ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

মিরপুরে পতিতাদের ‘চোরের ওপর বাটপারি’

  হৃদয় আলম

প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:০৪  
আপডেট :
 ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৪৩

মিরপুরে পতিতাদের ‘চোরের ওপর বাটপারি’

‘চোরের ওপর বাটপারি’ মানে চোরের সাথেও প্রতারণা। আসলেই তাই। মিরপুর-১০ ও মিরপুর-১’র ওভারব্রিজ থেকে শুরু করে টেকনিক্যাল পর্যন্ত চোখ-কান খোলা রেখে পথ চললেই মিলবে বিষয়টির সত্যতা।

রাজধানীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যখন নিয়মিত সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যস্ত, তখন কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও নির্দিষ্ট কিছু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দিনের পর দিন এক শ্রেণির পতিতা ও ছিনতাইকারী তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

দিনকে দিন এরা খারাপের চেয়েও খারাপ পন্থা খুঁজে বের করছে মানুষ ঠকানোর। এই পতিতারা যখন রাতের ঢাকায় খদ্দের খুঁজে বেড়ান তখন তাদের যোগসাজসে এক শ্রেণির ছিনতাইকারী সর্বস্বান্ত করছে সাধারণ মানুষকে।

সরেজমিনে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, মিরপুর-১ ওভার ব্রিজের ওপর প্রকাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে পতিতার দল। এদের কারো মুখ খোলা, আবার কেউ কেউ বোরখা পড়েছে। ঢেকেছে মুখও। এসব পতিতা যেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার মাত্র ঢিল ছোড়া দূরত্বে পুলিশের চেকপোস্ট। অনেক সময় অভিযোগও যায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের কাছে। অভিযোগ রয়েছে, ‘আমাদের কাজ নয়’ বলে এড়িয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।

দেখা যায়, পথচারীরা যখন ওভারব্রিজ দিয়ে যাচ্ছেন তখন একের পর এক দল পতিতারা তাদের নানান ধরনের অঙ্গভঙ্গি ও ইশারায় ডাকছে। কেউ কেউ আবার হালকা স্পর্শও করে। কেউ কেউ করে বাজে মন্তব্য।

স্থানীয়রা জানান, পতিতার ভয়ে এখানে সন্ধ্যা নামার পর লোকজনের আনাগোনা কমে যায়। আর রাত ১০টার পর থেকে পুরো এলাকাই চলে যায় পতিতা আর ছিনতাইকারীদের দখলে।

ফুটওভার ব্রিজটির পশ্চিম ও উত্তর পাশেই পতিতারা অবস্থান নিয়ে থাকে।

এখানকার পতিতারা কয়েকটি গ্রুপে কাজ করে। এদের সাথে আবার কয়েক শ্রেণির ছিনতাইকারীর সখ্যতা রয়েছে। এখানকার যৌনকর্মীরা সন্ধ্যা থেকেই শুরু করে খদ্দের সংগ্রহ যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এখানকার কোনো গ্রুপ যদি কোনো খদ্দেরের খোঁজ পায় তা সাথে সাথে জানিয়ে দেয়া হয় ছিনতাইকারী দলের সদস্যদের। এখানকার বেশিরভাগ খদ্দেরই আশপাশের কলেজ-ভার্সিটির শিক্ষার্থী, স্থানীয় রিকশাচালক ও গার্মেন্টসকর্মীরা।

খদ্দেরদের থেকে এরা আগে অর্ধেক টাকা নেয়। ক্ষেত্র বিশেষ এরা পুরো টাকাও আগে নিয়ে নেয়। এরপর এদের অনুসরণ করতে বলে খদ্দেরকে। কখনো আবার বলে, অমুক জায়গায় গিয়ে দাঁড়ান আমরা আসছি। এরপর খদ্দের স্থান ত্যাগ করলে তার পিছু নেয় ছিনকারী দলের সদস্যরা। কোনো অন্ধকার গলি বা নিরীবিলি স্থানে এরা খদ্দেরকে পেলেই তাকে সর্বশান্ত করে এ শ্রেণির সদস্যরা। অভিযোগ রয়েছে, এরা অনেক সময় মাদকও সরবারহ করে থাকে।

সূত্র মতে, এখানকার পতিতারা যেসব বাড়ি বা ফ্ল্যাট ভাড়া করে তা ভাড়া নেয়ার জন্য এরা আবার স্বামী ভাড়া করে। এ জন্য এদের আবার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে হয় স্বামী পরিচয়ে যুবকদের। ক্ষেত্র বিশেষ ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়া সময় এসব যৌনকর্মীদের স্বামী পরিচয় দিয়ে থাকে। আর ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়ার পর বোন পরিচয়ে এক ফ্ল্যাটে অবস্থান নেয় ২-৩ জন যৌনকর্মী।

ব্রিজটির পাশে অবস্থানরত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রয়োজনের তাগিদেই এটা নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ রাতে নিরাপত্তাহীনতা ও পতিতাদের দ্বারা ভোগান্তির ভয়ে ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করছেন না পথচারীরা। এতে তাদের ব্যবসায়ও বিঘ্ন ঘটছে বলে জানান তারা।

আনোয়ার হোসেন নামের এক পথচারী বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, প্রতিদিন আমি মিরপুর-১ এ নেমে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করে ওপারে যাই। যাওয়ার পথে গত সোমবার ১০ হাজার টাকাসহ স্মার্টফোন খোয়া যায় ছিনতাইকারীদের হাতে। এরপর থেকে আর ওই ওভার ব্রিজে উঠি না। আমার বন্ধুরাও এই ওভারব্রিজ দিয়ে পার হয় না।

বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থী দেলোয়ার জানান, সন্ধ্যার পর থেকেই এখানে পতিতাদের আনাগোনা বাড়তে থাকে। বান্ধবী নিয়ে ফুটওভার ব্রিজ পার হতে গিয়ে পতিতাদের আহ্বানে বড় লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। সে কারণে আর ওই ওভার ব্রিজ ব্যবহার করি না।

এই এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হোসেন জানান, পতিতাদের কারণে কেউ স্ত্রী সাথে নিয়েও ঠিকভাবে হাঁটা-চলা করতে পারে না। আমি সম্প্রতি স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে পার হওয়ার সময় পতিতারা আমাদের ঘিরে ধরেছিলো। সে সময় আমি অত্যন্ত লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মিরপুর মডেল থানার ওসি মোস্তাজিরুর রহমান বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা অভিযান শুরু করেছি। কালকে আমরা একজনকে আটক করেছি। আমাদের কাছে এসব পতিতার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। আমরা এদের সবাইকে আটকের চেষ্টার করছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত