ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাথমিক শিক্ষকদের খোলা চিঠি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২০, ১৩:০৬  
আপডেট :
 ৩০ আগস্ট ২০২০, ১৬:৪৪

প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাথমিক শিক্ষকদের খোলা চিঠি

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রথম দাবিই ছিল সকল রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলোকে জাতীয়করণ করা।

১৯৭৩ সালের ধারাবাহিকতায় ২০১৩ তে এসে জাতীয়করণ করলেন বঙ্গবন্ধুর রক্ত সফল প্রধানমন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কিন্তু জাতীয়করণ করার পরেও নব জাতীয়করণকৃত শিক্ষকেরা যে সুযোগ ও সুবিধা পেয়েছেন তাতে সরকারি শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের আপত্তি নেই, থাকারও কথা না। হিংসেও নেই।

তাই বলে নতুন সমিতি করে হাজার হাজার মেধাবী তরুণ শিক্ষকদের অধিকার বঞ্চিত করবে, লাখ লাখ বেকারদের চোখে অশ্রু ফেলবে, বেকার ছেলেমেয়েদের বেকারত্ব দেখে বৃদ্ধ বাবা-মা ঘরে বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদবে, কোটি কোটি শিশু শিক্ষার্থীদের তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে,সরকারি চলমান আইনে অশ্রদ্ধা করে অবৈধভাবে দাবি আদায়ের নামে প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষামানের বিঘ্নিত ঘটাবে এটা তো হতে পারে না!

তারা যদি আইনের মাধ্যমে তাদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়,বাঁধা নেই। কিন্তু আপত্তি আছে সেখানেই যেখানে তদের অধিকার আদায় করতে এসে সরকারি বিধিমালা অনুসরণ করে শিক্ষকতা পেশায় এসে অধিকার বঞ্চিত হবে এটা হতে পারে না। হতে দেওয়াও যাবে না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,

যথাযথ সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখেই আপনার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যে, নব জাতীয় করণ শিক্ষক ও শিক্ষক নেতাদের শত শত মামলায় জর্জরিত হয়ে প্রাথমিক অধিদপ্তর বেশ নুইয়ে পড়েছে। তাদের নীতি বহির্ভূত দাবির নামে উচ্চ আদালতে রিট করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সকল কার্যক্রম স্থবির করে ফেলেছে। যেমন পুল ও প্যানেল শিক্ষকদের মামলার কারণে ২০১৪ পর থেকে কোন শিক্ষক নিয়োগ হয়নি, নীতিবহির্ভূতভাবে গ্রেডেশনে জৈষ্ঠ্য তালিকায় নাম লিখাতে একের পর এক পরাজিত হয়েও পুনরায় একই রিট করে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি বন্ধ করে রেখেছে।

কারণ মামলা যখন করা হয় তখন ওই বিষয়ের কার্যক্রম স্থগিত রাখার ঘোষণা দেন মাননীয় বিচারপতি। যতক্ষণ না পর্যন্ত মামলার রায় না হবে ততদিন পর্যন্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত থাকে।

আর এক একটা মামলা বছরের পর বছর চলতে থাকায় শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে হাজার হাজার শিক্ষক পদোন্নতির যোগ্য হয়েও, না পেয়ে চাকরি থেকে অবসরে যাচ্ছে। লাখ লাখ মেধাবী বেকার যুবক সময় মতো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না পেয়ে দরখাস্ত করা সময় পার হয়ে যাচ্ছে, ফলে স্থায়ী বেকারত্ব জীবন কাটাতে হচ্ছে। নিয়মিত পদোন্নতি ও নিয়োগ না হওয়ার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক স্বল্পতা আছে ও হচ্ছে। পদোন্নতি না থাকায় প্রধান শিক্ষকের পদ ফাঁকা হওয়ায় একই প্রতিষ্ঠানের অনভিজ্ঞ জুনিয়র শিক্ষক দ্বারা ভারপ্রাপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রধান শিক্ষকের পদ সঠিক ভাবে পালন হচ্ছে না, অন্য দিকে সে সহকারী শিক্ষক হিসেবেও সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।

ইত্যাদি সমস্যার একমাত্র কারণই হচ্ছে উচ্চ আদালতে রিট। যেহেতু সরকারি সকল কর্মকর্তা সৎ নয়, সেহেতু কিছু অসৎ কর্মকর্তাকে অসৎ উপায়ে পক্ষে নিয়ে ক্ষমতার অপব্যাবহার করে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে চরম হুমকির মুখে ফেলেছে।

আপনার সমীপে সদয়ভাবে স্মরণ করাচ্ছি যে, রেজিষ্ট্রেশনকৃত বিদ্যালয় জাতীয় করণের দিন থেকে তাদের সমিতিও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল। তথাপি উনারা আলাদা সমিতির নামে একের পর এক মামলা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তারা মামলায় রায় নিয়ে তাদের প্রাপ্য সুবিধা নেবে এতে আমাদের আপত্তি নাই, শুধু আপনার কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, মামলার কারণে যেন নিয়োগ, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান থাকে। এতে সকলেই তার অধিকার প্রাপ্য হবেন যেমন- মামলার কারণে পরিকল্পিত কার্যক্রম বিঘ্নিতও হবে না। সময়ে সবাই অধিকার প্রাপ্য হবেন। বর্তমানে চলতি দায়িত্ব হিসেবে প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দিলেও মামলার কারণে অনেক বিদ্যালয়ে তা সম্ভব হয় নাই, শুধুমাত্র মামলার রায়ের সময় গুনতে পর্বের জন অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব চালাচ্ছেন পক্ষান্তরে বৈধভাবে যিনি প্রাপ্য হবে তিনি হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন।

মানুষের কল্যাণের জন্য আইনের সৃষ্টি, কোন আই যদি মুষ্টিমেয় কয়েক জনের জন্য স্বার্থ বয়ে আনলেও, সমষ্টিগত ভাবে হাজার হাজার জনে অকল্যাণ বয়ে আনে তাও নিশ্চয়ই দেশের কোন দপ্তরের জন্য কল্যাণ হতে পারে না।

উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আপনি সদয় বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন ও নিতে সদয় মর্জি কামনা করছি।

বিনীত

টি এম জাকির হোসেন

সহকারী শিক্ষক

আউয়াল গাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

আক্কেলপুর, জয়পুরহাট।

সদস্য, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত