ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

একালের জাপান যাত্রী

  নীলা হারুন

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০১৯, ২৩:৪৯

একালের জাপান যাত্রী

জাপান দেশে গেলাম হাওয়ায় ভেসে। একটা কলের পাখির পেটের ভেতরে জবুথবু বাঁধা-ছাঁদা হয়ে বসে আছি, ইকোনমিক ক্লাস এর টি কে ট বলে ঠ্যাং দু’টো রাখার বিশেষ সুবিধা হচ্ছেনা। আবার আসন গেড়ে বসব এমন চওড়া সীট ও নয়। যাই হোক, বিশেষ লক্ষ্য নিয়েই আমার এই জাপান যাত্রা। বাইরে তাকালেই এতক্ষণ মনে হত যেন একটা বিশাল বিরিয়ানির ডেকচির উপর ভাসছি, চারদিকে এত ধোঁয়ার মত মেঘ। হঠাৎ একটা গুঞ্জন উঠলো। সবার মত আমিও বাইরে তাকাই, দেখি ফুজি পর্বত চেয়ে আছে নিচ থেকে। আমি জাত বাঙ্গালি হুহু, আমাকে ভোলাতে পারবেনা বাবা। আমি ওসব পাহাড় পর্বত প্রকৃতি দেখে আমার লক্ষ্য ভুলতে নারাজ।

এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই হন্তদন্ত হয়ে আমার নাম লেখা প্ল্যাকার্ড খুঁজতে শুরু করলাম। ওকি ওনারা আমার বন্ধু, তার বাড়িতেই আমার থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা। তার বাড়ি যাবার তাড়ায় তাকে ঠিক মত অভিবাদন জানাতেও দিলাম না। আমার লক্ষ্যবস্তুগুলো তার বাড়িতেই আছে। একরকম ঘাড়ে চেপেই তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলাম, বাইরে থেকে কে যে কাকে কার বাড়ি অতিথি করে নিচ্ছে বলা মুশকিল।

ওকি ওনারার বাড়ি পৌঁছে দেখি নানান কাণ্ডের ব্যবস্থা। ধাপে ধাপে ভদ্রতা সভ্যতার বিনয়পাঠ শেষ মূলপর্বটি শুরু হবে। তারা আবার খুব বনেদী পরিবার কী না, এখনো পুরো জাপানী নিয়ম মেনে চলে।

জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দিব না কোন কিছুই। লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে বন্ধুকে জানালাম ব্যাপারটা- আমার খিদে পেয়েছে। আর অপেক্ষা সম্ভব নয়। একটু অবাক হলেও সে আমাকে তাড়াতাড়ি খাবার টেবিলে বসিয়ে দিল। ছোট টেবিল, মেঝেতে আমি নেহাত বাঙ্গালির মতই আসন গেড়ে বসলাম। ওই তো চোখের সামনে আরাধ্য সব। নিজেকে মনে হচ্ছে মহারাজা।

বাটিতে করে ভাত এগিয়ে দেয়া হল। এই কাঠি চেপে খাওয়া আমার পোষাবেনা। ঈশ্বরের দেয়া কাটলারি -আঙ্গুল আর হাতের ব্যবহার জানি। যদিও স্যুপের বাটির মত বাটিতে হাত দিয়ে খেতে অসুবিধা।

‘এ কী! ভাতগুলো অমন আঠালো হয়ে আছে কেন? কে খেতে চায় স্টিকি রাইস? আমি তো চাই ঝরঝরে মাড় ঝরানো ভাত।’ নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো। আহ! ডিম ভাজা! পেঁয়াজের বিছানার উপর-ই যেন ডিমখানা অমলেট রূপে সার্থক মরণ লাভ করেছে। ভাতে নুন মেখে নিলাম ইচ্ছেমত। আর কবে নুন খেতে পাব কে জানে।

অমলেটখানা মুখে দিয়েই কান্না এলো প্রায়। এত মিষ্টি পেঁয়াজ, কই গেল সেই স্বাদ আর ঝাঁঝ!

ওকি ওনারা আমার চোখের পানিতে ব্যস্ত হয়ে উঠে। বারবার ক্ষমা চায় তার আপ্যায়নের ত্রুটির জন্য। কী হয়েছে জানতে চায় সে। আমি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলি, আমার দেশে পেঁয়াজের দাম গেল বেড়ে, লোকে বলল খেওনা। খেলাম না। গেল চালের দাম বেড়ে, ভাতের বদলে খেলাম আলু, রুটি। এরপর গেল নুনের দাম বেড়ে, সব খাবার ই খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। নুন ছাড়া কি রান্না হয়? মিষ্টি খাবার খেয়ে খেয়েই রইলাম। নুনের অভাবে চিনির খাবার খেয়ে খেয়ে ওজন গেলো বেড়ে। লোকে বলল বাহ! দেশের মানুষ মোটা হচ্ছে, দেশ সুখে আছে।

আমি ফুজি পর্বত পাড়ি দিয়ে একটু ভাত, নুন আর পেঁয়াজ খেতে এসেছিলাম। মাছেভাতে বাঙ্গালি-এটা একটা প্রবাদ কেবল এখন। কারণ মাছ ও তো মারে নদীতে বিষ ঢেলে। আমরা এখন পেটে পিঠে রাক্ষস!"

ওকি ওনারা ছলছল চোখে মাথা নিচু করে থাকে। ওর মনটা বড় নরম। ওকি ওনারা ভাত নুন পেঁয়াজ সব খাইয়েও মাফ চাইলো, আর ওরা কিছু না খাইয়েও ধমকালো।

বি:দ্র. সব ঘটনা কাল্পনিক

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত