যাওয়া যায়। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে গ্রীন লাইন ও দেশ ট্রাভেলসের এসি বাস যায় রাজশাহী। ভাড়া ৮শ’ থেকে ১ হাজার টাকা। এছাড়া ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে শ্যামলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, বাবলু এন্টারপ্রাইজ প্রভৃতি পরিবহনের বাস রাজশাহী যায়। ভাড়া ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা। ঢাকার কমলাপুর থেকে রোববার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন সিল্কসিটি এক্সপ্রেস। মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পদ্মা এক্সপ্রেস। ভাড়া এসি বার্থ ৯৪০ টাকা। এসি সিট ৬৩০ টাকা। স্নিগ্ধা ৫২৫ টাকা। শোভন চেয়ার ৩১৫ টাকা। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারের বিমান যায় রাজশাহীতে।

রাজশাহী শহরে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ২শ’ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিভিন্ন মানের রুম পাওয়া যাবে। অন্যতম হোটেলগুলো হল, রাজশাহী চিড়িয়াখানার সামনে পর্যটন মোটেল, সাহেব বাজারে হোটেল মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল, বিন্দুরমোড় রেল গেইটে হোটেল ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, গণকপাড়ায় হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনাল, মালোপাড়ায় হোটেল সুকর্ণা ইন্টারন্যাশনাল, সাহেব বাজারে হামিদিয়া গ্রান্ড হোটেল, শিরোইলে হকস্ ইন, লক্ষীপুর মোড়ে হোটেল গ্যালাক্সি, সাহেব বাজারে হোটেল নিউ টাউন ইন্টারন্যাশনাল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত