ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

দুখু বাঙাল-এর একগুচ্ছ কবিতা

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৬ জানুয়ারি ২০২১, ২২:০৮

দুখু বাঙাল-এর একগুচ্ছ কবিতা

রক্তের সোপান এক

কতদিন রাজপথ চৈত্রের মাঠের মতো হাঁ করে আছে

কতদিন শহিদমিনার পূণ্যার্থীর শূন্যতায় পথচেয়ে আছে

অথচ এই রাজপথে একদিন রচিত হয়েছিল সারাক্ষণ

ঢেউতোলা গণতন্ত্রনামক এক সমুদ্রের ছবি

এই বেদিমূলে একদিন বোপিত হয়েছিল সকলকে ছাপিয়ে ওঠা

স্বাধীনতানামক এক সার্বভৌম শিরীষের বীজ

এবং যে গণতন্ত্রের জন্যে লুণ্ঠিত হয়েছিল আমার বোনের

মহামূল্য সতীত্বের হার

যে স্বাধীনতার জন্যে বিসর্জন দিতে হয়েছিল জননীর

মক্কাতুল্য পবিত্র সম্ভ্রম

একদমই তুচ্ছতায় ঝরেছিল আমার ভাইয়ের রক্ত

যে স্বাধীনতার জন্যে বেহালে-বিষাদে সিঁড়িতেই পড়েছিল

পিতার বক্ষবিদীর্ণ রক্তাক্ত লাশ।

অতএব, তাজমহল কিংবা কোনো গ্রেটওয়াল চাই না আমি

আমি স্বাধীনতা চাই

আমি আমার গণতন্ত্র চাই।

কাশ্মীরের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ফ্রিজের শীতলতা চাই না একদম

অথবা সুবিন্যস্ত প্যারেডের আকাশবিদীর্ণ কমান্ডও

শুনতে চাই না আমি

অরণ্যের পাখির মতো যত্রতত্র শিস তুলতে চাই

আমি গণতন্ত্র চাই

আমি আমার স্বাধীনতা চাই।

গণতন্ত্রের প্রাচীরটা একবার খুলে দিয়ে দ্যাখো-

ধন্য হবে রাজপথ প্রার্থিত বৃষ্টির মিছিলে

স্বাধীনতার পতাকাটা একবার হাতে দিয়ে দ্যাখো-

আবার মুখরিত হয়ে উঠবে শহিদবেদি অগণিত পাখির উল্লাসে।

বাঙালির রাজপথ মিছিল আর শহিদমিনার- রক্তের সোপান এক অতুলস্পর্শী ধন, বড় বেশি দাম দিয়ে কেনা।

সত্যকাম তোমারই সন্তান

দীর্ঘদিন রৌদ্রের ধেয়ানে থেকে এখন আমি রৌদ্রস্নাত

তপোবন ছেড়ে আজ পৌঁছে গেছি বৃন্দাবন পূর্ণচন্দ্র ঋষি

সারা অঙ্গে ভাষালিপি হয়তো বা আগুনের লকলকে জিভ

আলোয় মথিত বীর্যে তোমার দেহের খাদে ঢেলে দিলাম

জীবনের সিদ্ধিলব্ধ সবটুকু কাঁচাসোনা রোদ

যদি আসে নতুন মানুষ এই পৃথিবীতে !

সূর্যসন্তানের বিস্তৃতি হোক দিকে দিকে

স্বগোত্রের রক্ত ছাড়া কাটে না যে মানুষের তৃষার হুতাশ

জাবালার আনন্দচিৎকারে আজ ধন্য হোক পিতৃপরিচয়-

দ্যাখো দ্যাখো দধীচি এসেছে ঐ, সত্যকাম তোমারই সন্তান

নতুন মানুষ হোক পৃথিবীতে আঁধারের হোক অবসান।

ফিলিস্তিন: স্বাধীনতার রঙিন জোনাক

ভ‚মধ্যসাগর থেকে উঠে আসা লোনাজলের জবরদখল

পিতৃভিটায় পরবাসী, দিনান্তের দুঃখ তার

রাত হলে নেমে যায় সিনাইভ‚মিতে

তৃণভোজী উটের মতো স্বপ্ন হয়ে ফিরে আসে ভোরে।

আরবজঙ্গলে থেকে হায়েনার পাশে

আত্মার জমিনে পোষে রাতদিন চঞ্চল হরিণ

ছুরিবিদ্ধ হয়েও যে আপনার বুকে আর পিঠে-

সারাক্ষণ জ্বলে-নেভে স্বাধীনতার রঙিন জোনাক।

চারদিকে উল্লসিত দাঁতাল শুয়ার

মার্কিনি সর্পাস্ত্রের নাম বুঝি শুধুই ইসরায়েল!

ক্যান্সার-আক্রান্ত পৃথিবীর ঘুম হয়তো ভাঙিবে না আর

ফিলিস্তিনের স্বপ্ন তবু জমজমধারার মতো চির-অফুরান।

বিরহের হাঁস হয়ে

কোনোকিছু না চেয়েই

যে তোমার ডানপাশে সারাপথ ছায়া হয়ে হাঁটে

ভালোবাসার হিজাব-আবৃত্ত হয়ে মনে রেখো তারে।

কোনোকিছু না পেয়েই

যে তোমার ভুলটাকে ফুল বলে লড়ে সব ঘাটে

প্রেমের আলখেল্লা পরে একজীবন খুঁজিয়ো তাহারে।

কোনোকিছু না ছুঁয়েই

যে তোমার দুঃখরাতে হাতধরে নিয়ে যায় চাঁদোয়াসড়কে

বিরহের হাঁস হয়ে পাড়ি দিয়ো লক্ষ মাইল তাহারই অন্তরে।

প্রেমের প্রলয়ে মন শুদ্ধ-অশুদ্ধ বলে নেই যার কিছু।

করোনাবসন্ত ২০২০

বর্ষাটা হদ্দবোকা, পালাতে শেখেনি

লোলেঝোলে লেপটে গিয়ে কপোলের নদী হয়ে ভাসে

বসন্তটা বেজায় চতুর, কখন যে বেড়ালের মতো

পা ফেলে চলে গেছে সন্তর্পণে আমাদের পাড়াগাঁ ফেলে।

কোথাও কি ফুটেছিল ফুল!

কোথাও কি গেয়েছিল পাখি!

নতুন পাতার শিহরণে কোথাও কি কেঁপেছে হৃদয়!

হয়তো কেঁপেছে, হয়তো সে কাঁপেনি একদম।

চুম্বনের সুতীব্র ম্যাগনেট সেও দ্বিধা হয়ে দূরে সরে যায়

বৃক্ষরা ডেকে বলছেন ভয় নেই, আমাকে স্পর্শ করো

আমাকে জড়াও

বৃক্ষের প্রস্তাবে সাধুবাদের দাবি আছে

আচ্ছা, বলুন তো মানুষ কি শুধু বালিশ

কিংবা গাছকে জড়িয়ে ধরে বাঁচে!

এবার কামিং শীতে তোমার নাকের পরে ঠিক ঠিক

ফুটে উঠবে শিশিরকুসুম

লেপটে দিতে দুই ঠোঁট

কবিতার অধরা লাইনের মতো পাখি হয়ে আবার যেন

পালিয়ো না ছাই।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত