অবহেলায় সাংবাদিকের স্ত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ
ভারতের রেড্ডি পরিবার অর্থ ছাড়া সেবা বোঝে না
সোশ্যাল মিডিয়া ডেস্ক
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:৩২ আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:৪৭
দৈনিক ইত্তেফাকের পলিটিক্যাল এডিটর ফারাজী আজমল হোসেনের স্ত্রী জিন্নাতুন বাকিয়া (৫৮) সম্প্রতি ভারতের দিল্লি অ্যাপলো হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। হাসপাতালের কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন সার্জন ডা. ভিজি রাজকুমারীর চরম অবহেলা, উদাসীনতার কারণেই জিন্নাতুনের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংবাদিক ফারাজী আজমল হোসেনে। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন। যা নিয়ে বাংলাদেশ জার্নাল খবর প্রকাশ করেন।
এবার ভারতের অ্যাপলো হসপিটালসহ ৪৫টি বড় হাসপাতাল পরিচালনাকারী রেড্ডি পরিবারের ব্যবসায়ী স্বার্থপরতা নিয়ে আরেকটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। জার্নালের পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু প্রকাশ করা হলো-
আরো পড়ুন- ভারতের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ
“ভারতের অ্যাপলো হসপিটালসহ ৪৫টি বড় হাসপাতাল পরিচালিত হয় রেড্ডি পরিবারের তত্ত্বাবধানে। প্রতাব সি রেড্ডি এই গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং তার মেয়ে সঙ্গীতা রেড্ডি ভাইস চেয়ারম্যান। দিল্লি, হায়দারাবাদ, চেন্নাই কলকাতাসহ ভারতের বড় শহরগুলোতে এদের হাসপাতাল ব্যবসা রয়েছে।
প্রতাব সি রেড্ডি বয়স্ক হওয়ায় তার মেয়ে সঙ্গীতা রেড্ডিই এখন এই হাসপাতালগুলোর ব্যবসা দেখাশোনা করেন। এদের ব্যবসায়িক টার্নওভার মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। ভারতজুড়ে এদের হাসপাতাল বিজনেস মারাত্মক আকারের স্ফীত। দিল্লি অ্যাপলোতে কিডনি রোগীদের ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়। যা অত্যন্ত ব্যয়বহুলও বটে।
দিল্লি অ্যাপলো হসপিটাল। ছবি: সংগ্রহ।
যে হাসপাতালে মানুষ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন এবং বাঁচার আশায় দেশ বিদেশ থেকে ছুটে আসেন তাদের চিকিৎসা সেবার মান অত্যন্ত নিম্নমানের। এরা আসলে অর্থ ছাড়া আর কিছু চেনে না। অর্থ অর্থ আর অর্থ। টাকার নেশায় এদের রোগীর প্রতি কোনো খেয়ালই থাকে না। বিপন্ন মানুষকে আরো বিপন্ন করে এরা অর্থ আদায় করে।
একজন কিডনি রোগীর শুধু কিডনি ট্রান্সপ্যান্টের জন্যে ১২ হাজার ৫শ ডলার জমা দিতে হয়। এছাড়া নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যে আরও লাখ লাখ রুপী ব্যয় তো আছেই।এরপরও তাদের টাকার খাই মেটেনা। আর চিকিৎসা?
ডা. ভিজি রাজকুমারী। ছবি: সংগ্রহ।
সে এক ভয়াবহতম বিষয়। কিডনি প্যাশেন্ট হাইলি সেনসেটিভ। ট্রান্সপ্লান্টের পর তাদের ৬ মাস খুবই সতর্কতার সঙ্গে দেখতে হয়। ইনফেকশন অন্যকোনো জীবাণুর সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় সতর্ক থাকতে হয়। কিন্তু দিল্লিতে গত তিনমাসে আমার অভিজ্ঞতা নির্মম। আমার সহধর্মিণীকে নিয়ে আমি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে আমি এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রতিবাদ করি।
করোনার এই সময়ে হাসপাতালে রোগীদের বিভিন্ন স্যাম্পল দিতে হয়েছে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে। আলাদা কোনো সুরক্ষার বালাই নেই। আর সেটা করতে গিয়েই আমার স্ত্রী করোনা আক্রান্ত হন। বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশ থেকে আগত আরো রোগী এভাবে আক্রান্ত হয়েছেন আমার চোখের সামনে। তাদের আহাজারি আমি দেখেছি। সে এক মর্মান্তিক অধ্যায়। হাসপালের কিডনি সার্জন ডা. ভিজি রাজকুমারী। রেড্ডি পরিবারের আত্মীয় তিনি। প্রচণ্ড দাম্ভিক প্রকৃতির মানুষ। রোগীদের প্রতি তার কোনো দায় আছে বলে মনে হয়নি।
ফারাজী আজমল হোসেন ও তার স্ত্রী জিন্নাতুন বাকিয়া। ছবি: সংগ্রহ।
যখনই তার সঙ্গে কথা বলতে গেছি তিনি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। টাকার খোঁজ নিয়েছেন নিয়মিত। রোগী রেখে তিনি কতবার যে চেন্নাই যান তার শেষ নেই। অর্থ পিশাচ এই লোকগুলো চিকিৎসক নামের কলংক। আর এদের সম্মিলিত কারণেই অবহেলায় আমি অকালে হারিয়েছি আমার প্রিয়তম জীবনসঙ্গীকে। এদের প্রভাব প্রতিপত্তির কাছে হয়তো অসহায় মানুষের আর্তনাদের মূল্য নেই। কিন্তু অনন্তকালে অবশ্যই এরা নরকের কীট হবে। এটা আমার দৃঢ়বিশ্বাস।”
বাংলাদেশ জার্নাল/এনএম