সুমাইয়া বিনতে শওকত-এর দুটি কবিতা
সুমাইয়া বিনতে শওকত
প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২১, ০৪:০৯
।। জোনাকিফুলের অরণ্য ।।
একটি জোনাকি আমাকে পথ দেখাল
সবুজে ঘেরা একটি পথ-
খইফুলের মতো নক্ষত্রকালো আকাশের নীচে
জোনাকিফুলের সবুজ ঘন কালো অরণ্য।শুধু আমি, আমি, আমি, ঝর্ণার মতো বহমান নির্জনতা
আর সেই জোনাকি! তার মহুয়া মাতাল সুর!
ক্রমশ অরণ্যে আমি বিলুপ্ত হলাম
জোনাকির গভীরতায় মায়ার অতলে হারালাম।অবাস্তব এই পৃথিবী, অদেখা এই জীবন-
দৃশ্যমান জীবনের চেয়েও অধিক সত্য
সত্যের চেয়েও অধিক সুন্দর!মেঘের মতো সুখী, শুভ্র, নিঃশঙ্ক-
ভরহীন, ইউটোপিয়ান, সুবাসিত।
উপহার দিল এক অরণ্য জোনাকি আর
এক কল্পনার রাজ্য-
শেখাল রঙতুলি ছাড়াই আকাশে আঁকতে
প্রিয় অবয়ব যখন যেখানে খুশি
তার সুর যেন মুনলিট সোনাটা, বিটোফেন
ফিফথ সিম্ফনি- চাঁদকে করে আলোকিত।মেঘে মেঘে, বাতাসে বাতাসে সে ভেসে ভেসে বেড়ায়।
আমি তার সুবাস পেতে থাকি আনমনে
বৃষ্টিতে, জোছনায়, আমার একাকীত্বে।হঠাৎ হঠাৎ দারুণ অসময়ে আমাকে চমকে দেয়
যেমন প্রাণের গভীরে কোন সকরুণ বিষাদ
আজন্ম লালিত সলজ্জ কোন সাধ
সামনে এসে দাঁড়ায়।জোনাকি আমাকে শুধুই পথ চেনালো
আমি এখন রাজকুমারী এ অরণ্যের
কল্পছবিও পারি আঁকতে।তবে সৌন্দর্য্য ক্ষণস্থায়ী বলেই সুন্দর!
যেমন জোছনা এক রাত্রির জন্য বলেই
বৃষ্টি এক মুহূর্তের জন্য বলেই সুন্দর।সে এখন তার সোনালি দ্বীপের দেশে
শত কোটি জোনাকি থেকে, ঐ আলো
যে বেশি মায়াবী, কিভাবে তাকে বোঝাই
দিন কাটে না, রাত কাটে না-
মেঘবালিকা, তারই অপেক্ষায়।।। আমার ইতিহাস ।।
শীতের রোদকে নরম মিষ্টি জোছনা মনে হয়
হলুদ সর্ষেক্ষেতের ঝিলিমিলি আবীর দিয়ে
আমাকে স্পর্শ করে
কোমলতায় উষ্ণ করে সোনালী নদীর স্রোতের মতো।যে আলোর বন্যাতে
অনাদিকালের প্রবাহতে আমার মতোই
সুপ্রাচীন এক সৌন্দর্য্য-সৌরভ-সুষমা
জীবন খুঁজে পেত রাখাল বালক কালো নিষাদ।আজকের এই প্রণয়, গভীরতা, বিষাদের ইতিহাস
সেই বালকের চোখে, তার বাঁশির সুরে।
তারা গুটি গুটি পায়ে এসেছিল এই বদ্বীপের বালিতে
তাদের পায়ের ছাপ আজো দেখতে পাই।এই সুবিশাল সমুদ্র যতোই আঘাত হানুক তার ঢেউয়ে মুছতে পারে না।
আমি আমার মাঝেই বহন করে চলি তাদের অস্তিত্ব তাদের চিহ্ন, তাদের প্রবৃত্তি, তাদের প্রাচীনতা।
তারা এ প্রকৃতির অমলধবল সন্তান,
আমার পূর্বপুরুষ-
আমি কি অস্বীকার করতে পারি আমার অস্তিত্ব?
আমার ইতিহাস?বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম