ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

৪০ বছর পর যেভাবে স্বজনদের খোঁজ পেলেন বৃদ্ধা

৪০ বছর পর যেভাবে স্বজনদের খোঁজ পেলেন বৃদ্ধা
প্রতীকী ছবি

একদিন বা দুদিন নয়। জীবনের ৪০টি বছর কেটেছে তার অন্যের বাড়িতে। দীর্ঘ ৪০ বছর পর অবশেষে খুঁজে পেলেন স্বজনদের এবং ফিরলেন নিজের ঘরে। এটা সম্ভব হয়েছে গুগল ও হোয়াটসঅ্যাপের কল্যাণে।

৯৩ বছর বয়সী ওই বৃদ্ধার নাম পঞ্চুবাই। তার বাড়ি বাড়ি ভারতের মধ্য প্রদেশে। তিনি সেখান থেকেই নিখোঁজ হন ১৯৭৯-৮০ সালের দিকে।

পথ হারিয়ে তিনি মধ্যপ্রদেশের দামোশ জেলার রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এসময় এক ট্রাকচালক তাকে উদ্ধার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। ওই লোকের বাড়ি ছিল উত্তর প্রদেশ। ফলে এরপর থেকে সেখানেই থাকতে থাকেন পঞ্চুবাই, তাদের পরিবারের একজন হয়ে।

সেই ট্রাকচালকের ছেলে ইসরার খান বলেন, 'অচ্চন মৌসিকে (পঞ্চুবাই) মৌমাছি কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না। বাবা ঘরে নিয়ে এলেন।’

তারা তাকে ওই নামেই ডাকতেন। তার আসল নামটা অনেক দিন অজানাই ছিল। কারণ, তিনি মানসিক ভাবে সুস্থ না থাকায় নিজের নাম ও ঠিকানা বলতে পারেননি। তাছাড়া কেউ তার নাম নিয়ে মাথাও ঘামাননি। ইসরার তখন দুধের শিশু।অচ্চন মৌসি স্নেহ-ভালোবাসায় ইসারারকে বড় করে তোলে।

ওই পরিবারে ঠাঁই পেলেও ভাষার একটা দূরত্ব চার দশক পরেও ছিল। মাসি বলেন মারাঠি। ইসরারের পরিবারের কেউ সে-ভাষা বোঝে না। ভাঙা ভাঙা কয়েক'টা শব্দ ছাড়া।

ইসরার জানান, ‘বড় হয়ে মাঝেমাঝেই আমি তার কাছে পরিবারের কথা জানতে চাইতাম। কিন্তু, কিছুই বলতেন না।’

তিনি ফেসবুকেও লিখেছিলেন তার অচ্চন মৌসির কথা, ছবিও দিয়েছিলেন। তার বাড়ির খোঁজ পাওয়াই উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু এতে কোনও কাজ হয়নি। আরও অনেক পোস্টের ভিড়ে হারিয়ে যায় তার পোস্টটি।

একদিন ইসরার তার মাসিরমুখে শুনেছিলেন, 'খানজম নগর'। এই এলাকার নামটি গুগলে সার্চ দিয়ে হতাশ হন। করোনা লকডাউনে ঘরে থাকায়, ইদানীং একটু বেশিই সময় দিচ্ছিলেন মাসিকে। গত ৪ মে মাসির সঙ্গে গল্প করছিলেন ইসরা। এবার বৃদ্ধা জানান, তার বাড়ি পরশপুর। গুগলে সার্চ করতেই বেরিয়ে এল মহারাষ্ট্রের এক অঞ্চল। তিন দিনের মধ্যে যোগাযোগ হল অভিষেকের সঙ্গে। পরশপুরে একটা দোকান রয়েছে অভিষেকের। ইসরার তাকে জানালেন বৃদ্ধার কথা।

অভিষেকও কিরার গোষ্ঠীর। অভিষেকের কাছেই জানতে পারেন খানজমা নামে এক গ্রাম সেখানে রয়েছে। এতে আরও উত্‍‌সাহী হয়ে পড়েন ইসরার। ৭ মে রাতে অভিষেককে মাসির একটি ভিডিয়ো পাঠিয়েছিলেন ইসরার। অভিষেক কিরার গোষ্ঠীর মধ্যে ভিডিয়োটি শেয়ার করেন।

ওই ভিডিও দেখে পৃথ্বী ভাইয়ালাল সিঙ্গানে চিনতে পারেন তার দাদিকে। এরপরই পঞ্চুবাইকে বাড়ি ফেরাতে উদগ্রীব হন নাতি। কিন্তু, লকডাউন বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

শেষ পর্যন্ত ১৭ জুন দাদিকে মধ্যপ্রদেশ থেকে নাগপুরে নিয়ে আসেন নাতি। জানান তার দাদির পুরো নাম পঞ্চফুলাবাই তেজপালসিং সিঙ্গানে।

পৃথ্বী ভাইয়ালাল জানান, মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলার অচলপুর তহশিলের খানজমা নগর ছেড়ে পাঁচ দশক আগেই নাগপুরে চলে এসেছেন।

তিনি আরও জানান, নাগপুরে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিত্‍‌সা চলছিল পঞ্চুবাইয়ের। এক সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। এরপর আর তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। খোঁজ মিললো ৪০ বছর পর। তবে এতদিন পর দাদিকে ফিরে পাওয়ার পরও একটাই দুঃখ। তার বাবা আর নিজের মাকে দেখে যেতে পারলেন না।

ঠাকুমার বয়সের হিসেব নাতিই দিয়েছেন। এই তিরানব্বইয়েও ঠাকুমাকে শারীরিক ভাবে এমন সুস্থ দেখে আপ্লুত নাতি। খান পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে কার্পণ্য করেননি। নাতিরও একটাই আক্ষেপ, বাবা আর ঠাকুমা দেখে যেতে পারলেন না!

সূত্র: এই সময়

এমএ/

  • সর্বশেষ
  • পঠিত