ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

গ্যাজেট নির্ভর অনুভূতিহীন জীবন!

  রিয়াজুল হক

প্রকাশ : ১৪ এপ্রিল ২০২১, ০২:১৮

গ্যাজেট নির্ভর অনুভূতিহীন জীবন!

পৃথিবীর সব সম্পর্কই কেমন যেন কৃত্রিম হয়ে গেছে। মায়া, মমতা, ভালবাসা সবকিছুই কমে যাচ্ছে। নিজের বাবা-মা কিংবা অতি আপনজন মারা গেলেও সাথে সাথে স্ট্যাটাস দিতে হবে!

ভাবতেই অবাক লাগে, সবচেয়ে আপনজন মারা গেলে সবার আগে তো আমাদের মন খারাপ হওয়ার কথা। কান্নাকাটি করার কথা। নাওয়া খাওয়া ভুলে তার জন্য দোয়া করার কথা। মৃত ব্যক্তির আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার সুযোগ থাকে না। দুনিয়ার আপন মানুষই তার জন্য দোয়া করবে।

আপনার বাবা-মা কিংবা অতি আপনজনের মৃত্যুর খবর মারা যাওয়ার সাথে সাথেই আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্নভাবে এমনিতেই জেনে যায়। এলাকার মসজিদে ঘোষণা দিয়ে দেয়া হয় কখন জানাজা হবে। তারপরও যদি আপনি মানসিক ভাবে খুবই শক্তিশালী হন, তাহলে দুই লাইনের একটা স্ট্যাটাস দিয়ে মৃত্যুর সংবাদ কিংবা জানাযার সময়টা জানিয়ে দিতে পারেন। এর বেশী কি আদৌ কিছু করা সম্ভব?

কিন্তু আপনি ২/৩ পৃষ্ঠার সমান বিশাল বড় একটা স্ট্যাটাস লেখা শুরু করে দিলেন। মৃত বাবা, মায়ের লাশের পাশে বসে থেকে মোবাইলে টাইপ করে চলেছেন। এখনো লাশের গোসল দেয়া হয়নি, কবর দেয়া বাকি। সেই অবস্থায় আপনি লিখে চলেছেন- উনি আপনাদের কিভাবে মানুষ করেছেন, জীবনে কত কষ্ট করেছেন, কত অল্প আয়ে সংসার চালিয়েছেন, দিনরাত কিভাবে পরিশ্রম করেছেন, এক স্যান্ডেল পড়ে তিন বছর চালিয়েছেন, ছিড়ে যাওয়া শার্ট সেলাই করে পড়েছেন, ২টি শাড়ি পড়ে তিন ঈদে কোন কাপড় নেই, নিজে কখনো মাছ না খেয়ে আপনাকে খাইয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। স্ট্যাটাস দেয়ার মিনিট দু'য়েক পর থেকে মোবাইলের স্ক্রিনে বারবার আপনি তাকিয়ে থাকছেন। কে লাইক রিয়াক্ট দিল, কে স্যাড রিয়েক্ট দিল, কে কি কমেন্টস করলো সেসব পড়তে আপনি ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। মৃত মানুষটিকে নিয়ে কান্নাকাটি কিংবা দোয়া করার সময় কোথায়? আর দ্রুত ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পার্থিব কোন লাভবান হওয়ারও সুযোগ নাই।

আপনার লেখা পড়েই বোঝা যাবে, আপনার বাবা-মা আপনাকে মানুষ করতে অনেক কিছু করেছেন। আপনি কি করেছেন তাদের জন্য? মৃত বাবা-মায়ের লাশের পাশে বসে তাদের জন্য দোয়া করা উচিত ছিল। আপনি যেভাবে আন্তরিকতার সাথে দোয়া করবেন, আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়ে মানুষ কি দোয়া করতে বসবে? বড়জোর একটা রিয়াক্ট দিয়ে চলে যাবে।

আপনি যে স্ট্যাটাস লিখছেন, এটা ১৫ দিন পরেও লিখতে পারবেন। এক মাস পরেও লিখতে পারবেন। কেউ আটকাবে না। এখন লিখলে যেমন মানুষ পড়বে, তখনও পড়বে।

কেউ মারা মারা গেলে শুধুমাত্র আপন মানুষগুলোই মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে থাকে। এখন সেই আপন মানুষগুলো যদি নিজেরা দোয়া না করে অন্য মানুষের কাছে দোয়া চায়, তাহলে বিষয়টা সত্যিই অদ্ভুত হয়ে যায়।

সবকিছু দেখে কেন যেন মনে হয়, গ্যাজেট কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় আসক্ত মানুষগুলোর কাছে মৃত্যু সংবাদও তেমন কোন কষ্ট বয়ে আনে না। আর আমরা তো ফেসবুকে বুঁদ হয়ে যাওয়া জাতিতে পরিণত হচ্ছি।

লেখকঃ রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ জার্নাল/টিআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত