ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

৪৭ বছর পর দুই বোনের দেখা

৪৭ বছর পর দুই বোনের দেখা

কথায় বলে, ‘নদীতে নদীতে দেখা হয় কিন্তু বোনে বোনে দেখা হয় না।’ এই কথার প্রকৃত উদাহরণ যেন কম্বোডিয়ার শতবর্ষী দুই বোন। এদের এক বোনের বয়স ৯৮ বছর। আর অন্যজনের ১০১ বছর। দুজনের যে এভাবে দেখা হবে তা কখনও কল্পনাও করেননি তারা। কেননা ওই দুইজনই মনে করেছিলেন, ৯৭০-এর দশকে খেমার রুজের সন্ত্রাসবাদী শাসনামলে তাদের বোনটি মারা গেছেন। কিন্তু দীর্ঘ ৪৭ বছর পরে প্রথমবারের মতো দেখা হলো তাদের। কাছে পেয়েই দুজন দুজনকে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করেন। দুই বোনের সেই স্মরণীয় সাক্ষাৎকারের কাহিনী তুলে ধরেছে বিবিসি বাংলা।

খেমার রুজ হল কমিউনিস্ট পার্টি অব ক্যাম্পুচিয়ার সশস্ত্র শাখা। কমিউনিস্টরা ক্যাম্বোডিয়াকে ক্যাম্পুচিয়া নাম দিয়েছিল। ১৯৭৫-১৯৭৯ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর কম্বোডিয়ায় ক্ষমতায় থাকাকালীন বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছিল তারা। ওই গণহত্যার শিকার হয়েছেন এই দুই বোনের এক ভাইও, যার বয়স এখন ৯২ বছর।

৯৮ বছর বছর বয়সী বোনের নাম বুন সেন। তিনি ভেবেছিলেন, তার এই ভাইটিও হয়তো আর বেঁচে নেই। কিন্তু কম্বোডিয়ার এক এনজিও’র উদ্যোগে বুন সেন তার ৯২ বছর বয়সী ভাইয়ের সাথে দেখা করেন। এরপর প্রায় অর্ধশত বছর পর বড় বোনটিরও দেখা পেলেন বুন সেন।

এর আগে দুই বোনের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। অর্থাৎ পোল পটের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্টরা ক্যাম্বোডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দুই বছর আগে। খেমার রুজের শাসনামলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়। এই সময়কালে অনেক পরিবার ভেঙে পড়েছিল। তখন প্রায়শই শিশুদেরকে তাদের মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করে দেয়া হতো।

কারণ খেমার রুজ সরকার চেয়েছিল দেশটির উপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ রাখতে। পোল পট শাসনামলে বুন সেন তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে খেমার রুজের পতন হয়। তখন বুন সেন রাজধানী নম পেনের কুখ্যাত স্টাং মিঞ্চে ময়লার ভাগাড়ের কাছে বসবাস শুরু করেন।

দীর্ঘ দিন তিনি ময়লা ঘেঁটে সময় কাটিয়েছেন। সেখান তিনি পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিষপত্র খুঁজে বের করে বিক্রি করতেন। আর ওই পয়সা দিয়ে আশেপাশের দরিদ্র শিশুদের দেখভাল করতেন।

তবে তার একমাত্র স্বপ্ন ছিলো একদিন নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়া। তার গ্রামের বাড়ি ক্যামপং চাম প্রদেশে, রাজধানী নম পেন থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৯০ মাইল পূর্বে। তবে এতো বয়স হয়ে যাওয়া এবং ভালো করে হাঁটাচলা করতে না পারাসহ নানা কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারছিলেন না বুন সেন।

এখন তারা রাজধানী ঘুরে দেখছেন

তবে তার সহায়তায় এগিয়ে আসে কম্বোডিয়ার চিলড্রেন্স ফান্ড নামের একটি এনজিও। ওই সংস্থাটি ২০০৪ সাল থেকিই বুন সেনকে সহায়তা করে আসছে। এরপর তারা বুন সেনকে তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে শুরু করে। আর তখনই তারা আবিষ্কার করে বুন সেনের বড় বোন এবং ছোট ভাইটি এখনও বেঁচে আছেন । ওই দুই ভাইবোন তাদের গ্রামের বাড়িতেই বাস করছেন।

প্রায় অর্ধ শতাব্দীর পরে, বুন সেন গত সপ্তাহে তার বড় বোন বুন চিয়া এবং ছোট ভাইয়ের সাথে ফের মিলিত হন।

এ প্রসঙ্গে আবেগে আপ্লুত বুন সেন বলেন, ‘আমি অনেক দিন আগে আমার গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিলাম এবং কখনই ফিরে যাইনি। আমি সবসময় ভেবেছিলাম আমার বোন এবং ভাই মারা গেছেন। কিন্তু এত বছর বয়সে এসেও আমি আমার বড় বোনকে জড়িয়ে ধরতে পারছি, এটার অর্থ অপরিসীম। আর আমার ছোট ভাইটি যখন প্রথম আমার হাত ছুঁয়ে দেখে, তখনই আমি কাঁদতে শুরু করি।’

তার বড় বোন বুন চিয়ার স্বামীকেও খেমার রুজরা হত্যা করা করেছিল। ফলে তিনি ১২টি সন্তান নিয়ে বিধবা হয়ে পড়েন। তিনি ভেবেছিলেন তাঁর স্বামীর মতো তার ছোট বোনটিও হয়তো খেমার রুজদের হাতে মারা গিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বুন চিয়া বলেন, ‘পোল পটের হাতে আমাদের ১৩ জন আত্মীয় মারা যান। আমরা ভেবেছিলাম তাদের মধ্যে বুন সেনও ছিল। এরপর কত বছর পেরিয়ে গেছে!’

এখন এই বোনেরা তাদের হারিয়ে যাওয়া সময়গুলো পূরণ করে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এই সপ্তাহে তারা একসঙ্গে রাজধানী নমপেন সফরে গিয়েছেন।

ছোট বোনকে কাছে পেয়ে বুন চিয়া বলেন, ‘আমরা ওকে নিয়ে অনেক কথা বলেছি। তবে আমি কখনই ভাবিনি যে আমরা আবার তার দেখা পাবো।’

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত