ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -২২)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:০০

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -২২)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -২২)

তথ্যমন্ত্রীর নিকটাত্মীয় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য। তিনি আবার মালিক কর্তৃপক্ষেরও ঘনিষ্ঠ। আমার মনে হয়েছে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হয়তো ওই নিকটত্মায়ীকে দিয়ে পরে তদ্বির করিয়ে থাকতে পারেন। যে কারণে শেষদিকে তাকে নিয়ে লেখা বন্ধ হয়। তথ্যমন্ত্রীকে নিয়ে লেখা বন্ধের আগে মালিক কর্তৃপক্ষ আমিসহ ৫ সিনিয়র সাংবাদিককে নিয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন। মালিক ওই নেতার সুপারিশের কথা জানিয়ে বলেন, এ হাউজ থেকেই ওই ব্যক্তির কাছে খবর গেছে। খবরটা কে দিতে পারে তা আমার কাছে সহজেই অনুমেয় ছিল। কেননা ওই প্রেসিডিয়াম সদস্যের সুপারিশেই কয়েকদিন আগে একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক যোগ দেন। এরই মধ্যে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র দুই সাংবাদিকের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব চূড়ান্ত রূপ নেয়। সম্পাদক হিসেবে এতে আমি ভীষণ বিব্রত। একজন বাইরে এক রেস্টুরেন্টে বৈঠক করে আরেকজনকে শায়েস্তা করার ফন্দি আঁটেন বলে কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে। যা আমাকে জানানো হয়। অন্যজন অফিসে তার ঘনিষ্ঠ সরকারদলীয় প্রভাবশালীদের ডেকে আনেন। নিয়মিত বৈঠক করেন। দু’জনই পরস্পরের বিরুদ্ধে আমার কাছে নালিশ করেন। পরিস্থিতি খুবই উত্তপ্ত। অথচ এ দু’জন দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে চলা-ফেরা করেছেন। আমি এসব সহজেই বুঝতে পারি। মালিকের কাছে ভাল থাকার জন্য যা যা করার তারা সব করার চেষ্টা করেছেন। এই যে বললাম, একজন মন্ত্রীকে নিয়ে কয়েকটি নিউজ করে সেই মন্ত্রী ও তার সহযোগীদের সঙ্গে নৈশভোজ করেছেন। কিন্তু কী এমন হল যে এখন হঠাৎ দু’জনের মধ্যে এত বৈরিতা। নিশ্চয়ই কোন স্বার্থের দ্বন্দ্ব। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত অনেক দূর গড়ায়। তারা দু’জন পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। পরিস্থিতি বেশ জটিল হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে মালিক আমাকে এক সন্ধ্যায় বাসায় ডেকে নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান।

আমি বললাম, আপনি দু’জনকে ডেকে কথা বলেন। তারা আগেও যা করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন সবক্ষেত্রে আপনাদের কথাই বলেছেন। বিভিন্ন জনকে নিয়ে সংবাদ ছাপার সময়ও তারা একই কথা বলেছেন। এখন আপনিই ডাকেন। দু’জনের কথা শোনেন, পরে সিদ্ধান্ত নেন। তাই হলো। পরের সন্ধ্যায় তাদের দু’জন এবং আমাকে ডাকলেন। দু’জনের কথা শুনলেন। এর মধ্যে একজনের পক্ষ হয়ে এলেন প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ও সরকারি দলেন তৎকালীন একজন হুইপ। অন্যজনেরও সমর্থনে ছিলেন প্রভাবশালী এক মন্ত্রী। মালিক তার মতো করে সিদ্ধান্ত নিলেন। একজন পদত্যাগ করলেন। আরেকজন থেকে গেলেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগলো। তবে এতসব ঘটনার মধ্যেও পত্রিকার প্রচারে কোন প্রভাব পড়েনি। কিছুদিনের মধ্যে আবার সব স্বাভাবিক হয়ে আসে।

এবার আরেক নতুন উপসর্গ। থেকে যাওয়া আর নতুন আসা ঊর্ধ্বতন একজনের মধ্যে আবার জুটি। একসঙ্গে চলাফেরা। কিন্তু ভিতরে ভিতরে দ্বন্দ্ব, অফিসের সবাই বুঝতে পারেন। কিছু হলে দু’জনেই মালিকের কথা বলেন। এতে আবার পত্রিকার পরিবেশ কিছুটা অবনতি হতে থাকে। আগেই বলেছি, আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার সুপারিশে চাকরি নিয়ে আসেন একজন। তার যেদিন চাকরি হয় সেদিন মালিক নিজের অফিসে আমাকে ডেকে নেন। এ সময় তাদের পরিবারের অন্য সদস্যরাও ছিলেন। মালিক আমাকে বলেন, আপনাদের হয়তো লোকের দরকার নেই, তবুও একজনকে চাকরি দিতে হবে। আমি জানতে চাইলাম কে? তিনি নাম বললেন। আগেও তাকে দেখেছি যোগদানের জন্য চেষ্টা করতে। তখন বলেননি, এখন বলছেন কেন? জানতে চাইলে বলেন, সুপারিশ আছে। তার কথা রাখতে হবে। পদ-পদবি, বেতন ইত্যাদি ঠিক করে অফিসে ফিরে আমি আরেকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে জানালে তিনি বেশ মনঃক্ষুণ হন। কিন্তু নতুন জন যোগদানের পরে কিছুদিনের মধ্যেই সাবেক ও নতুনের মধ্যে বেশ সখ্য লক্ষ্য করি। আগের দু’জন যেমন ছিলেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের মধ্যেও একধরনের স্নায়ুযুদ্ধ লক্ষ্য করি। কিন্তু ওপরে ওপরে দু’জন ঠিক। শেষপর্যন্ত পরে যোগদেয়া ওই সাংবাদিকও থাকতে পারেননি। তাকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে। আমি অবশ্য এর অনেক আগেই বাংলাদেশ প্রতিদিন ছাড়ি। তবে বাইরে থেকে যা শুনেছি তা হলো, আপাতদৃষ্টিতে সোজাসাপ্টা ও মেজাজি ওই সাংবাদিক কৌশলের কাছে মার খেয়েছেন। আমি যতটুকু শুনেছি, পদত্যাগের পর তিনি যে কারণ প্রকাশ করেছেন, আসল কারণ কিন্তু তা ছিল না। তিনি যাকে দায়ী করেছিলেন, পরে হয়তো ভুল বুঝতে পেরে তাকেই এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে নিয়ে যান।

আমার জানা মতে, এখনো তার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। শুধু সংবাদপত্র কেন সরকারি বেসরকারি অফিসেই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যায়ে প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা একধরনের স্নায়ুযুদ্ধ থাকে। আমাদের প্রতিষ্ঠানেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। এর মধ্যেই সবাই কাজ করে। কাজ করতে হয়। মানিয়ে নেয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। কেউ মানিয়ে নিতে পারে, কেউ পারে না। দেখা গেছে যারা মানিয়ে নিতে পারেন না, তারাই ভোগান্তির শিকার হন। যারা মানিয়ে নিতে পারেন, জ্বি হুজুর, জ্বি হুজুর করেন, তারা হেসে খেলে সময় কাটিয়ে দেন। আর যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মলিক বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে কারো সখ্য বা সুনজর থাকে তাহলে কাজ না করে ‘চাপাবাজি’ করেই চাকরির সময় কাটিয়ে দেয়া যায়। এ ক্ষেত্রে কারণে-অকারণে মালিকের বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ঘুরঘুর করতে হয়। কাজ ফাঁকি দিতে বা বড়াতি কিছু সুযোগ নিতে নানা অভিযোগ, অনুযোগও বিভিন্ন জন সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলতে হয়। আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে এমনটি দেখেছি অনেক স্থানে। কিন্তু এ ধরনের লোকের কারো শেষ পরিণতি ভাল হতে দেখিনি। আমি যেখানেই কাজ করেছি, এমনকি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী হিসেবে চাকরিকালেও সবাইকে বলেছি, কর্মচারী কোনদিন মালিকের বন্ধু হয় না।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

  • সর্বশেষ
  • পঠিত