বিকাশ প্রতারকদের ভয়ঙ্কর কৌশল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:২২
বিকাশ হ্যাকার চক্রের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার রাজধানীসহ ফরিদপুরের মধুখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, মো রানা খান, মো লিটন, মো. নয়ন শেখ, মো. টিটু মোল্লা, সালমান মোল্লা, আকাশ শেখ, মোয়াজ্জেম হোসেন, মো. রহিম ও তানজিল।
এসময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ২টি আইফোনসহ ১০টি মোবাইল ফোন, ৩৭টি সিম ও ১টি প্রোভক্স গাড়ি উদ্ধার করা হয়।
বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার।
সংবাদ সম্মলনে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজন বিভিন্ন বিকাশের দোকানে ক্যাশ ইন রেজিস্ট্রারের নম্বর লেখা পাতাটির ছবি সু-কৌশলে তুলতেন। এরপর হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ফরিদপুরের মধুখালী থানার ডুমাইন গ্রামে থাকা মূল হ্যাকারদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। নম্বর লেখা প্রতিটি পাতা ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতেন। মূল হ্যাকাররা ছবির নম্বর দেখে বিকাশের দোকানদার সেজে ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন অপারেটরের সিম থেকে কল দিতেন এবং বলতেন তার দোকান থেকে ভুলে কিছু টাকা ভুক্তভোগীর নম্বরে চলে গেছে।
তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগীর একাউন্টটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং বিকাশ অফিস থেকে তাকে কল দেয়া হবে। একটু পর মূল হ্যাকার বিশেষ অ্যাপ ব্যাবহার করে বিকাশ অফিসের নাম করে বিকাশ সেন্টারের মূল নম্বরের সদৃশ্য নম্বর থেকে ভুক্তভোগীকে কল দিতেন। ভুক্তভোগীর নম্বরে তখন +০১৬২৪৭ থেকে কল আসে। কলসেন্টারের উক্ত ব্যক্তি ভুক্তভোগীর নম্বরে একটি OTP (one time password) পাঠায় এবং কৌশলে প্রেরিত OTP ভুক্তভোগীর কাছ থেকে জানতে চায়। ভুক্তভোগী প্রতারিত হয়ে তার কাছে পাঠানো OTP এবং PIN নম্বর বলে দেয়।
ডিবি প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার আরো জানান, ভুক্তভোগী অনেক সময় পিন নম্বর বলতে না চাইলে হ্যাকার ভুক্তভোগীকে একটি অংক করার জন্য বলতেন এবং অংক করার ছলে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সু-কৌশলে পিন নম্বর জেনে নিতেন। OTP এবং PIN জানার পর হ্যাকাররা ভুক্তভোগীর একাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতেন। হ্যাকার ভুক্তভোগীর একাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেয়ার পর ভুক্তভোগীর একাউন্টের টাকা বিভিন্ন এজেন্ট পয়েন্টে পাঠিয়ে দিয়ে হ্যাকারদের মনোনীত ব্যক্তির মাধ্যমে টাকা ক্যাশ আউট করে নিতেন। এজন্য ওই ব্যক্তিকে প্রতি ১০ হাজারে ১০০০ টাকা দেয়া হত। টাকা ক্যাশ আউট করার পর ওই ব্যক্তি পুনরায় হ্যাকারদের পার্সোনাল বিকাশ একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে দিতেন।
হ্যাকাররা ওই টাকা মধুখালী ফরিদপুরের বিভিন্ন ব্যক্তি, যারা প্রতি হাজারে ৪০০ টাকা করে কমিশন নিয়ে ক্যাশ টাকা হ্যাকারদের কাছে দিতেন। হ্যাকাররা বিভিন্ন ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রিকৃত বিকাশ পার্সোনাল একাউন্টের প্রতিটি সিম ৩ হাজার -৪হাজার টাকায় কিনতেন। হ্যাকাররা প্রতারণার কাজে আইফোন ব্যবহার করতেন।
বিকাশ প্রতারণার ঘটনায় ভাটারা থানায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর একটি মামলা হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, বিকাশ হ্যাকার চক্র থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। বিকাশ এজেন্ট সেজে কেউ ফোন করে পিন নাম্বার অথবা পাসওয়ার্ড চাইলে না দেয়ার জন্যও তিনি অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশ জার্নাল/এসএস/আরকে