ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

ধরলা-মনুসহ ৬ নদীর হালচাল

  নিলুফা খানম

প্রকাশ : ১৬ মার্চ ২০২১, ১৭:২৫  
আপডেট :
 ১৬ মার্চ ২০২১, ১৮:০৭

ধরলা-মনুসহ ৬ নদীর হালচাল
ধরলা-মনুসহ ৬ নদীর হালচাল

দক্ষিণ এশিয়ায় অন্তর্গত বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। নদীগুলোই এ দেশের প্রাণ। শতাধিক বড় নদী জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে দেশজুড়ে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার চুক্তিতে অভিন্ন ছয়টি নদী রয়েছে। এই নদীগুলো হচ্ছে- মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার।

এই ছয়টি নদী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরা রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ইতোমধ্যেই এসব নদীর ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালের তথ্য উপাত্ত নিজেদের মধ্যে বিনিময় করেছে দুই দেশ।

বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাতকারে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উভয় দেশের মধ্যকার পানি ব্যবহার সম্পর্কিত তথ্য বিনিময় হয়ে গেলে পানি বণ্টন চুক্তির একটি কাঠামো তৈরি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন তারা। নদী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলছেন, বাংলাদেশের অন্য নদীগুলোর মতোই এসব নদীর অবস্থাও ভালো নয়।

‌‌‘বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিকে আসা নদীগুলোতে বাধা পড়েছে অনেক বেশি। তবে পূর্ব জোনের নদীগুলো তুলনামূলক কম ক্ষতিগ্রস্ত। নদীগুলোর এখন বড় সমস্যা হলো বর্ষাকালে পানি উপচে বন্যা হয় আর শুষ্ক মৌসুমে পানিই থাকে না। কারণ উপরের দিকে থাকা দেশে পানি আগেই প্রত্যাহার হয়ে যায়,’ বলছিলেন তিনি।

শুষ্ক মৌসুমে অনেক নদী শুকিয়ে এমন রূপ নেয় বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে।

মি. ইসলাম বলেন অভিন্ন নদী হিসেবে এগুলোর পানি বণ্টন চুক্তি জরুরি কারণ নদীগুলোর ইকো সিস্টেমকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘নদীগুলোর নিজের বাঁচার জন্যই পানি দরকার। আবার কৃষির জন্য সেচের বা বৃষ্টি আর নদীর পানি ছাড়া আর বিকল্প নেই বাংলাদেশের। এসব নদীর মৎস্য সম্পদও হুমকির মুখে পড়েছে। ধরলার মতো নদীগুলো নিয়ে কাজ করেছি। তলানি ভরে গেছে এসব নদীর’।

আলোচিত ছয় নদীর হালচাল:

১. ধরলা নদী

ধরলা নদী বাংলাদেশ ও ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এই নদীটি। তবে এটি বাংলাদেশে প্রবেশের পর পাটগ্রাম থানার কাছ দিয়ে আবার ভারতে প্রবেশ করে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়েছে এবং এরপর আবার বাঁক নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

খরশ্রোতা ধরলা নদী এখন মৃতপ্রায়

বাংলাদেশ অংশে ধরলার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে দীর্ঘ সড়ক সেতুটি এই নদীর উপর অবস্থিত যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৫০ মিটার। অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম বলছেন, শুষ্ক মৌসুমে এ নদীতে পানি থাকে না বললেই চলে।

২. দুধকুমার নদী

সরকারি তথ্য অনুযায়ী দুধকুমার বাংলাদেশের রংপুর জেলার একেবারে উত্তর-পূর্ব সীমান্তের নদী। এর উৎপত্তিস্থল তিব্বতের মনকোশ নদী, যা পরে ভুটানের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে নাম ধারণ করে হরিডাক।

দুধকুমার নদী

এরপর এটি কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী থানায় সোনাইহাট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর এর নামকরণ হয় দুধকুমার। পরে পাটেশ্বরীর কাছে গোদাধর ও গঙ্গাধর নামক দুটি উপনদী দুধকুমারের সাথে মিলিত হয়। এ দুটি নদীর প্রবাহ গ্রহণ করে দুধকুমার সর্পিল গতিতে চলতে থাকে। ৫১ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে নদীটি নুনখাওয়া নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়।

৩. মনু নদী

মৌলভীবাজারের একটি নদী মনু। মূলত এটি বাংলাদেশ ও ভারতের ত্রিপুরা সীমান্তে আন্তঃসীমান্ত নদী। এ নদীর উৎপত্তিস্থল ত্রিপুরার একেবারে দক্ষিণের পাহাড়ি এলাকা। পরে কৈলাশহর এর পাশ দিয়ে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের দিক দিকে বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা দিয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে পরে ধলাই নদীতে মিশেছে।

মনু নদী

এ নদীতেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিষ্কাশন ও সেচের জন্য প্রকল্প নিয়েছিলো বাংলাদেশ যা ৭৫-৭৬ সালে শুরু হয়ে শেষ হয় ৮২-৮৩ সালে। তবে ত্রিপুরায় বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ এ নদীর পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের সাথে চুক্তি করতে আগ্রহী।

স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলে মনু নদীর পানি বেড়ে বন্যার তৈরি হয় আবার উপচেপড়া পানিতে বর্ষায় দেখা দেয় ভাঙ্গনও। পলি পরে ভরাট হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তারা।

৪. খোয়াই নদী

বাংলাদেশের হবিগঞ্জ সদর উপজেলাকে দুই ভাগে ভাগ করেছে খোয়াই নদী, যার উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় ও দৈর্ঘ্য ৯০ কিলোমিটার। এটি চুনারুঘাট, সদর, বানিয়াচঙ এর উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিলেছে মেঘনায়-কুশিয়ারায়।

খোয়াই নদী

এক সময় এ নদীই ছিল উপজেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বর্তমানেও সীমিত আকারে এ নদীর মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে মালামাল পার করা হয়।

৫. গোমতী নদী

সরকারি তথ্য মতে, গোমতি নদীর উৎপত্তি স্থলও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। রাজ্যটির অমরপুর, উদয়পুর, সোনাইমুড়ী নামক স্থানের পাহাড়িয়া এলাকায়। এটি কুমিল্লা জেলার আদর্শ সদর উপজেলার কটকাবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে বুড়িচং, ব্রাক্ষ্মণপাড়া, দেবীদ্বার, মুরাদনগর, তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে।

গোমতী নদী

বাংলাদেশ অংশে নদীটির দৈর্ঘ্য ৮৩ কিলোমিটার। এক সময় নদীটিকে কুমিল্লার দুঃখ বলা হলেও বর্তমানে নদীর উভয় তীরে বাঁধ থাকার ফলে তা কৃষি ও সেচ কাজে সুফল বয়ে এনেছে। যদি নদীর উভয় তীরে রাস্তা পাকা করা হয় তবে এটির পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসাবে গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে । তবে পানি প্রবাহ কমে আসায় উদ্বিগ্ন বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের নদী কমিশনের ২০১৮ সালের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে শুকনো মৌসুমে গোমতীর পানি ব্যাপকভাবে কমে যায়। আবার পানি কমে আসার সুযোগে বাংলাদেশ অংশে অবৈধ দখল এবং বালু ও মাটি উত্তোলনের কারণে নদীটি মৃত্যুর দ্বার প্রান্তে বলে মনে করেন অনেকে।

৬. মুহুরী নদী

এ নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। সেখানকার পাহাড়ি অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফেনীর পরশুরাম উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এ নদী। পরে ফেনী নদীর সাথে মিলে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।

মুহুরী নদী

প্রতিবছরই মুহুরী ও আশেপাশের আরো কয়েকটি নদীর পানি সঙ্কটের কারণে ওই এলাকা বোরো ধান চাষাবাদ নিয়ে সঙ্কট তৈরি হয়।

শুষ্ক মৌসুমে অনেক নদীর পানি শুকিয়ে পলি জমতে থাকে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এনকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত