ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -২৫)

  শাহজাহান সরদার

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২০, ০৯:৫৩

রিপোর্টার থেকে সম্পাদক (পর্ব -২৫)

[দেশের জনপ্রিয় দুটি পত্রিকার (যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন) জন্মের পেছনের ইতিহাস, কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেয়া বিব্রতকর বিভিন্ন আদেশ নির্দেশ, হস্তক্ষেপ, পত্রিকা প্রকাশের ওয়াদা দিয়ে অন্য একটি জনপ্রিয় পত্রিকা থেকে নিয়ে এসে পত্রিকা না বের করে হাতজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে বিদায় দেয়া, পত্রিকা প্রকাশের পর কোন কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক কিছু দিনের মধ্যেই ছাপা সংখ্যা কমিয়ে দিয়ে লাভ খোঁজা, ইচ্ছেমত সাংবাদিক-কর্মচারি ছাঁটাই করা সহ পত্রিকার অন্দর মহলের খবরা-খবর, রাজনৈতিক মোড় ঘুড়িয়ে দেয়া কিছু রিপোর্ট, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির কিছু ঘটনা এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ নিয়ে আমার এ বই ‘রিপোর্টার থেকে সম্পাদক’। জানতে পারবেন সংবাদপত্র জগতের অনেক অজানা ঘটনা, নেপথ্যের খবর।]

(পর্ব -২৫)

দু’দিন পর আবার শামীম সাহেবের ফোন। এবার তিনি জানালেন, বসুন্ধরা থেকে কে জানি ফোন করে আমার সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। অনেকদিন শামীম সাহেবের সাথে পরিচয়। তাকে সবসময় আমি আমার মতো করে দেখেছি। আমি যেমন সোজা ও সরলভাবে চলার চেষ্টা করি, প্যাঁচ বুঝি না, তাকেও এমনই মনে করেছি। দ্বিতীয়বার তার মুখ থেকে একই কথা শুনে আমি বিরক্ত। অন্য কারও ওপর নয়, নিজের ওপর। কেননা যা আমি করছি না, কেন তা নিয়ে কথা হবে। তিনি সেদিন তার পত্রিকা প্রকাশ, যোগদান নিয়ে কিছু বললেন না। তার ফোন রেখে মনে মনে অনেক কিছু ভাবি। এরপর দু’একদিন কাজে মনোযোগ কেন জানি কমে যায়। কিন্তু বিষয়টি অফিসের কেউ জানে, কারো কোন আচরণে কিন্তু এমন কিছু মনে হয়নি। আবারও শাহ আলম সাহেবের দেখা। তিনি আগের মতোই আচরণ করছেন। তবে আমি নিজে মানসিকভাবে কেন জানি দুর্বল হয়ে পড়ি। দু’দিন পর আবার শামীম সাহেবের ফোন। তিনি বললেন, শাহজাহান ভাই, কাল সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কফি খেয়ে যাবেন। কথা আছে। বললাম ঠিক আছে। পরদিন গেলাম। তিনি আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করলেন, আপনি প্রতিদিনে থাকতে পারবেন না। শাহ আলম সাহেব আপনাকে ভালভাবে দেখছেন না।

আমি জানতে চাইলাম আপনার সাথে এই যে কথা হয়, আসি তাকে বলে কে? পত্রিকা নিয়ে তো ক’দিন আগে আপনিই কথা বলেছেন। আমি বলিনি। আমি আপনার প্রস্তাবে হ্যাঁ-না কিছু বলিনি। তবে আপনি যা বলছেন তা এতটা গড়াল কীভাবে? আর আমি তো অফিসে কারও আচরণে এমন কিছু বুঝি না। শাহ আলম সাহেবের সাথে দেখা হয়। কথা হয়। তাকে তো আমি স্বাভাবিকই দেখি। জবাবে তিনি বলেন, আমার এখানে অনেক লোক আসে। বসুন্ধরার লোকও আসে। নিশ্চয়ই কেউ দেখেছে। আর আমি পত্রিকা করব অনেকে জানে। আপনার কথা অনেকেই আমাকে বলেছে। আমি তাদের বলেছি, কাগজ বের করলে শাহজাহান ভাইকে আনার চেষ্টা করব। এসব কথার পর তাকে আমি বললাম, বসুন্ধরা পত্রিকার পেছনে অনেক টাকা ব্যয় করেছে এবং করছে। আপনি পারবেন? পত্রিকা কিন্তু হাতির খোরাক। অনেকেই এগিয়ে এসে পরে সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেকার করে দিয়ে গুটিয়ে নেয়। শামীম সাহেব বললেন, আমার কোন সমস্যা হবে না। আমি বললাম, পত্রিকা চালাবে সম্পাদক, তার মতো করে। আপনি হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। দু’তিন বছর অব্যাহতভাবে বিনিয়োগ করবেন। এর আগে লাভ-লোকসানের প্রশ্ন তোলা যাবে না। আপনার ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী হলেই কাউকে নিয়ে আপনার ইচ্ছামতো লিখে দিতে বলবেন, তা হবে না। ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই সংবাদ হবে, ইনিয়ে বিনিয়ে নয়। তিনি বললেন, সব ঠিক আছে। কোন সমস্যা নেই। আমরা একটি ভাল কাগজ করব। পরিচ্ছন্ন কাগজ। আমি বললাম, আপনি আরও ভাবেন। ভেবেচিন্তে সময় নিয়ে আমাকে জানান। ক’দিন পর এক বিকেলে তিনি আবার ফোন করলেন। বললেন, শাহজাহান ভাই, আপনি যা বলেছেন সব ঠিক আছে। আমি রাজি। আর আমার ফান্ড রেডি আছে। প্রেস আনব। আমার নিজস্ব জায়গা আছে। অফিসের জন্য ল্যাবএইডের পাশেই গ্রীন রোড়ের ৮তলা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলা রেডি আছে। এ ভবনে ল্যাবএইডের অন্যান্য অফিসও আছে। আমি বললাম, ঠিক আছে। আমি কাল আসব। কথা বলব।

পরদিন গেলাম। তিনি আমাকে লিফটের কাছ থেকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন। বসালেন, কফি খাওয়ালেন। অফিস দেখাতে নিয়ে গেলেন। পরে জানতে চাইলেন, আমি আসব কিনা। আমি বললাম ঠিক আছে। কতদিনের মধ্যে কাগজ বের করতে চান। নাম, ডিক্লারেশন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হলো। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাংলাদেশ প্রতিদিনে যা পাই বললাম। মোটামুটি কথা হলো ল্যাবএইডের সঙ্গে একটি নতুন পত্রিকা বের করব। তিনি জানালেন, আমার নিয়োগপত্রের একটি খসড়া আজই তিনি মেইলে পাঠিয়ে দিবেন, আমি দেখে যেন তাকে জানাই। আমি চলে গেলাম অফিসে। সন্ধ্যায় মেইলে ঠিকই নিয়োগপত্রের একটি খসড়া পাই। তাতে সবই ঠিক আছে। কিন্তু বেতন-ভাতা বৃদ্ধি নেই। প্রতিদিনে যা ছিল তাই। তিনি আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন বেতন-ভাতা কত? আমি প্রতিদিনে যা পাই তাই বলেছিলাম। বেশি দিতে হবে তা বলিনি। তিনিও জানতে চাননি বেশি চাই কিনা। আমি এতে কিছু মনে করিনি। ঠিক আছে। শুরু করি। দেখি না, ভাল কিছু করা যায় কিনা। আর তিনিতো বলছেন, এ পত্রিকাটি দু’জনের অংশীদারিত্বের মতো থাকবে। আমার নিজের কাগজ ভাবতে হবে। চাকরি যেন না ভাবি। তিনি মেইল পাঠিয়ে কিছুক্ষণ পরে ফোন করেন। আমি বলি দেখে পরে জানাব। রাতে আর কথা বলিনি। পরদিন ফোন করে জানালাম, ঠিক আছে। নিয়োগপত্র তৈরি করেন।

আমি পরদিন এসে নিয়ে যাব। ঠিকই পরদিন নিয়োগপত্র গ্রহণ করলাম। এতে লেখা আছে যোগদানের তারিখ থেকে কার্যকর। কাজেই তাড়াহুড়া নেই। তিনি জানতে চাইলেন, কবে নাগাদ যোগদান করতে পারব। বললাম, আমি একটি পত্রিকার সম্পাদক। এ পত্রিকাটি আমি নিজ হাতে রাস্তায় নেমে বিক্রি করেছি। বাজারজাতের প্রথম দিন আমি আর নঈম নিজাম দু’জন ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত পত্রিকা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছেছে কিনা ঘুরে ঘুরে দেখেছি। ঢাকাশহরের প্রতিটি বিক্রয়কেন্দ্রে ঘুরেছি। তাই হুট করে আসা যাবে না। সবাইকে বলে সম্মানজনকভাবে আসতে হবে। সময় দিতে হবে তাদেরও। আর আমি যখন নিয়োগপত্র গ্রহণ করেছি আর আপনি যখন বলেছেন, শাহ আলম সাহেব সব খবর রাখেন, আপনাকে ফোন করেছিলেন, তাহলে আসতে কোন সমস্যা হবে মনে হয় না। তবুও পদত্যাগের আগে শাহ আলম সাহেবকে জানাতে হবে। দু’একদিনের মধ্যেই তার সাথে কথা বলব। শামীম সাহেব যথারীতি আমাকে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। এ ব্যাপারে সবসময়ই তিনি অগ্রণী। যতবার তার অফিসে গিয়েছি বিদায়ের সময় সবসময়ই লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেছেন।

চলবে...

বইটি পড়তে হলে সপ্তাহের রবি, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার চোখ রাখুন ‘বাংলাদেশ জার্নাল’ অনলাইনে।

বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন

আজিজ সুপার মার্কেট (তৃতীয় তলা), ঢাকা।

বইটি সংগ্রহ করতে চাইলে ক্লিক করুন

আরএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত