ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

একটি ধারণাপত্র

অঞ্চলভেদে করোনার সংক্রমণ ও ক্ষতি পর্যালোচনা

  ড. আবু মোহাম্মদ আজমল মোর্শেদ

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২০, ২০:৪৯

অঞ্চলভেদে করোনার সংক্রমণ ও ক্ষতি পর্যালোচনা

নোভেল করোনাভাইরাসের (SARS-CoV-2) দেশ ও ভৌগলিক অবস্থানভেদে আচরণ ও ক্ষতির সক্ষমতার ভিন্নতা বর্তমানে একটি প্রমাণিত সত্য। সেই ভিন্নতার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে সারাবিশ্বের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ, গবেষক, চিকিৎসকরা আজ দিশেহারা। কোনো নির্দিষ্ট আবহাওয়া অঞ্চলে করোনাভাইরাস (Covid-19) সংক্রমণ দ্রুততার উপর সেই অঞ্চলে SARS-CoV-2 এর অবস্থান সময়কাল ও পোষকদেহ ক্ষতির ব্যাপকতা নির্ভরশীল বলে আমার ধারণা।

কোনো নির্দিষ্ট আবহাওয়া অঞ্চলে SARS-CoV-2 পোষক দেহে প্রথম সংক্রমণের পর হতে ব্যাপক কমিউনিটি সংক্রমণে যত বেশি সময় লাগবে SARS-CoV-2 সে অঞ্চলে ততই বেশি সময়কাল ধরে অবস্থান করার সম্ভাবনা বলে আমি মনে করছি। অন্যপক্ষে SARS-CoV-2 কোন অঞ্চলে ব্যপক কমিউনিটি সংক্রমন যত দেরিতে হবে সে অঞ্চলে SARS-CoV-2 পোষকদেহর ক্ষতিকরার সক্ষমতা ততই কমতে থাকবে বলেও আমি মনে করছি।

SARS-CoV-2(Covid-19) চীনের উহান হতে বিস্তার আরম্ভ হলেও তা আজ সারা বিশ্বেরই সকল অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র মহাবিশ্বে সকল মানুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও প্রণনাশের ভীতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। SARS-CoV-2 এর নির্দিষ্ট আবহাওয়া অঞ্চলে সম্ভাব্য অবস্থান সময়কাল, বিস্তারের ব্যপকতা ও ক্ষতির ভয়াবহতা বা প্রণহানির ভিন্নতা নিয়ে দেশে-বিদেশে যে সকল দ্বিধা-দ্বন্দ তৈরী হয়েছে সে সকল ধূম্রজালের আবসান হতে পারে আমার এই প্রকাশিত ধারণা হতে। করোনাভাইরাসের(Covid-19) ভিন্ন ভিন্ন আবহাওয়া অঞ্চলে বিস্তার ব্যাপকতা ও ক্ষতির ব্যাপকতার উপর আমার পর্যবেক্ষণলব্ধ কিছু ধারণা এই আর্টিকেলে প্রকাশ করছি। আমার বিশ্বাস এই আর্টিকেলটি করোনাভীত মানুষের মধ্যে নোবেল SARS-CoV-2 এর বিস্তার ও ক্ষতির সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণার মাধ্যমে SARS-CoV-2এর ভীতি কমবে বলে আমি আশাবাদী।

প্রথমে আসি SARS-CoV-2 এর আঞ্চলিক অবস্থান সময় সম্পর্কে: করোনাভাইরাস জিনের গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে আচরণ ভিন্নতা এনে কোন ভিন্ন আবহাওয়া অঞ্চলে টিকে থাকার উপযোগীতা তৈরী করে। প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে ভাইরাসের সংক্রমণের দ্রুততা ও পোষকদেহের ক্ষতির সক্ষমতা। তাই করোনাভাইরাসের কোনো অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার সম্পূর্ণ নির্ভর করে সেই আবহাওয়া অঞ্চলে কতদিনে বা কতটি প্রজন্মের পরিবর্তন করে টিকেথাকার পুর্ণান্গ উপযোগিতা তৈরী করে। জীনের গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে আচরণ ভিন্নতা আনা করোনাভাইরাসের জন্য নুতন আবহাওয়া অঞ্চলে একটি চ্যালেঞ্জ। যা সময় সাপেক্ষ। তাছাড়াও পোষক প্রতুলতার বিষয়টি ও জড়িত।

SARS-CoV-2 উৎপত্তি ও বিস্তার যেহেতু শীতল অঞ্চল হতে তাই তাদের জন্মগত স্বাভাবিক অভ্যাস শীতপ্রধান অঞ্চলে বসবাস ও বিস্তার উপযোগিতাই আধিক বলে আমি মনে করি । SARS-CoV-2 এর সংক্রমণ যখনি অপর কোনো শীতপ্রধান অঞ্চলে হয়েছে সেখানে তাদের প্রভাব বিস্তারে শুধু একটা চ্যালেঞ্জ পেরুতে হয়েছে তা হল পোষক প্রাপ্তি। তাই শীতপ্রধান অঞ্চল বা দেশগুলোতে করোনাভাইরাস তুলনামূলক কম সময়ের মধ্যেই ব্যাপক সংক্রমণের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, বা রাশিয়া সংলগ্ন শীতপ্রধান অঞ্চলসমুহে SARS-CoV-2 দ্রুত সংক্রমিত হয়েছে। কিন্তু যখনই শীতল অঞ্চলের বসবাস উপযোগী SARS-CoV-2 উষ্ণ বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে যেমন - আরব দেশসমূহ, আফ্রিকা, পূর্ব এশিয়া বা দক্ষিণ এশিয়া, ল্যাটিন ও মধ্যে আমেরিকার দেশগুলোতে বাহিত হয়েছে তখনই তাদের টিকে থাকার জন্য প্রাথমিক দুটি বড় চ্যালেঞ্জ পার করতে হয়েছে।

প্রথমত -পোষকদেহ প্রাপ্তি ও অন্যটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের ছিল উষ্ণ বা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বসবাস উপযোগীতা তৈরী করা। যা করতে করোনাভাইরাসে অধিকবার জিনের গঠন পরিবর্তন করে বেশ কয়েকটি প্রজন্ম পার করে সেই অঞ্চলে বসবাস উপযোগীতা প্রাপ্ত হতে হয়েছে। যা ছিল সময় সাপেক্ষ। হয়ত সেই জন্যই করোনাভাইরাস শীতল অঞ্চলের চেয়ে নাতিশীতোষ্ণ বা উষ্ণ অঞ্চলে পাথমিক বিস্তার ধীর বলে পযর্বেক্ষিত হয়েছে।

কোনো নিদিষ্ট আবহাওয়া অঞ্চলে SARS-CoV-2 অবস্তানের সময়কাল সে আঞ্চলে বিস্তার সময়কালের উপরে নির্ভরশীল বলে আমি মনে করি। যে অঞ্চলে যত তাড়াতাড়ি SARS-CoV-2 বিস্তার লাভ করবে সে অঞ্চলে করোনাভাইরাস তত তাড়াতারি আধিক সংখ্যক প্রজন্ম চক্র সমাপ্ত করে। কোন অঞ্চলে প্রথম সক্রমনকারী SARS-CoV-2 কোষবিভাজনের মাধ্যমে যতবেশি প্রজন্ম পর্ব পার করবে করোনাভাইরাসের সংক্রম ও পোশাকের ক্ষতির শক্তিমাত্র ততই দুর্বল বা নিঃশেষ হতে থাকে বলে আমি ধারণা পোষণ করছি।

দ্বিতীয়ত, পোষকদেহ ক্ষতিকরার সক্ষমতা: বিস্তার সময়ের সাথে ক্ষতিকরার সক্ষমতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে আমি মনে করি। আমার ধারণামতে SARS-CoV-2 কোন নুতন আবহাওয়া আঞ্চলে টিকেথাকার উপযোগী প্রাপ্তহতে যত বেশিবার জিনগত পুনর্গঠনের প্রয়োজন হবে ততই পরবর্তী প্রজন্মের ভাইরাসের মাধ্যমে পোষক ক্ষতির সক্ষমতা কমতে থাকবে। সংখেপে বলা যায় করোনাভাইরাস কোন নুতন আবহাওয়া অঞ্চলে পোষাক আক্রান্তের প্রথম দিনহতে টিকেথাকার অভ্যাস প্রাপ্ত হয়ে ব্যাপক পোষক সংক্রমনের সক্ষমতা অর্জনে যত বেশিদিন সময় লাগবে ততই পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যদের ক্ষতিকারক সক্ষমতা কমে আসবে। উপরোক্ত কারণে মুলত ভিন্ন আবহাওয়া অঞ্চলে যেমন আরব দেশসমূহ ,আফ্রিকা, পুর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার, মধ্যে ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে বিস্তার লাভকরা SARS-CoV-2 বেশী সময়কালধরে অবস্তান করবে বলে আমার ধারণা। অন্যপক্ষে SARS-CoV-2 ভয়াবহতা বা ক্ষতিকর প্রভাব কমহতে থাকবে বলেও আমি ধারণা পোষণ করছি।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে, যদি কোনো আবহাওয়া অঞ্চলে SARS-CoV-2 সে অঞ্চলে সক্রমনের এক বছর সময়কাল আবর্তন করে পরিবির্তত আবহাওয়া সময়গুলোতে টিকেথেকে আবার সেই অঞ্চলের প্রথম সক্রমন কালীল আবহাওয়া সময়কালে যদি ফিরে আসে তাহলে দিতীয় দফায় একই অঞ্চলের SARS-CoV- 2 সক্রমনের ভয়াবহতা প্রথবারের ছেয়েও বেশি হতে পারে।

উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমি আমার মন্তব্য হিসেবে বলতে চাই যে- প্রথম প্রজন্মের SARS-CoV-2 মাধ্যমে আক্রান্ত দেশসমূহে(চীন, ইউরোপীয় দেশসমূহ, যুক্তরাষ্ট্রের ও শীতপ্রধান কানাডার অঞ্চলসমুহ) তুলনামূলকভাবে SARS-CoV-2 পরবর্তী প্রজন্মের মাধ্যমে বিস্তারকৃত অঞ্চললসমূহে(আরব দেশসমূহ ,আফ্রিকা,পুর্ব এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়ার, মধ্যে ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে) এই ভাইরাসের অবস্তানকাল দীর্ঘায়িত হতে পারে । কিন্তু যতই ভাইরাস তার পরবর্তী প্রজন্মের মাধ্যমে সক্রমন ছড়াবে সেক্ষেত্রে সংক্রমিত পোশকের ক্ষতির সম্ভাবনা কম হবে বলে আমি মনেকরি।

এই প্রকাশনা একান্তই আমার ব্যক্তিগত আভিমত ও ধারণা যা কোনপ্রকার ক্ষতিকর নয় বলে আমি মনে করি। যেহেতু এই ধারণা গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত নয় তাই এই প্রকাশনা কোন প্রকার রেফারেন্স বা পরামর্শ হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। পরিশেষে সকালের প্রতি আহবান ঘরে থাকুন আর নিরাপদ থাকুন।

[এই ধারণাপত্রের সব বক্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব অভিমত। কোনো মন্তব্যের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)

  • সর্বশেষ
  • পঠিত