ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

র‌্যাবের ক্রমাগত অভিযানে দিশেহারা জুয়াড়িরা

  আহমেদ ইসমাম

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২০, ২১:০০

র‌্যাবের ক্রমাগত অভিযানে দিশেহারা জুয়াড়িরা

শুধু নামেই ছিল ক্লাব। নেই কোনো খেলার সামগ্রী। কোনো খেলোয়াড়ের দেখাও মেলেনি। তবে পাওয়া গিয়েছিল মদ, মাদক, জুয়ার সামগ্রী। প্রতিটি ক্লাবেই ছিল একাধিক বিশেষ কক্ষ। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা মদ পান করতেন, উচ্চমূল্যে জুয়া খেলতেন।

দীর্ঘদিন ধরেই চলেছে এই অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাজধানীতে এমন বেশকটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয় র‌্যাব।

এর পরে গত পাঁচ মাসে একে একে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে থাকে। এই অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা ঘিরে যে এক শ্রেণির মানুষ অবৈধ টাকার পাহাড় গড়েছিল সেটা আগে থেকেই আঁচ করা যাচ্ছিল। এর পরে আইনশৃংখলা বাহিনী মাঠে সক্রিয় থাকলেও র‌্যাব ছাড়া অন্য কোনো বাহিনী তেমন জোরালো ভূমিকা রাখতে পারেনি। রাজধানীর বিলাসবহুল এলাকা থেকে পুরান ঢাকার সুরু গলিতেও লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ক্যাসিনোর অবৈধ টাকা।

র‌্যাব বলছে তাদের গোয়েন্দা বাহিনীর সক্রিয়তায় সঠিক সময়ে সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানগুলো সফল হয়েছে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত র‌্যাব ১০ জন উল্লেখযােগ্য ব্যক্তিসহ ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া ক্যাসিনােতে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২০৪ জনকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ পর্যন্ত র‌্যাব দেশি বিদেশি মুদ্রাসহ প্রায় ৯ কোটি ১০ লাখ নগদ টাকা জব্দ করেছে। এছাড়া আরো উদ্ধার হয়েছে ১৯২ কোটি ৮২ লাখ টাকা এফডিআর, ১৪০টি বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই এবং ১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক এবং ৯ কেজি অলংকার, যার আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা উদ্ধার করা হয় জিকে শামীমের কার্যালয় থেকে। তার কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নগদ ১ কোটি ৮০ টাকা, ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) ও ৭টি শটগান, বিদেশি মুদ্রা ও মাদক উদ্ধার করা হয়েছিল।

ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রূপন ভূইয়ার ওয়ারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর এই দুই ভাইয়ের বাড়ির সিন্দুক থেকে নগদ ১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা, ৭৩০ ভরি সোনার গয়নাসহ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় সাতটি মামলা হয়। গত ১৩ জানুয়ারি সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে এনু ও রূপন এবং তাদের সহযোগী সানিকে ৪০ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

এরমধ্যেই গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি দুপুর পর্য‌ন্ত এই দুই ভাইয়ের পুরান ঢাকার ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের ১১৯/১ মমতাজ ভিলায় অভিযান চালায় র‌্যাব-৩। এসময় র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমও উপস্থিত ছিলেন। বাসা থেকে নগদ ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এর বাইরে ১ কেজি সোনা, ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে। এছাড়া ৯ হাজার ৩০০ ইউএস ডলার, ১৭৪ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ১০৯৫ চাইনিজ রেনমিনবি, ৫৩৫০ ভারতীয় রুপি, ১৫৬০ থাই বাথ ও ১০০ দিরহাম আরব আমিরাতের মুদ্রা উদ্ধার করা হয়।

মহিলা যুবলীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার বাসা থেকে অস্ত্র, মদসহ বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকা উদ্ধার করে র‍্যাব।

র‍্যাব জানায় শামীমা নূরের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি নেই। ইন্দিরা রোডের ফ্ল্যাট থেকে র‍্যাব ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে। এর বাইরেও উদ্ধার হয়েছে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি পিস্তলের ম্যাগাজিন, পিস্তলের ২০টি গুলি, পাঁচ বোতল দামি বিদেশি মদ, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেকবই, কিছু বিদেশি মুদ্রা, বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি ভিসা ও এটিএম কার্ড।

প্রায় দুইশ দশ কোটি টাকা উদ্ধার করে র‍্যাব নিকটস্থ থানার মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব খাতে জমা দিয়েছে। এই বিপুল পরিমাণ টাকার সন্ধান শুধু র‍্যাব পায়, অন্যরা পায় না কেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরাও মাঠে কাজ করছি। তারাও করছে। গতবছর ৬০৯ কোটি টাকা উদ্ধার করে রাজস্ব খাতে জমা দিয়েছি। আমরাও যেমন কাজ করছি র‍্যাবও তাদের মত কাজ করছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত