ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের রজত জয়ন্তীতে আমার প্রত্যাশা

  শামীম আহমদ

প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২১, ১৮:০৩

এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের রজত জয়ন্তীতে আমার প্রত্যাশা

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বইতে পড়ছি- ‘যে শিক্ষা স্বজাতির নানা লোকের নানা চেষ্টার দ্বারা নানাভাবে চালিত হইতেছে তাহাকেই জাতীয় বলিতে পারি। স্বজাতীয়ের শাসনেই হউক আর বিজাতীয়ের শাসনে হউক, যখন কোনো একটা বিশেষ শিক্ষাবিধি সমস্ত দেশকে একটা কোনো ধ্রুব আদর্শে বাঁধিয়া ফেলিতে চায় তখন তাহা জাতীয় বলিতে পারি না—তাহা সাম্প্রদায়িক, অতএব জাতির পক্ষে তাহা সাংঘাতিক’।

আমার মনে হয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক ইন্সটিটিউট। জামাত শিবিরের আনুগত্য লোকজন ছাড়া এখানে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ নেই। উচ্চশিক্ষা নিয়ে এখানে সাংঘাতিক রকমের প্রতারণা হয়।

তাইতো রবীন্দ্রনাথ বলছেন, ‘অসম্পূর্ণ শিক্ষায় আমাদের দৃষ্টি নষ্ট করিয়া দেয়—পরের দেশের ভালোটা তো শিখিতে পারিই না, নিজের দেশের ভালোটা দেখিবার শক্তি চলিয়া যায়’।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির অসম্পূর্ণ শিক্ষা আমাদের সমাজটাকে একেবারে নষ্ট করে করে ফেলছে। দেশের অন্য সব ভালো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইজ্জত একেবারেই ধুলোয় মিশিয়েছে।

পিতা ভিসি পুত্র ট্রাস্টিজ বোর্ডের চেয়ারম্যান। একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য এর চেয়ে আনন্দের আর কি থাকতে পারে! বিরিয়ানির আসল স্বাদ যেমন পুরান ঢাকায় তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আসল স্বাদ উত্তরার এশিয়ানে। ঢাকার রাজধানীতে এখন যে খাবারগুলোর কদর সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে বিরিয়ানি একটি। উৎসব, অনুষ্ঠানে ভূরিভোজ মানেই এই মোগলাই খাবারটির উপস্থিতি। উপলক্ষ না থাকলেও বিরিয়ানির স্বাদ নিতে ব্যাকুল থাকেন অনেকে। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে নতুন নতুন বিরিয়ানির দোকান। তবে এটির আসল স্বাদ পেতে হলে যেতে হবে পুরান ঢাকায়।

পুরান ঢাকা মানেই জিবে জল আনা সুস্বাদু সব খাবার-দাবার। তবে স্বাদ, গন্ধ ও মানে সবচেয়ে এগিয়ে পুরান ঢাকার বিভিন্ন দোকানের কাচ্চি ও চিকেন বিরিয়ানি। সকাল থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত খোলা থাকে এসব দোকান। পুরান ঢাকার অনেকেই সকালের নাশতা, দুপুর ও রাতের খাবার সারেন বিরিয়ানি দিয়ে।

আর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিরিয়ানির স্বাদ নিতে আসা লোকজনের ভিড় জমে দুপুর ও রাতের খাবারের সময়। ছুটির দিনে সেই ভিড় আরো বাড়ে। বিভিন্ন প্রয়োজনে যাদের অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রী দরকার তাদের ভিড় এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। এতো সহজে উচ্চশিক্ষার সনদ দুনিয়াতে আর কেহ দেয় কিনা আমার জানা নেই।

সনদ বাণিজ্যের জন্য ঠিক বিরিয়ানির দোকানের মতোই অর্ধশত ক্যাম্পাস গড়ে উঠেছিলো এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের।

৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখ দেশের সর্ববৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রজতজয়ন্তীর খবর কেউ জানে না। এই খবর বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদেরও জানা নেই। যদিও গত ২৫ বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গোপন শিক্ষার্থী। গোপন বলার কারণ হচ্ছে এখানে পয়সা দিলেই সনদ পাওয়া যায়। ক্লাশ করতে হয় না। তাই কেউ চাকরিতে প্রমোশন নিতে কিংবা পারিবারিক ও সামাজিক স্ট্যাটাস সমন্বয় করতে গ্রাজুয়েট পরিচয় দিতে, অর্থাৎ নিজের গ্রাজুয়েশনের সান্ত্বনা স্বরূপ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ নিয়েছে। তাই সেই গোপন শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর রাখে না। কিছু সুন্দরী মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিসির খবর রাখলে রাখতেও পারে। সেই বিষয়টি আমি জোর দিয়ে বলতে চাই না। আবার যদি বলি তা খুব একটা বাড়িয়ে বলা হবে, তা নয়। কারণ একই ব্যক্তি টানা ২৫ বছর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তাই ‘গিভ অ্যান্ড টেক’ প্রক্রিয়ার চর্চা থাকা স্বাভাবিক।

এক্ষেত্রে কিছু সুন্দরী মেয়েদের জন্য ডিসির নিয়ম ‘দেহ দাও সনদ নাও’। পুরুষদের ক্ষেত্রে যোগ্যতা কেবল একটাই, আর তা হচ্ছে শিবির ক্যাডার বা জামাত ইসলামের আনুগত্য হতে হবে। তাহলেই সনদের দাম অর্ধেক।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য আর বাংলাদেশ তিন মেরুর তিন দেশ। সাম্প্রতিক কালে তিন দেশই একটি অভিন্ন সমস্যায় ভুগছে, আর তা হচ্ছে উচ্চশিক্ষায় নানামুখী সংকট। একসময় বাংলাদেশের ছাত্ররা যুক্তরাষ্ট্রে পড়ালেখা করার জন্য যেতে কত রকমের চেষ্টা-তদবির করতেন। যুক্তরাষ্ট্র আবার ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো বোঝে। তারা কত রকমের শিক্ষা মেলা ও পরীক্ষার পসরা সাজিয়ে সারা দুনিয়ার ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার তুলে নিত। এই পরীক্ষায় পাস করা ছিল সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তির পূর্বশর্ত। এখন এসবের ওপর বেশি জোর দেয়া হয় না। বলে, ঘাটতি থাকলে তাতে সমস্যা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারলে আমরাই তোমাদের ঘাটতি পুষিয়ে দেব। তবে ঢালতে হবে এক কাঁড়ি ডলার। এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের দশা সেই রকমই। ভর্তি হয়ে ডলার ফেললেই সনদ।

প্রায়সময় দেখা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সর্তকতা জারি করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আইন অমান্য, আউটার ক্যাম্পাস বহাল রাখা, অনুমোদনহীন বিষয় চালু, মামলাসহ বিভিন্ন কারণে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হতে বলা হয় তার মধ্যে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় অব বাংলাদেশের নাম তালিকার শুরুতেই থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ এর ধারা ৩১(২) অনুযায়ী ভিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী এবং একাডেমিক কর্মকর্তা। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্যের স্বাক্ষর ছাড়া সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য হবে না। মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসি কর্তৃক স্বাক্ষরিত সার্টিফিকেট অবৈধ হবে।

একই সাথে অর্থ সংক্রান্ত চেক এবং কোনো দলিলপত্র স্বাক্ষর করাও বৈধ হবে না। সেক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেরণ করা যেকোনো দলিলপত্র অবশ্যই বৈধ নয় এমনকি যে সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা গর্ব বোধ করছে সেগুলোও বৈধ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা এবং ভিসি ড. আবুল হাসান মুহাম্মদ সাদেক ২৫ বছর ধরেই এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগ করা ভিসি বা উপাচার্য নন এবং তার বিরুদ্ধে গত ২৫ বছর ধরেই বহু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এই ভিসি দুর্নীতির মাধ্যমে সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা মানি লন্ডারিং করেছেন মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায়।

এশিয়ান ইউনিভার্সিটির জামাতি রাজনৈতিক দর্শন সকলের নিকট স্পষ্ট হলেও সরকারের নীরবতার কারণ কেহই জানে না। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন কালে উত্তরার আব্দুল্লাহপুরে বোমা হামলার আসামি শিবিরের নেতা ইয়াসিন এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। ভিসি পুত্র জাফর সাদেক শিবিরের আনুগত্য লোকদের নিয়েই নিজে আছেন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সাদেক সাহেবের চাচাত ভাই মঞ্জুর এলাহী তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির রাজশাহী ক্যাম্পাসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ছিলেন। তার এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুর মাধ্যমে এশিয়ানের ভিসিকে রাজাকার থেকে হাইব্রিড আওয়ামী লীগে রূপান্তরের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে এলাকায় মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুর নির্বাচন কাজে সহায়তা করছে। নরসিংদী ও ঢাকায় মঞ্জুর এলাহীর নির্বাচনী পোস্টার দেখা গেছে। দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় মঞ্জুর এলাহীর সাথে মন্ত্রী রাজিউদ্দিন রাজুর ছবি ১০ সালের ১০ ডিসেম্বর ছবি ছাপা হয়েছিলো। মঞ্জুর এলাহী ইসলামী ছাত্র শিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলো ২০০৭ সালে সরকার কর্তৃক আউটার ক্যাম্পাসে ভর্তি বন্ধের নির্দেশনার পরও এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজশাহী ক্যাম্পাসে কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করে ভিসিকেও কোটি কোটি টাকা কামিয়ে দিয়েছে এবং নিজেও কোটিপতি হয়েছে। বর্তমানে রাজশাহীতে ক্যাম্পাস না থাকায় তিনি ভিসির সাথে ঢাকায় থাকেন। ধানমন্ডি ক্যাম্পাসের এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার মো. মাহফুজ ছিলো শিবির ক্যাডার। যোগ্যতা না থাকা সত্বেও ভিসি তাকে ওই পদে নিয়োগ দিতে আগ্রহী ছিলো। কারণ শিবিরের দাতা সংস্থা ইবনে সিনা হাসপাতালের আবু নাসের সুপারিশ করেছিলো মাহফুজের ব্যাপারে। ইবনে সিনা ট্রাস্ট এবং ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আবদুজ জাহের একাত্তরে চট্টগ্রাম এলাকায় আল বদর বাহিনীর নেতা ছিলেন। নাসেরের সঙ্গে ভিসি সাদেকের ছিলো পাকিস্তানি সখ্যতা। শিবিরের সাথী ছাড়া ভিসি সাদেকের কোন সঙ্গী ছিলো না। বর্তমান পিএস মাহাবুব কারমাইকেল কলেজ রংপুর শাখার শিবির সভাপতি ছিলো।

এশিয়ানের ছিলো আরো একজন উপপরিচালক (অর্থ) মো. নাজমুল হক যিনি প্রথমে ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মী এবং বর্তমানে জামায়াতের উত্তর অঞ্চলের কর্মী। তিনি ভিসি সাদেকের ভাই হারুনের জামাতা। প্রফেসর মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর কেন্দ্রীয় কমিটির মজলিশ শুরা সদস্য ও রোকন। ১৯৭১ সালে নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। মুক্তিযুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে চেয়েছিল। কিন্তু ডিসির পিতা আব্দুল খালেক ও ভিসি সাদেকের মত তিনিও ভাগ্যজোরে বেঁচে গেছেন। ভিসি সাদেক তাকে প্রথমে এশিয়ানের একাডেমিক এফেয়ার্সের পরিচালক পদে নিয়োগ দেয় এবং পরবর্তীতে তাকে ভারপ্রাপ্ত ট্রেজারার হিসাবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। এছাড়াও মো. আবদুল্লাহ যিনি ১৯৭১ সালে রাজশাহী অঞ্চলের স্বীকৃত রাজাকার। যুদ্ধের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর জেনারেল জিয়ার শাসনামলে রাজাকার পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার সময় আবার এলাকায় ফিরে আসে। তিনি এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন।

তাছাড়াও আলহাজ মকবুল হোসেন যিনি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন সেই মকবুল হোসেন ছিলেন এশিয়ানের ক্রয় কর্মকর্তা। ভিসি সাদেক সাহেবের ঘনিষ্ঠ সহচর জামায়াত নেতা মো. জাকির হোসেন যিনি গার্মেন্টস ও ঝুট ব্যবসায়ী তিনি বর্তমানে এশিয়ানের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহকারী প্রফেসর। তিনি জামায়াতে ইসলামী পল্টন শাখার সেক্রেটারি। ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের জনসভায় বোমা হামলার উস্কানীদাতাদের অন্যতম। তার নামে রয়েছে বোমা হামলার একাধিক মামলা।

ভিসি ড. সাদেক এর দুর্নীতির বিশ্বস্ত সহযোগী একসময়ের স্পেশাল এসিস্ট্যান্ট শাহাদাত হোসেন নারী কেলেঙ্কারির কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করছে। তাকে প্রথমে স্পেশাল এসিস্ট্যান্ট টু দি ভাইস চ্যান্সেলর, পরবর্তীতে পরিচালক (প্রশাসন) নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসাবে ট্রেজারার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং প্রো-ভিসির দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরিচালক (পরিকল্পনা) এবং জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির জামায়াতপন্থী চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী হিসাবে স্বীকৃত। তার মনোরঞ্জনের জন্য তার পূর্ব পরিচিত মঞ্জুশ্রী দত্ত নামে এক সুন্দরী হিন্দু মেয়েকে এশিয়ানের ধানমন্ডি ক্যাম্পাসের অফিস সহকারী হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। শাহাদাত হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লেও মঞ্জুশ্রী দত্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ছাড়েনি।

ভিসি সাদেক এই মহিলাকে দিয়ে বহু অনৈতিক কাজ করছে এখনও। জামাত নেতা ড. সাদেক আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আঁতাত করতে এই মহিলাকে ব্যবহার করেন। বিনিময়ে মহিলার কিছু অর্থ রোজগার হয়। এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের খুলনা ক্যাম্পাসের কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর শেখ মো. আশরাফ ছিলেন খুলনার জামায়াত নেতা এখন জেলে আছে। এছাড়াও ভিসি সাদেকের গ্রামের বাড়ির লোক জামায়াত নেতা নূরুল ইসলাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। তিনি জামায়াত সমর্থিত এনজিও World Association of Muslim Youth (WAMY) এর সেক্রেটারি। তিনি অধ্যাপক না হয়েও নামের পূর্বে অধ্যাপক পদটি ব্যবহার করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে আগে (ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি) অধ্যাপক হিসাবে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে। ভিসি নিজেও এই ধরনের একটি ‘ইমেরেটাস’ উপাধি তার নামের পূর্বে ব্যবহার করেন।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক কর্মকর্তা (পরিচালক) ও জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ড. এএনএম আবদুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কোন অনুমতি ছাড়াই তিনি দীর্ঘ প্রায় ৭-৮ বছর যাবত এশিয়ানে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ভিসি ও তার মরহুম পিতার বিভিন্ন ইসলামিক বই প্রকাশে সহায়তার পাশাপাশি আবদুর রহমান ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরিরত অবস্থায় এশিয়ান থেকে বহু সুবিধা ভোগ করছে। একসময় তাকে একাডেমিক পরিচালক বানিয়ে ভারপ্রাপ্ত ট্রেজারারের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রীটা আশরাফের সাথে যৌন কেলেঙ্কারি কথা আলোচনায় আসছিলো একবার। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর জায়দুর রহমানকে একসময়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দেয়া হয়।

জায়দুর রহমান ২০০৩ সালের পহেলা জুলাই থেকে এক বছরের কিছু বেশি সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অপকর্মের কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিচ্যুত করা হয় প্রফেসর জায়দুর রহমানকে। ২০০৭ সালের ২৫ মে তত্বাবধায়ক সরকারে সময় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়। সেই শ্বেতপত্রে প্রফেসর জায়দুর রহমানের নাম আছে।

এই দুর্নীতিবাজ লোক সঙ্গে নিয়ে ভিসি সাদেক বহু অর্থ সম্পদ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লুটপাট করছেন। সাদেকের বাল্যবন্ধু ফরিদউদ্দিন খান স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর কোন অভিজ্ঞতা না থাকা সত্বেও জামাতী অনুসারী এবং বাল্যবন্ধু হবার কারণে ভিসি সাদেক তাকে অধ্যাপক বানিয়েছেন। ফরিদউদ্দিন পরবর্তীতে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষণের দায়িত্বে থেকে শহরের অলিগলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খুলে সনদ বাণিজ্য চালিয়েছেন। বাংলা একাডেমী থেকে অবসরপ্রাপ্ত পরিচালক সিরাজউদ্দিন এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান। তিনিও অধ্যাপক না হয়েও ভিসি সাদেকের মৌখিক অনুমোদনের ভিত্তিতে নামের পূর্বে অধ্যাপক পদটি ব্যবহার করে অবশেষে তিনি এশিয়ান থেকে বিতাড়িত হয়েছেন।

সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ভালো করছে। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে দ্রুত বিকাশমান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিকাশের সূত্র ধরে উচ্চশিক্ষার্থে শিক্ষার্থীদের বিদেশে যাওয়ার হার কমে আসছে। এর ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা জাতীয় উন্নয়নে সর্বক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন। দুই দশক আগেও একটা সময় ছিল, যখন আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন স্বল্পতার কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কয়েক লাখ টাকা খরচ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য বিদেশে পাড়ি দিতেন। বর্তমানে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশের তুলনায় কম খরচে অনুরূপ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদেশের পরিবর্তে দেশের মাটিতেই উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরই বিপুল অর্থ ব্যয় করে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সামর্থ্য নেই। এ ধরনের ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সুযোগ দিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের মেধা-মনন বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে এবং দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতির জন্য যোগ্য নাগরিক তৈরিতে অবদান রাখছে।

আশার কথা যে, বর্তমানে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ যেমন: নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, ভারত, তুরস্ক ইত্যাদি দেশের ছাত্রছাত্রীদের আকৃষ্ট করেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি ক্রমেই উজ্জ্বলতর হচ্ছে।

যেসব কারণে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা হয়েছিল, এক. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষে উচ্চশিক্ষার বর্ধিত চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। দুই. দ্রুত বর্ধনশীল চাহিদা পূরণে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন ছিল, সরকারের পক্ষে তা জোগান দেওয়া সম্ভব না হওয়া। এসব দিক বিবেচনা করে উচ্চশিক্ষার চাহিদা পূরণে সরকারের প্রচেষ্টার পরিপূরক ভূমিকা পালন করতে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পথ আইনত উন্মুক্ত করার লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২ (১৯৯৮-এ সংশোধিত) প্রণয়ন করা হয়। আইনটি পাস হওয়ার পর অতি অল্প সময়ের মধ্যে বেসরকারি খাতে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অব বাংলাদেশ বেসরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠার শুরুর দিকে দু'চারটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিকল্প হিসেবে নয়, বরং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় উৎসাহিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে সর্বমোট ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আর এই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন।

এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে বর্তমানে দশ পনেরটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ধারাবাহিক প্রচেষ্টা। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস লেকচার উপস্থাপন পদ্ধতি বেশ আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত, যা শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন। বর্তমানে বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলছে আমাদের দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। প্রতিবছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ১৩ দশমিক ২৩ শতাংশ দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী বিনা খরচে অধ্যয়নের সুযোগ পান। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির বাজারে চাহিদা আছে এমন সব বিষয় উচ্চ বেতনের বিনিময়ে অফার করে থাকে। তবে দর্শন, সমাজতত্ত্ব, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের মতো জ্ঞানভিত্তিক বিষয়ে ডিগ্রি প্রদানকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা খুবই কম। জ্ঞান বিতরণের ক্ষেত্রে ভারসাম্য আনার প্রতি নজর দেওয়া জরুরি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও অনেক অবদান রাখছে। আমার মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে দেশে বিশ্বমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদার প্রসার ঘটবে। উচ্চশিক্ষার ক্রমবর্ধমান জাতীয় চাহিদা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাদ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবশ্যই পরস্পরের পরিপূরক হিসেবে সহাবস্থান করে যেতে হবে। এবং এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি উচ্চশিক্ষা নিয়ে গত ২৫ বছর প্রতারণা করে চলছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি অবৈধ তার স্বাক্ষরিত সকল ধরনের একাডেমিক কাগজ অবৈধ। সেই অবৈধ সনদ বিতরণ করতে গিয়েছিলেন এককালের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আমি জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে কেবল মাত্র সনদ বিতরণের জন্য। নুরুল ইসলাম নাহিদ কার স্বাক্ষরিত সনদ বিতরণ করছেন? তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম উচ্চশিক্ষা নিয়ে প্রতারণাকারীকে সমর্থন দিয়েছেন। সেই সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. আক্তারুজ্জামান। এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করছেন ড. আক্তারুজ্জামান। তবে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান যোগদান করেননি। এটা ইউজিসি কর্মকর্তাদের নিকট গর্বের বিষয়।

সরকারের পরিবার পরিকল্পনার একটি শ্লোগান আমি এখানে যোগ করতে চাই- ‘দুটি সন্তানের বেশি নয়- একটি হলে ভালো হয়ে’ এতো টুকো ছোট্ট দেশে ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ঠিক মুদি দোকানের মতোই ছড়িয়ে যাচ্ছে। দুই দশকে এতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হলে আর কয়েক বছর পরেই শুনতে পাবো আরো ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা তরতরিয়ে বাড়লেও এগুলোর শিক্ষার মান বাড়ছে না। ২৭ বছর ধরেই সমস্যার বৃত্তেই ঘুরছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। সমস্যাগুলো সরকারের জানা থাকলেও সত্যিকারের কোন সমাধান নেই। বরং নতুন নতুন সমস্যা সামনে আসছে। শিক্ষা পরিষদ, সিন্ডিকেট, পরিচালনা পর্ষদ ও অর্থ কমিটির সভা না করা, উপাচার্যসহ শীর্ষ তিন পদে নিয়োগে অনাগ্রহ, নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে গড়িমসির মতো সমস্যা তো আছেই। পূর্ণকালীন শিক্ষক নিয়োগেও আছে ঢিলেমি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এসব নানা সমস্যার কথা উঠে এসেছে উচ্চশিক্ষার দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে। ইউজিসি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের অনেকাংশই লঙ্ঘিত হচ্ছে, যা কাম্য নয়। এ জন্য এই বিষয়গুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণে জন্য রাষ্ট্রপতির নিকট সুপারিশ করেছে ইউজিসি। বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজেদের দেওয়া তথ্যের ওপর। সেই প্রতিবেদনেই এত অনিয়ম-অব্যবস্থার চিত্র রয়েছে। প্রকৃত অবস্থা আরও খারাপ। শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বড়জোর ১৫টি ভালোভাবে চলছে বা চলার চেষ্টা করছে।

খণ্ডকালীন শিক্ষক, নিজস্ব ক্যাম্পাস। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ১৬ হাজার ৭৪ জন। আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রোগ্রামে খণ্ডকালীন শিক্ষক পূর্ণকালীন শিক্ষকের এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবেন না। বর্তমানে যত পূর্ণকালীন শিক্ষক আছেন, এর প্রায় ৩৭ শতাংশ খণ্ডকালীন। ইউজিসি বলছে, পূর্ণকালীন বা খণ্ডকালীন শিক্ষকের এই অনুপাত সন্তোষজনক নয়। ২০১০ সালে নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন হওয়ার পর অন্তত ছয়বার সময় দেওয়া হলেও সাত বছরের বেশি বয়সী মাত্র ২১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে। বাকিরা জানিয়েছে কেউ ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে, কেউবা জায়গা কিনেছে। অথচ আইনানুযায়ী সাত বছরের বেশি বয়সী মোট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা অন্তত ৫৪। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১: ২২। কিন্তু ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই অনুপাত ১: ৩০ বা তার বেশি। এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য ইউজিসিকে পক্ষপাতহীন, প্রভাবমুক্ত এবং বস্তুনিষ্ঠভাবে তৎপর হতে হবে। তবে এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। কারণ, ইউজিসির সুপারিশ বা পদক্ষেপগুলো কার্যকর করবে মন্ত্রণালয় ও সরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষ কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া এই ভর্তি ও টিউশন ফি আদায় চলছেই। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু এগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় কোনো নীতিমালা আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি। নীতিমালা না থাকায় ইচ্ছেমতো ফি আদায় করে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রস্তাবিত নীতিমালা গত পাঁচ বছরেও চূড়ান্ত হয়নি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি, টিউশন ফি এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতাসহ অন্য বিষয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এ ছাড়া ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট ও প্রশংসাপত্র ইত্যাদি সরবরাহ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উচ্চহারে ফি নেয়ায় হাজার হাজার অভিযোগ আসে ইউজিসিতে। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া প্রতি বছরই সব ফি বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। এসব অভিযোগের পর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জরুরি উল্লেখ করে ২০১৩ সালের অক্টোবরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সুপারিশ পাঠানো হয়। কিন্তু তা আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত করা হয়নি। ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতার কারণেই নীতিমালাটি ফাইলবন্দি।

আমার কথা এখানে স্পষ্ট উচ্চশিক্ষার পথে পথে বাধা দেয় কিংবা মানুষের মৌলিক অধিকার শিক্ষা নিয়ে যারা প্রতারণা করে তাদেরকে জেলে বন্দি করুক সরকার। দপ্তরে দপ্তরে ফাইলগুলো বন্দি করে প্রতারকদের প্রতারণা করার পথ সুগম করে দিবেন না। ২৫ বছর পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির নিকট আমার একটি প্রত্যাশার কথা জানাতে চাই, সেটা হচ্ছে এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় যেন জামাত ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন ভুলে গিয়ে জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে তাদের যে সখ্যতা আছে তা ত্যাগ করে। পাশাপাশি সরকারকে অনুরোধ করছি বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান কাঠামো ভেঙে দিয়ে একটি স্বাভাবিক শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেন অগ্রণী ভূমিকা রাখে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলছেন ‘আমাদের শিক্ষার মধ্যে এমন একটি সম্পদ থাকা চাই যা কেবল আমাদের তথ্য দেয় না, সত্য দেয়; যা কেবল ইন্ধন দেয় না, অগ্নি দেয়’। আমি রবীন্দ্রনাথের কথা দিয়েই শেষ করছি- ‘বিদ্যা যে দেবে এবং বিদ্যা যে নেবে তাদের উভয়ের মাঝখানে যে সেতু সেই সেতুটি হচ্ছে ভক্তিস্নেহের সম্বন্ধ। সেই আত্মীয়তার সম্বন্ধ না থেকে যদি কেবল শুষ্ক কর্তব্য বা ব্যবসায়ের সম্বন্ধই থাকে তা হলে যারা পায় তারা হতভাগ্য, যারা দেয় তারাও হতভাগ্য’।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও গবেষক

বাংলাদেশ জার্নাল/এনএইচ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত