ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য থেকে ঘুরে আসতে পারেন

চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য থেকে ঘুরে আসতে পারেন

বাংলাদেশে খুব কমই বন্যাপ্রাণী অভয়ারণ্য আছে। চট্টগ্রামের লোহাগড়ার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য তাদের মধ্যে অন্যতম। এবারের ঈদের ছুটিতে সহজেই ঘুরে আসতে পারেন এই অপরুপ বন্য পরিবেশ থেকে।

চট্টগ্রাম জেলার লোহাগড়া উপজেলায় অবস্থিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশেই এ বনাঞ্চলের অবস্থান। ছোট-বড় পাহাড়ের ঢালে ঢালে চিরসবুজ এ বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রমে ভ্রমণ যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর কাছেই উপভোগ্য হবে। চুনতি অভয়ারণ্য ১৯৮৬ সালে লোহাগাড়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালী, চকরিয়া এলাকার সাতটি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের প্রায় ১৯ হাজার ১৭৭ একর জায়গা নিয়ে ঘোষণা করা হয় চুনতি সংরক্ষিত এলাকা।

অভয়ারণ্যটি প্রধানত ক্রান্তীয় মিশ্র-চিরহরিৎ বনভূমি, যা হালকা থেকে খাড়া ঢালবিশিষ্ট পাহাড়ি অঞ্চলে অবস্থিত এবং চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত গর্জন বেল্টের অন্তর্গত।

প্রায় ৪৭৭ প্রজাতির বার লাখেরও বেশি গাছ রয়েছে এ বনে, যার মধ্যে প্রায় ১৫ প্রজাতির গাছ ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে। এ বনে রয়েছে বেশ কিছু শতবর্ষী গর্জন গাছ। এ ছাড়াও শাল, সেগুন, আকাশমণি, গর্জন, বট, হারগোজা, চাঁপালিশ, হরিতকি, বহেরা, বাঁশ, আসাম লতা, ছন প্রভৃতি উদ্ভিদ বেশি দেখা যায়।

এ বনাঞ্চলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রাণী এশীয় হাতি। বন্য হাতিসহ নানান প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। চুনতি বনে সাধারণত দেখা মেলে লালমুখো বানর, মুখপোড়া হনুমান, খেঁকশিয়াল, সজারু, মায়া হরিণ, বন্যশুকর, শিয়াল, নানা রকম গিরগিটি, সাম্বারসহ অন্যান্য প্রাণী। এ ছাড়া এ বনের সাপের মধ্যে কালান্তর, দাঁড়াশ, গোখরা, অজগর, লাউডগা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

নানান জাতের পাখিরও অভয়াশ্রমও এ বনাঞ্চল। এ বনের বাসিন্দা উল্লেখযোগ্য পাখপাখালি হলো বন মোরগ, লাল মৌটুসি, নীলকণ্ঠী, পাহাড়ি ময়না, মথুরা, ঘুঘু, ফিঙে, কাঠঠোকরা, ধনেশ, টিয়া, বুলবুলি ইত্যাদি।

এ বনাঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী এলাকা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্গঠন স্থান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৮৬ সালে সাত হাজার ৭৬৪ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি নিয়ে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠার মূল লক্ষ্য হলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বনাঞ্চল সুরক্ষা, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল উন্নয়ন, শিক্ষা, গবেষণা ও চিত্তবিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা।

প্রবেশ মূল্য: চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে প্রবেশ মূল্য বাংলাদেশিদের জন্য দশ টাকা আর বিদেশি নাগরিকদের জন্য তিন আমেরিকান ডলার বা সমপরিমাণের বাংলাদেশি টাকা পরিশোধ করতে হয়। জায়গাটিতে ভ্রমণ করতে কোনো ইকো গাইডের সহায়তা নিতে পারেন।

কিভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বাসে চড়ে নামতে হবে লোহাগড়া বাজার বাস স্টেশনে। বাজার থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার ভেতরে চুনতি যেতে হবে থ্রি হুইলারে। ঢাকা-কক্সবাজারের পথে গ্রিন লাইন, সৌদিয়া, সোহাগ, হানিফ, টিআর ইত্যাদি পরিবহন সংস্থার তাপনিয়ন্ত্রিত বিলাসবহুল বাস চলাচল করে। ভাড়া ১১৫০ টাকা ১৬৫০ টাকা। এ ছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল, হানিফ ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৬০০-৭৫০ টাকা। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ও অক্সিজেন থেকেও কক্সবাজারের বাসে চড়ে লোহাগড়া নামতে পারেন। ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন: ছাত্র, গবেষক ও পর্যটকদের জন্য চুনতি বিট কার্যালয়ে রয়েছে স্টুডেন্ট ডরমেটরি। এ ছাড়া বন বিভাগ ও জেলা পরিষদের বিশ্রামাগারও আছে জায়গাটিতে। তবে সেখানে অবস্থান করতে কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে। লোহাগড়া বাজারে রাতযাপন করার জন্য সাধারণ মানের দু’একটি হোটেল আছে। এসব হোটেলে কক্ষ ভাড়া ১০০-৩০০ টাকা। তবে খাবার জন্য আপনাকে ১০ কি.মি. দূরে আমিরাবাদ যেতে হবে। এখানে নানা ধরনের খাবার হোটেল আছে। নিসর্গ সহায়তা প্রকল্পের নির্মাণাধীন ইকো-কটেজগুলোতেও যোগাযোগ করতে পারেন।

/ইইউ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত