ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

ভিসা জালিয়াতি করে কোটি টাকা আত্মসাৎ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২০, ২১:৫৪  
আপডেট :
 ১২ অক্টোবর ২০২০, ২২:২৪

ভিসা জালিয়াতি করে কোটি টাকা আত্মসাৎ

ভিসা জালিয়াতির মাধ্যমে কানাডা, জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে গত দুই বছরে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে ভিসা গাইড সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

সোমবার দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর শাহআলী মার্কেটের নবম তলায় ভিসা গাইড সেন্টারে অভিযান চালায় এনএসআই ও র‌্যাব-৩ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান শেষে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডি, পরামর্শক, কাউন্সিলর এবং আইটি স্পেশালিস্টকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়।

জানাযায়, প্রতিষ্ঠানটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, নোটারি পাবলিকসহ বিভিন্ন সিল ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে তাদের কাগজপত্র সত্যায়িত করে টাকা হাতিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ পায় গোয়েন্দা সংস্থা। এসব তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের নগর অভ্যন্তরীণ অপারেশন উইং থেকে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে নজরদারি করে আসছিল। তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার এনএসআইয়ের নগর অভ্যন্তরীণ অপারেশন উইং ও র‌্যাব-৩ এর একটি যৌথ টিম অভিযান চালায়। অভিযানে জাল-জালিয়াতির বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ, চেয়ারম্যান, এমডিসহ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের থানায় সোপর্দ করা হয়।

অভিযানকালে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন র‌্যাব-৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। তিনি বলেন, ভিসা গাইড সেন্টার নামক প্রতিষ্ঠানটি একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তাদের কাজ মূলত বিদেশে যেতে ইচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ দেয়া। কিন্তু সেই জায়গা থেকে প্রতিষ্ঠানটি সরে এসে অনুমোদন না নিয়ে বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটি বিদেশ গমনেচ্ছুদের কানাডা, জাপান, ফিজি, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভালো বেতনে চাকরির প্রলোভনের চটকদার বিজ্ঞাপন দেয়। এরপর সারাদেশে তাদের দালালদের মাধ্যমে বিদেশ গমনেচ্ছুদের যোগাযোগ করতে বলেন।

২০১৩ সালের অভিবাসী আইন অনুযায়ী তাদের কোনো রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্স নেই। যেসব দেশে পাঠানোর কথা বলছে সেসব দেশের যেসব কোম্পানিতে কাজের জন্য পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে, তার ডিমান্ড লেটার নেই। নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন। এরপরও তারা অসদুপায়ে বিভিন্ন কোম্পানির নামে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার তৈরি করে বিদেশ গমনেচ্ছুদের হাতে দেয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা লোকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কোর টাকা হাতিয়ে নেয়। আজও কয়েকজন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে।

তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের অনেকে ভুয়া ভিসা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে তারা ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা ফেরত চাইলে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি, কখনো অস্ত্রের মুখে অথবা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেন প্রতিষ্ঠানটির মালিকসহ কর্মকর্তারা। অভিযানের এই স্বল্প সময়ে আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি তার ভিত্তিতে জানতে পারি, ২০২০ সালেই আড়াই হাজার লোকের কাছ থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৯ সালে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা। প্রতিদিনই বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছ থেকে পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি।

তিনি আরো বলেন, অভিযানের সময় ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সিএস হাফিজ ও এমডি মোশারফ হোসেনকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। একইসঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

এছাড়া অফিসের কাউন্সিলর আরিফুল ইসলাম ও আইটি স্পেশালিস্ট সুজন রনিকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়েছে।

আরো পড়ুন

পাসপোর্ট-ভিসা জালিয়াতির হোতা মাসুম আটক

বাংলাদেশ জার্নাল/এস এস/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত