ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ট্রেনের পরিত্যক্ত বগি যেন ভবঘুরে পতিতাদের আখড়া

  আহমেদ ইসমাম

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:৪৪  
আপডেট :
 ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:৫৪

ট্রেনের পরিত্যক্ত বগি যেন ভবঘুরে পতিতাদের আখড়া

রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে দেশব্যাপী। বিষয়টি আমলে নিয়ে অভিযানে নামে দেশের আইনশৃংখলা বাহিনীগুলো।

প্রথম দিকে আইনশৃংখলা ভালো থাকলেও মাস না পেরোতেই আবারো আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনের আশেপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আবারো মজনুর মত ভবঘুরে ও রাতের ভ্রাম্যমাণ পতিতারা ওঁৎ পেতে থাকে কাস্টমারের জন্য। অথবা সুযোগ পেলেই বসে পড়ে মাদকের আসর। অন্যদিকে খদ্দের মনে করে ডাক দেয় পথচারীদের। যদিও জিআরপি ও থানা পুলিশ বলছে তারা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার রাতে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ও আশেপাশের এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনে থেমে থাকা একটি মালবাহি গাড়ির বগির নিচে বসে দুজন মাদক সেবন করছে। পাশেই আরেকটি বগির দরজা খোলা। দরজা খোলা থাকা বগিতে প্রবেশ করে দেখা যায় মাদক সেবনের বিভিন্ন আলামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সিগারেটের কাগজে পুড়িয়ে কিছু একটা সেবন করেছে। কিছু অংশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এছাড়াও অসামাজিক ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এ সময় মালবাহি কামরাটিতে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে কিছুক্ষণ আগেও যে এখানে মানুষের উপস্থিতি ছিল তা সেখানকার পরিস্থিতি দেখে বোঝা যায়।

সারি সারি রেলের এই কামরাগুলো ধরে সামনে এগুতেই ৩ জন নারীকে সেজেগুজে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এ সময় তাদের পরিচয় জানতে চাইলে কোনো কথা না বলে সেখান থেকে সরে যায়। এ সময় এই প্রতিবেদক সেখান থেকে না সরায় গালাগালি দিতে থাকে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা পাথর নিক্ষেপ করে।

বিষয়টি পুলিশকে জানালে এ এস আই মশিউর জানিয়ে দেন রেল স্টেশনের ভেতরে তার প্রবেশ করার এখতিয়ার নেই। ঘটনাটা যদি রাস্তার পাশে ঘটত তবে তিনি পদক্ষেপ নিতে পারতেন। পরে স্টেশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে কোনো পুলিশ নেই। তাদের নিরাপত্তা অনেকটা ফাকা পুলিশ দিয়েই চলছে।

রেলওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মাস খানেক আগে সেখানে রেলেওয়ে পুলিশের একটি ক্যাম্প থাকলেও এখন তা সরিয়ে নেয়া হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশের সদস্য সংখ্যায় কম থাকায় এখানকার ক্যাম্পটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি রবিউল হোসেন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা সবধরনের নিরাপত্তা দিতে প্রতিদিন কাজ করছি। এ জন্য ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চলে। তিনি বলেন, বাইরের কোনো সমস্যা যদি স্টেশনের ভেতর ঢুকে পরে সেটা মোকাবেলা করতে সমস্যা হয়। তবে রেলওয়ে পুলিশ না থাকার বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

ক্যান্টনমেন্ট থানার ওসি কাজী শাহান হক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা কিন্তু নিয়মিত টহল দিচ্ছি। দিনে ও রাতে আমাদের পুলিশ সদস্যরা সেখানে অবস্থান করে। কোনো সমস্যা হলেই তারা তা সমাধানের চেষ্টা করে। তবে স্টেশনের ভেতরে কী হয় তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। চাইলেও আমরা স্টেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারি না।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে রেলওয়ে পুলিশের ব্যাপারে আমরা কিছু বলতে পারব না।

তবে ভিন্ন চিত্র পাওয়া যায় কুর্মিটোলাসহ বিমানবন্দর সড়কের দুই ধারে। এখানে আগে বাতি না থাকলেও এখন আছে। সন্ধ্যা হলেই জ্বলে ওঠে সাদা ঝকঝকে বাতি। রাস্তার দুইধারে যত আগাছা ছিল তার সব পরিষ্কার করে দেয়া হয়েছে। তবে সন্ধ্যায় মানুষ জনের খুব একটা আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়নি।

মোসাব্বির নামে এক পথচারির সাথে কথা হলে তিনি জানান, কুর্মিটোলা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে এখন বাতি জ্বালানো থাকলেও জায়গাটি নিরাপদ নয়। অনেকেই সন্ধ্যার পর এই জায়গা দিয়ে হাটতে ভয় পায়।

এর আগে ৫ জানুয়ারি কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গত ৮ জানুয়ারি ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন শেওড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে র‌্যাব মজনু নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে। ৯ জানুয়ারি আদালত মজনুর সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ১৬ জানুয়ারি মজনু দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। এখন সে কারাগারে।

ঘটনার দিন ক্লাস শেষে বিকেল সাড়ে ৫টায় বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বাসে ওঠেন ওই শিক্ষার্থী। উদ্দেশ্য ছিল একসঙ্গে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে কুর্মিটোলায় বাস থেকে নামেন তিনি। বাস থেকে নেমে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ অজ্ঞাত পরিচয় একজন তার মুখ চেপে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর অদূরে নির্জন স্থানে তুলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

কুর্মিটোলার এই সড়কের পাশেই ধর্ষণের শিকার হন ঢাবি ছাত্রী

ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে সহপাঠীরা জানিয়েছিল, সেইদিন সন্ধ্যা ৭টার পর তাকে অচেতন করে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এক পর্যায়ে তার জ্ঞান ফিরলে পাশবিক নির্যাতনে আবারো তিনি অচেতন হয়ে যান। রাত ১০টার দিকে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর ওই ছাত্রী নিজেকে দেখতে পান একটি নির্জন স্থানে পড়ে আছেন। এরপর সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় বান্ধবীর বাসায় যান।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত