ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে কলমের রাজনীতিতে

  ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৫:২৬  
আপডেট :
 ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৫:৩৬

সক্রিয় রাজনীতি ছেড়ে কলমের রাজনীতিতে

প্রতিদিনের ক্যাম্পাসকে যে সংগঠনটি মানুষের কাছে তুলে ধরে তার নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)। ক্যাম্পাসের আয়না হিসেবে এ সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নির্মাণেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিচ্ছবিরূপী এই সংগঠনটি তার প্রতিষ্ঠার তিন দশকেরও বেশি সময় পার করেছে। এই দীর্ঘ পথচলায় সমিতির সদস্যদের রয়েছে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, চ্যালেঞ্জ ও ত্যাগ তিতিক্ষার গল্প। সেই গল্প বাংলাদেশ জার্নালকে জানিয়েছেন ডুজার বর্তমান সভাপতি আবির রায়হান। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন- সাইফুল ইসলাম খান

ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় চ্যালেঞ্জ কতটা?

আবির রায়হান: সাংবাদিকতার শিক্ষানবিশ সময়টা হল ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। আমরা যারা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করি তারা নির্দিষ্ট কোন ফরমেটে কাজ করি না। পত্রিকা অফিসগুলোতে আলাদা আলাদা বিট থাকে কিন্তু আমাদের সব বিটের নিউজই করতে হয়। সেজন্য সাংবাদিকতা শেখার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে ক্যাম্পাসের সময়টা, এখানে সকল জায়গায় পারদর্শীতা অর্জনের সুযোগ থাকে। এই সুযোগটা আমরা নিয়েছি।

আর চ্যালেঞ্জ বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অনিয়ম, দুর্নীতি, ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বা কিছু অনিয়ম নিয়ে আপনি লিখবেন তখন অনেক সময় বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। এই বাঁধা ও অসহযোগিতাই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীর গড়ে ওঠার সময়। একজন শিক্ষার্থীর ক্যারিয়ার, জীবনকে কোন পথে ধাবিত করবে সেই সময়টাতে যারা আমরা ক্যাম্পাস রিপোর্টিং এ যুক্ত, আমরা যদি সামনে ভাল ভবিষ্যৎ না দেখতে পারি তখন এই পেশা থেকে ঝড়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এগুলোই ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জ।

সাংবাদিক লাঞ্ছনার বিচার কতটা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে সমিতি কী ভূমিকা রাখছে?

আবির রায়হান: অনেক সময় এমন ঘটনা ঘটেছে যে, একজন সাংবাদিক কোন একটা নিউজ করতে গিয়েছেন; যখন তার (সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি) স্বার্থ পরিপন্থী হয়েছে তখন ওই সাংবাদিককে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে বা শারীরিকভাবে বা কথা দ্বারা আঘাত করা হয়েছে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সব সময় কাজ করে থাকি। সাংবাদিকদের জন্য বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রাম থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আপনি দেখবেন এখন সাংবাদিকদের লাঞ্ছনার ঘটনা (ক্যাম্পাসে) খুবই কম। আমরা সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ সব সময় এ বিষয়টিতে কাজ করি। আর সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের বিষয় হল- ছাত্র সংগঠনের সাথে এ সমস্যাটা (লাঞ্ছনার ঘটনা) তৈরি হয়। তবে ক্যাম্পাসে বিদ্যমান যে সংগঠনগুলো রয়েছে তাদের সাথে সাংবাদিকদের বোঝাপড়া ও সম্পর্ক অনেক ভাল। আমি মনে করি, আমরা যে ভুল ত্রুটিগুলো তুলে ধরি সেগুলো তারাও ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে। সেগুলোকে তারা শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করে। বর্তমান সময়ে এই সমস্যাটা কম।

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক কেমন?

আবির রায়হান: ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে আমাদের সম্পর্ক কখনো দ্বান্দ্বিক না, বন্ধুত্বপূর্ণই। আমরা ক্যাম্পাস রিলেটেড কাজ করি। তাদের সাথে সর্বক্ষণিক ওঠাবসা থাকে। আমরা বলতে পারি যে, সাংবাদিক সমিতির যে কার্যক্রম রয়েছে- সভা হয়, অনুষ্ঠান হয়, সেমিনার হয়; সকল অনুষ্ঠানেই আমরা সকল মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনগুলোকে আমন্ত্রণ জানাই। নির্দিষ্ট করে বললে- ছাত্রলীগ, ছাত্রদল এবং বামপন্থী সংগঠনগুলো থেকে শুরু করে প্রগতিশীল যে সংগঠনগুলো রয়েছে সবাই কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠানে আসে। তারা এসে পাশাপাশি একসাথে বসেন। প্রগতিশীল সব সংগঠনের সাথেই আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। সারা বছর তাদের যে দূরত্বটা থাকে আমি মনে করি সাংবাদিক সমিতির অনুষ্ঠানে এসে সেই দূরত্বটা অনেকটা মোচন হয়। পাশাপাশি বসে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে। ছাত্র সংগঠনগুলো সাংবাদিক সমিতির সদস্য ও নেতৃবৃন্দের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করে। কিছু কিছু বৈপরীত্ব যে নেই আমি সেটি বলব না। তবে সেটা বিচ্ছিন্ন।

আর পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দেখা যায় যে, ছাত্র সংগঠনগুলোর পাশেই কিন্তু সাংবাদিক সমিতি থাকে। আমরা দেখতে পাই, বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে বিশেষ করে যখন ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলনে থাকে তখন আর কাউকে পাশে না পেলেও ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা কিন্তু তাদের পাশে থাকে। এক কথায় বললে, সাংবাদিক সমিতি সব সময় নিপীড়িতদের পাশে থাকে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের গ্রুপিং এর কারণে...কিছুদিন একটা গ্রুপ যখন আন্দোলন করছে আমরা কিন্তু তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি, তাদের মতামত তুলে ধরেছি। এর আগে যখন অন্য কেউ আন্দোলন করেছে আমরা তখনো ছিলাম। আমরা সব সময় নিপীড়িত পক্ষটার পাশে দাঁড়াই। আমাদের চেষ্টাই থাকে সহযোগিতা করা, তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর এবং পুরো শিক্ষার্থীদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর।

সংগঠন হিসেবে সাংবাদিক সমিতি অন্যান্য সংগঠনের প্রতি কী ধরণের ভূমিকা রাখে?

আবির রায়হান: এখন সকল ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে থাকতে পারছে, আসতে পারছে। কিছু দিন আগেও ডাকসু নির্বাচনের আগেও এমন অবস্থা ছিল যে, বিরোধী মতাদর্শের যে ছাত্র সংগঠন আছে- ছাত্রদল; তারা ক্যাম্পাসে এভাবে আসতে পারত না। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগত বা শঙ্কার মধ্যে থাকত। সাংবাদিক সমিতি কিন্তু তাদের সহাবস্থানের জায়গাটা কিছু সময়ের জন্য হলেও নিশ্চিত করেছে। সাংবাদিক সমিতির প্রোগ্রামগুলোতে তাদেরকে ডাকা এবং দুই ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে পাশাপাশি বসানো। সাংবাদিক সমিতি সব সময় মনে করে যে, ছাত্র সংগঠনগুলো- মতাদর্শের ক্ষেত্রে তারা আলাদা হতে পারে কিন্তু তাদের যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা ছাত্রদের নিয়ে কাজ করার চেষ্টা; সেই পথ কখনো আলাদা হতে পারে না। সাংবাদিক সমিতি সেই জায়গায় চেষ্টা করে যে, প্রগতিশীলতার চর্চা করে এ রকম সকল মতাদর্শের ছাত্র সংগঠনকে এক প্লাটফরমে দাঁড় করানোর জন্য এবং এক সাথে ছাত্রদের জন্য কাজ করানোর জন্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)’র যাত্রা কবে থেকে?

আবির রায়হান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ১৯৮৫ সালে, বর্তমান বিটিভির মহাপরিচালক হারুন অর রশীদ ভাইর হাত ধরে। তার সাথে মুকুল ভাই আছেন, আব্দুল হাই ভাই, আরো অনেক প্রতিথযশা সাংবাদিকদের হাত ধরে সমিতির যাত্রা। মুক্তিযুদ্ধের আগেও সাংবাদিক সমিতি ছিল, তবে এই নামে না অন্য নামে ছিল। এখন যতটা সংগঠিত তখন এটাতো ছিল না। মহান মুক্তিযদ্ধে শহীদ সাংবাদিকের নামে আমাদের শহীদ চিশতী হেলালুর রহমান স্মৃতিপাঠাগার রয়েছে। তিনি দৈনিক আজাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি তৎকালীন সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন। আমরা চেষ্টা করেছি তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। সেই থেকে যাত্রা এর পরবর্তীতে অনেক প্রথিতযশা সাংবাদিক তৈরি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।

আপনার বেড়ে ওঠা ও সাংবাদিক সমিতির নেতৃত্বে আসার ঘটনাচক্র জানতে চাই

আবির রায়হান: আমি ২০১৯ সালে দায়িত্বগ্রহণ করেছি। আমার প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ সবটাই গ্রামের বাড়িতে পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলায়। পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা সেখানেই। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পরে আমি ঢাকাতে আসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পরে সাংবাদিকতায় জড়ালেন কীভাবে?

আবির রায়হান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসর পর প্রথমে আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম। পরবর্তীতে হলে একটা সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম। এর পরে আমি চিন্তা করে দেখলাম আমার আসলে সাংবাদিকতায় যাওয়া উচিত। কেন? আমার মনে হয়েছে- আমার মত অনেকেই আছে যারা ছাত্র রাজনীতি করছে। তবে প্রত্যেকের জায়গা থেকে শিক্ষার্থী বলুন, যার যার ক্যারিয়ার সাথে দেশের জন্য কিছু করা; সেই জায়গায় কতটুকু সফল হতে পেরেছে জানি না। আমর কাছে মনে হয়েছে, আমি যদি সাংবাদিকতায় আসি সে ক্ষেত্রে আমার ক্যারিয়ারেরও একটা দিক আছে।

দ্বিতীয়ত আমি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের জন্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আমার কিছু করার সুযোগ রয়েছে। সেটা বলতে পারেন- কর্তৃপক্ষের ভুল ধরে দেওয়ার মাধ্যমে বা ছাত্র সংগঠনের ভুলগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে, তাদের সংশোধন করে দেওয়ার মাধ্যমে বা তাদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে। সেই জায়গা থেকে আমার কাছে মনে হয়েছে- আমার সাংবাদিকতায় আসা উচিত। তারপর থেকে সেই ২০১৪ সালের শেষে তখন দ্বিতীয় বর্ষে থাকতে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতাম। যখন সাংবাদিকতায় পুরোপুরি আসি তখন জানলাম নিয়ম আছে সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে সাংবাদিক সমিতির সদস্য হওয়া জায় না।

তারপর থেকে সক্রিয় রাজনীতি থেকে এসে কলমের... একজন কলম যোদ্ধা হিসেবে বা কলমের রাজনীতিতে প্রবেশ করি। সভাপতি হিসেবে আমি চেষ্টা করছি সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের পেশাগত মান বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাওয়া এবং তাদের নিরাপত্তা ও সাংবাদিকতার পথকে মসৃণ করার জন্য। যতদিন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম আমি একটি দলের মতাদর্শকে লালন করতাম। পদে (সাংবাদিক সমিতির) আসার পর যেটা ধারণ করি সেটা হচ্ছে- আমার মতাদর্শের জায়গায় মতাদর্শ কিন্তু পেশাগত জায়গায় নিরপেক্ষ থেকে কাজ করব।

আপনাকে ধন্যবাদ আবির রায়হান: আপনাকে এবং পাঠকদেরও অনেক ধন্যবাদ

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত