ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

বৃষ্টি হচ্ছে, বেরিয়ে পড়ো

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:৪৭

বৃষ্টি হচ্ছে, বেরিয়ে পড়ো

আকাশে ভীষণ যন্ত্রণাকাতর মেঘ। এই বুঝি সে প্রকৃতির কোনও আরোগ্যনিকেতনে। দূরে কোথাও নিপুণ ছন্দে কিংবা ছন্দপতনের রিমঝিম রিমঝিম চুড়ি ভাঙা বৃষ্টির শব্দ। এখান থেকেই শুনছ অথবা শুনছ না। আবার এও হতে পারে তোমার বুকে একলা চিতল মাছ। দাপাদাপি। ঢেউ। ব্যঞ্জনা। তুমি বের হবে এখনি। যেতে হবে আষাঢ়ের কাছে, এমন মেঘ গুড়গুড় জীবনানন্দের কাছে। মেঘের এই অনিবার্য অভিঘাত হতে তোমাকে যেন ফেরাতে পারবে না কেউই।

আজকের এই একলা ঘর, জানালায় কেমন মন খারাপ করা আকাশের ছবি, বাতাসের ঠোঁটে আচ্ছন্ন রবীন্দ্রনাথ, অবিরাম গাইছেন অদিতি মহসিন, সেলফোনে তখন মৃদু রিংটোন, কে যেন ডাকছে ভেজা জারুলের ছায়ায়, শহরের নিশ্চুপ কোনও আবাসিক অঞ্চলের দিকে, তুমি তারপরও থাকবে এমন ঘরবন্দি আজ!

আজ বৃষ্টির দিন। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা তোমার ঠোঁটে। পরনে রেইনকোট? ওটা খুলে ফেলো। যেমন করে ঝুলে থাকা মেঘের শাড়ি খুলে খুলে পড়ছে বিরিশিরির গোলাপি পাহাড়ের গায়ে। যাবে ওদিকে এমন মেঘের কালে? যেতে পারো। সোমেশ্বরী নদীটা ক্রমশ ধোঁয়াটে হয়ে আসছে। সামনে তোমার আদিগন্ত প্রসারিত উপত্যকা। প্রবল বৃষ্টিতে ভরে যাবে সুসং রাজ্যের বিস্তৃত জলাধার। তুমি হাঁটবে আর বিষণ্ণ মন তোমার তা তা থৈ থৈ তা তা থৈ থৈ ।

এমন বৃষ্টির দিনে তুমি চলে যেতে পারো উত্তরে। অনেক উত্তরে। মহানন্দায়। দু’ধারে আমের বন। মাঝখানে এক আড়ালপ্রিয় নদী। শরীর মোচড়ানো ধুলো রঙ জল। ছইতোলা নাওয়ের গলুইয়ে বসতে পারো পা দুলিয়ে। দুলছ দুলছ। মাথাইল পরে মাথায়। গায়ে জড়ানো নীল পলিথিন। বৃষ্টি বৃষ্টি আর বৃষ্টি। তুমি তখন নদীতে। তখন তুমি মহানন্দায়। মানচিত্র ভাগ করে ফেলা জলের রেখার মধ্যিখানে তুমি ও তোমার এমন মুখর বর্ষাকাল।

এমন বৃষ্টির দিনে ঘরে থাকতে নেই। চলে যাও ভাটির দেশে। হাকালুকি, টাঙ্গুয়া কিংবা ডিঙ্গাপোতায়। সে হাওরের দেশ। পৃথিবীর সব জল যেন জমে গেছে এইখানে, এই সীমিত মৃত্তিকার বুক কামড়ে জেগে আছে, জেগে থাকে। বুকসমেত জল নিয়ে দমবন্ধ জীবনেও কী দারুণ ঝলমলে হিজলের গাছ, শাখা-প্রশাখায় চিকচিক জল, এই বৃষ্টি, বৃষ্টি, তুমুল বৃষ্টি এই হাওরের দেশে। চলে যাও এখনই। থেমো না, ভেবো না। যেতে হয়। বৃষ্টি নেমে গেলে ঘরে বসে থাকতে নেই, যেতে হয় টাঙ্গুয়ায়, হাকালুকি কিংবা ডিঙ্গাপোতায়।

দ্যাখো কেমন কাতরাচ্ছে মেঘ আকাশ পাড়ায়। নেমে যাবে জলের সিঁড়ি বেয়ে। তারপর ঝরবে অবিরাম অনেকদিন। একটানা। অনেকদিন। তুমি চলে যাও রেমা কালেঙ্গায়। চুনারুঘাটের ভেজা পথ মাড়িয়ে ঢুকে যাও কালেঙ্গার গভীরে। যেতে যেতে দ্যাখো কেমন একলা ভিজছে বসন্তবৌরি পাখিটি, তুমি যাবে বলে বসে আছে লাল মাথার কুচকুচি পাখিটিও। এদেশে এমন জঙ্গল আর একটিও পাবে না যেখানে অ্যামাজনের মতো ঘন কালো বড় পাতার কচু গাছের আড়াল হতে উড়ে আসবে লাল ঠোঁট সবুজ টিয়ে পাখি। যাও, করো বর্ষা বরণ এমন মেঘ মাসে ওই চিরহরিৎ রেমা কালেঙ্গায়।

আজ অন্তত যেতে পারো ড্রাগন লেকের দিকে। এরকম সময়ে নীরব নিস্তব্ধ প্রায়। খটখটে পাহাড়টার বুকে একলাটি এক মুঠো জলের আশ্রয়। গভীর। অনন্তকাল ধরে সে থাকে চোখ খুলে। ঘুমায়নি কোনও হেমন্তে শীতে কিংবা বেখাপ্পা গ্রীষ্মেও। এ বর্ষা তার সুখের দিন। তুমি চলে যেতে পারো রুমা বাজার। সেখান থেকে দলছুট প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে চলে যাও ড্রাগন লেকের ধারে। সেখানে অপেক্ষায় এক পাহাড়ি জীবন। ছুঁয়ে আসো। দেখে আসো। শীতে তো সকলেই যায়। তুমি ঘুরে আসো এই বর্ষায়, আজকের বৃষ্টিতে।

আজ যেতে পারো গহিরার দিকেও। পার্কির ঘন ঝাউবন আর কোথাও পাবে না এমন। এই বর্ষাকালের হাওয়ায় দেখে আসো সমুদ্রের সঙ্গে তার কী মেলামেশা ঝাউবনের সাথে। সেই ঝিরিঝিরি জীবন তুমি আর কোথাও পাবে না এমন মেঘের দিনে। ঢেউ। হাওয়া। বৃষ্টি। বৃষ্টি। চলে যাও এমন দিনে গহিরায়, যাও পার্কিতে।

কোথাও না যেতে পারো অন্তত গ্রামে যাও। টিনের চালের বারান্দায় বসে থাকো চুপচাপ। তারপর ঝমঝম। শুনে নাও জীবনের অমৃত সঙ্গীত। এরচেয়ে ভালো করে কেউ গায় না গান কোথাও। মেঘের চেয়ে ভালো কণ্ঠ কার আর আছে বলো। বৃষ্টি হলে অন্তত গ্রামের দেশে চলে যাও। গাছের পাতার শব্দ। টিনের চালের শব্দ। উঠোনে টুপটুপ শব্দ। জলের এমন ছন্দ পেতে চলে যাও। আর বসে থেকো না এই মেঘের দিনে।

বৃষ্টির দিনে ঘরে থাকতে নেই। বৃষ্টির দিনে ঘরে থাকলে পৃথিবীর রঙরূপ দেখা হয় না আর। একেক বৃষ্টি আসে একেক রঙ জামাকাপড়ে। একেক রকম মেকআপে আসে বৃষ্টি নেমে আমাদের পৃথিবীতে। তাই বৃষ্টির দিনে চলে যাও। দ্যাখো, দূরে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত