ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

পাপিয়ার উত্থান-পতন (ছবিসহ)

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:১৮  
আপডেট :
 ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২১:৩৪

পাপিয়ার উত্থান-পতন (ছবিসহ)

রাজধানীর অভিজাত হোটেলগুলোয় সুন্দরী তরুণী সরবরাহ করতেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ। এসব হোটেলে প্রায়ই আসর জমাতেন তিনি। পাপিয়ার এই পার্টির একটা বিশেষ নামও ছিল।

‘ককটেল পার্টি’ নামে ওই নাচগানার আসরে মউজ মাস্তিতে মেতে ওঠতেন বড় বড় ব্যবসায়ী, আমলা, প্রশাসনের বড় বড় ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদেরা।

ওই অশ্লীল নাচ-গানের ভিডিও করে রাখা হত সুকৌশলে। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করা হত প্রভাবশালীদের।

এভাবে তাদের কাছ থেকে বড় বড় কাজ বাগিয়ে আনতেন পাপিয়া।

পাপিয়াকে গ্রেপ্তারের পর তার ব্যবহৃত মুঠোফোন ঘেটে বেশ কিছু ভিডিও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

ওইসব ভিডিওর কোনো কোনোটি এরইমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও। যা দেখে সবাই ধিক দিচ্ছেন মুখোশপড়া মানুষগুলোকে।

এ নিয়ে দু’দিন ধরে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এছাড়া ফেসবুকে প্রকাশ্যে যৌন ব্যবসার গ্রুপ ‘এসকর্ট’ থেকেও সুন্দরীদের সংগ্রহ করতেন পাপিয়া। পরে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে অনেককে শয্যাসঙ্গী করতে বাধ্য করতেন। এসব কুকর্মের বেশকিছু ভিডিও এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।

‘ককটেল পার্টি’র আয়োজনে উপস্থিত হতেন সমাজের উচ্চস্তরের লোকজন। পার্টিতে নাচাগানার তালে তালে ভিআইপিদের মদ সরবরাহ করত উঠতি বয়সী সুন্দরী তরুণীরা।

মদের নেশায় টালমাটাল আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কৌশলে ধারণ করা হতো ওই তরুণীদের অশ্লীল ভিডিও।

পরে ওইসব ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন পাপিয়া। বনিবনা না হলেই ফেসবুকে ছড়িয়েও দেয়া হতো।

শামিমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামীকে ১৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। শামিমার স্বামী মফিজুর রহমানও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা।

এই দম্পতিকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র‍্যাব গত ২২শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী এরা আরও দুজন সহযোগী সহ ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তখন তাদের ধরা হয়।

র‍্যাব এই দম্পতিকে আটক করে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করার পর গত কয়েকদিন ধরে পাপিয়াকে নিয়ে আলোচনা থামছেই না। তাদের বিরুদ্ধে যেসব গুরুতর অভিযোগ তুলেছে পুলিশ, তারপর অনেকেই প্রশ্ন করছেন, বাংলাদেশে একটি মফস্বল শহরে আওয়ামী লীগের একটি সহযোগী সংগঠনের নেত্রী কীভাবে ঢাকায় এত প্রভাব-প্রতিপত্তি-অর্থ-বিত্তের মালিক হলেন।

কী অভিযোগ পাপিয়ার বিরুদ্ধে

শামিমা নূর পাপিয়া এবং তার কথিত সহযোগীদের যে দিন আটক করা হয়, তারপর র‍্যাব তাদের হাজির করেছিল গণমাধ্যমের সামনে। তখন তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর সব অভিযোগের কথা জানায় র‍্যাব।

পুলিশ এদের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা দায়ের করে। এর একটি জাল টাকা রাখা অন্য দুটি অস্ত্র ও মাদকের মামলা। এসব মামলায় পুলিশ তাদের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করে।

শুনানির পর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শামিমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামীকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল।

এছাড়া তাদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া সাব্বির খন্দকার ও শেখ তাইয়িবাকে জাল টাকার মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড পেয়েছে পুলিশ।

আদালতে দেয়া আবেদনে বিমানবন্দর থানা পুলিশ বলেছে, ‘আসামিগণ সংঘবদ্ধভাবে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, চোরাচালান ব্যবসা, জাল নোটের ব্যবসা, চাঁদাবাজি, তদবির বাণিজ্য, জায়গা জমির দখল বেদখল ও অনৈতিক ব্যবসা বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অপরাধলব্ধ অর্থ বিত্তের মালিক হয়েছে বলে স্বীকার করে।’

উল্লেখ্য, যেদিন শামিমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়, সেদিনই রাতে ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেল ও নরসিংদীতে তার বাসায় অভিযান চালায় র‍্যাব।

একই সাথে ঢাকায় ইন্দিরা রোডে তাদের দুটি ফ্লাটে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র, বিদেশি মুদ্রাসহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি উদ্ধারের কথা জানিয়েছিলো র‍্যাব।

সংবাদ সম্মেলন করে র‍্যাব-১ এর অধিনায়ক শাফিউল্লাহ বুলবুল দাবি করেছিলেন যে পাঁচ তারা হোটেলে নারীদের দিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতেন যুব মহিলা লীগের এই নেত্রী। তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে তারা বেশ কিছু নারীর ভিডিও ক্লিপ পেয়েছেন যেগুলো নারীর জন্য মর্যাদাকর নয়।

শামিমা নূর পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে উদ্ধৃত করে র‍্যাব বলেছে যে মেয়েদের আপত্তিকর ছবি বিত্তবান ব্যক্তিদের মোবাইল ফোনে পাঠাতেন তিনি এবং এরপর বিত্তবান কেউ আগ্রহী হয়ে এলে তাকে জিম্মি করা হতো।

র‍্যাব আরো বলছে সমাজসেবার নামে নিজ এলাকায় নরসিংদীর অসহায় নারীদের সহযোগিতার নামে নিয়ে এসে অনৈতিক কাজে তিনি ব্যবহার করতেন।

র‍্যাবের গোয়েন্দা এবং মিডিয়া শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল সারওয়ার বিন কাশেমি বলছেন, শামিমা নূর পাপিয়া ছিলেন মূলত একজন মধ্যস্থতাকারী বা দালাল।

নারীদের দিয়ে দেহব্যবসা করানো, মানুষের জমি ছাড়িয়ে দেয়া, মানুষের জমি দখল করে দেয়া, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি এসবের সঙ্গে জড়িত ছিল তিনি। বড় একটি পাঁচতারা হোটেলে রুম বুক করে নারীদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজে ব্যবহার করতো।

পুলিশের পক্ষ থেকে আনা এসব অভিযোগের ব্যাপারে শামিমা নূর পাপিয়া, তার স্বামী বা অন্যদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী আসামীপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে রিমান্ডের বিরোধিতা করার সময় এসব অভিযোগকে ‘সাজানো নাটক’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ক্ষমতাসীনদের মধ্যে অস্বস্তি

শামিমা নূর পাপিয়াকে নিয়ে নানা খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং এবং আওয়ামী যুব মহিলা লীগ বেশ বিব্রতকর অবস্থায় আছে।

বিশেষ করে পাপিয়ার সঙ্গে সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং মন্ত্রীদের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়ার পর এটি তাদের মধ্যে বিরাট অস্বস্তি তৈরি করে।

নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যুব মহিলা লীগ এরই মধ্যে শামিমা নূর পাপিয়াকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে।

নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম দাবি করছেন, পাপিয়াকে যখন সংগঠনে পদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয় তখন তিনিই এর বিরোধিতা করেছিলেন। ‘কারা চাপ দিয়ে তাকে দলে পদ দিল, সেটা আমারও প্রশ্ন’, বলছেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে অব্যাহত সমালোচনার মুখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার মন্তব্য করেন যে, এ ধরণের কাজের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্সের নীতি নিয়েছে বলেই এই অভিযান চালানো হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ‘অন্যায় যারাই করবে, অপকর্ম যারাই করবে, তাদের পরিচয় যেটাই হোক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বাংলাদেশ জার্নাল/এইচকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত