ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

মন সে এক জটিলতম সমীকরণ

  ফজলুল পলাশ

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২০, ১৭:৫৯

মন সে এক জটিলতম সমীকরণ

সুশান্ত সিং রাজপুত। এই নামটি আজ ফেসবুকের পেইজ জুড়ে। তবে যাকে নিয়ে এতো লেখা, হাজার হাজার শেয়ার, শুধু সে দেখছে না। অবশ্য বেঁচে থাকতে এমন ফলোয়ার বা ভক্তদের দৃশ্য তার পরিচিত। Instagram এ তাঁর ফলোয়ার ১০ লাখের উপরে।

গত দুইমাস আগে তার একটা মুভি দেখেছিলাম #Chhichhore( ছিঁচোরে) মুভিতে নিজের ছেলেকে আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর অবস্থা থেকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়া বাবা আজ নিজেই আত্মহত্যা করে বসলেন।

আসলে সবকিছুর মূলে আছে মন নামের ছোট্ট একটি অংশের ভূমিকা। মস্তিষ্কের কোন এক ছোট্ট কোণে বসে রক্ত মাংসের শক্তিশালী যোদ্ধাদের সে সহজেই কুপোকাত করে ফেলতে পারে।

আমরা প্রত্যেকেই ডিপ্রেশনে ভোগী। নিউজ পড়ে যতটা জেনেছি সুশান্ত সিং রাজপুত নিজেও ছিলেন ডিপ্রেশনের শিকার। গত ছয়মাসেরও অধিক সময় ধরে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে ছিলেন এই তারকা। প্রায় তিনমাস ছিলেন গৃহবন্দী। অবশ্য করোনা মহামারীর কারণে এখন পুরো পৃথিবী গৃহবন্দী। মেনে নিলাম তার এ গৃহবন্দী হওয়াটা ততটা জটিল কিছু ছিলো না। তাহলে মাত্র ৩৪+ বছর বয়সে তারকা খ্যাতি পাওয়া এ সুন্দর হাসির আড়ালে দুঃখ গোপন করা মানুষটা কতোটা অসহায় ছিল?

আমরা সবাই কমবেশি ডিপ্রেশনে ভোগী। সুখ, দুঃখ ও ভালোবাসার আবেগ সবার মাঝেই আছে। আমার এক বন্ধু’র (রাসেল) সঙ্গে মেসে থাকতাম। রাসেলকে মাঝে মাঝে বলতাম চল মিষ্টি খাই ও প্রথম দিন আমাকে বললো কোন গুড নিউজ বললাম না, ‘আমার মন খারাপ’। এরপর একদিন সে আমাকে বললো দোস্ত চল মিষ্টি খাই আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কি মন খারাপ?

হেসে উত্তর দিয়ে বললো, চল মিষ্টি খাই।

আমার বিশ্বাস রাসেল এখনও মন খারাপ হলে মিষ্টি খায়। কারণ আমি এখনও খুব বেশি মন খারাপ হলে মিষ্টি খাই।

আসলে মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় গ্রহণের কারণ একটা হতে পারে, তবে জীবনকে আলিঙ্গন করবার হাজারো উপকরণ চারপাশে ছড়িয়ে আছে।

একটা নীল আকাশ!

কিছুটা আলোছায়া!

কোন নিঃসঙ্গ পাখির ডাক!

এক জোড়া,কদম!

এক পশলা বৃষ্টি!

হাসনুহানা, কাঠগোলাপ কিংবা ছাতিমের কড়া ঘ্রাণ!

একপ্লেট ফুচকা কিংবা চটপটি!

একটা গলতে থাকা আইসক্রিম!

হটডগ,পিৎজা অথবা একটা পছন্দসই বার্গার!

এক কাপ চা,হয়তো পোড়া গন্ধে উড়তে থাকা ধোঁয়ায় মাখানো এক কাপ কফি।

মৃদু কিংবা জোরে আওয়াজ তুলে বাজতে থাকা গান!

একজোড়া ডাগর চোখ।

মুঘ জড়ানো কারো মায়াময়,মুখশ্রী।

একটা ভালো কবিতা কিংবা গল্প।

বন্ধুর সাথে গালাগালিতে মেতে উঠা।

ভালোবাসার মানুষটা কাছে থেকে পাওয়া মূল্যবান স্মৃতি। বাবা-মা,ভাই,বোন,পরিচিত জনদের ভালোবাসা।

অসহায়,দরিদ্র সম্বলহীনের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যোগানে।

সবকিছুই হয়ে উঠতে পারে, ভয়ংকর এই ডিপ্রেশন থেকে বেঁচে থাকবার বড় বড় উপকরণ। শুধু আমাদের প্রয়োজন প্রতিদিন বেঁচে থাকবার নতুন কোন মানে, কোন অবলম্বন খুঁজে বের করা।

কথা সাহিত্যিক, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের একটা লেখা পড়েছিলাম, ‘মানুষ কি চায়-উন্নতি, না আনন্দ? উন্নতি করিয়া কি হইবে যদি তাহাতে আনন্দ না থাকে। আমি এমন কত লোকের কথা জানি, যাহারা জীবনে উন্নতি করিয়াছে বটে, কিন্তু আনন্দকে হারিয়েছে।’

তাঁর এ লেখাটা ভীষণ রকম সত্য। বেঁচে থাকতে হলে আমাদের জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে হবে। জীবনের মানে খুঁজে নিতে হবে,বাঁচতে হবে নিজের জন্য, প্রিয়জনদের জন্য।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত