ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

অন্তরাশ্রমের কবি এনামূল হক পলাশের ৪৪তম জন্মদিন

  পলিয়ার ওয়াহিদ

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২১, ২০:৩১

অন্তরাশ্রমের কবি এনামূল হক পলাশের ৪৪তম জন্মদিন
ছবিতে- এনামূল হক পলাশ

ভাটির কণ্ঠস্বর, সহজের সাধক, অন্তরাশ্রমের কবি এনামূল হক পলাশের ৪৪তম জন্মদিন আজ। আমাদের পক্ষ থেকে কবির প্রতি রইলো অনন্ত শুভকামনা। তিনি বর্তমানে বাংলা ভাষার সহজিয়া ধারার একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি। কবি এনামূল হক পলাশ ১৯৭৭ সালের ২৬ জুন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বাদে চিরাম গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস একই উপজেলার বামনগাঁও গ্রামে।

তাঁর প্রপিতামহ মরহুম হাজী বাহাদুর আলী তালুকদার ছিলেন ইউনিয়ন কাউন্সিলের সন্মানিত প্রেসিডেন্ট। তাঁর বড় পুত্র মরহুম আব্দুল মালেক তালুকদার হচ্ছেন কবির পিতামহ। নেত্রকোনার মদন উপজেলার চানগাঁও দেওয়ান বাড়ির কন্যা মরহুমা দেওয়ান রেজিয়া আক্তার কবির পিতামহী। মরহুম আব্দুল মালেক তালুকদার ও মরহুমা দেওয়ান রেজিয়া আক্তারের প্রথম পুত্র মরহুম এমদাদুল হক এর ঔরসে এবং একই উপজেলার বাদেচিরাম গ্রামের মরহুম আব্দুল মান্নান তালুকদার ও মরহুমা হাজেরা খাতুনের প্রথম কন্যা নুরুন্নাহার হক এর গর্ভে কবি এনামূল হক পলাশ জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর দাদা প্রথম জীবনে ব্যবসায়ী, পরে গৃহস্থ এবং নানা ছিলেন ভিলেজ পোস্ট মাস্টার ও একইসাথে স্বচ্ছল গৃহস্থ। পিতা ছিলেন বড় ব্যবসায়ী ও উদার মনা, দিলখোলা, বেখেয়ালি, অপরিনামদর্শী মানুষ। প্রচণ্ড সম্ভাবনা ও স্বচ্ছলতার ভেতর দিয়ে কবির শৈশব কেটেছে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে কবি সবার বড়।

শিশুকাল নিজ গ্রামে কাটালেও পিতার ব্যবসাজনিত কারণে তাঁর শৈশব কেটেছে বারহাট্টার গোপালপুর বাজারে। প্রথমে তিনি বারহাট্টার গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুশ্রেণিতে ভর্তি হন এবং একবছর পরে বারহাট্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে একই স্কুল থেকে ১৯৮৮ সালে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন।

বারহাট্টা সি.কে.পি. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু করে অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ বৃত্তি পান এবং পরের বছর ড. ইন্নাছ আলী বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৯৪ সালে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। স্কুলে পড়াকালীন সময়ে বারহাট্টা পাবলিক লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর নিয়মিত পাঠক হিসেবে ব্যাপক অধ্যয়ন করেন। ১৯৯৪ সালে উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি থেকে প্রকাশিত মাটির সুবাস নামক একটি পত্রিকায় তাঁর একটি কবিতা প্রকাশিত হয়, যা ছিল ছাপার অক্ষরে তাঁর প্রথম কবিতা। প্রকাশিত কবিতার জন্য তিনি মনি অর্ডার যোগে চল্লিশ টাকা সম্মানী প্রাপ্ত হয়েছিলেন। উক্ত চল্লিশ টাকার খরচ বাদে সাতত্রিশ টাকা পঁচিশ পয়সা হাতে পেয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারমিডিয়েট কলেজে তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শুরু করে ১৯৯৬ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এ সময় তিনি ময়মনসিংহ শহরের কেওয়াটখালী এলাকায় রেলওয়ে কলোনীকে বসবাস করতেন। সাপ্তাহিক যায়যায়দিন পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় নিয়মিত লেখা পাঠাতেন। প্রায় সংখ্যায়ই তাঁর লেখা ছাপা হতো এবং তিনি মনি অর্ডার যোগে সম্মানী পেতেন।

১৯৯৭ সালে পিতার অংশীদারী ব্যবসার সুবাদে তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং সেখানে দৈনিক ২০০ টাকা বেতনে চাকরি নিয়ে সরকারি তিতুমীর কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞানে অনার্স ভর্তি হন। ১৯৯৮ সালে বন্যাজনিত কারণে পিতার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পারিবারিক সঙ্কট এড়াতে মায়ের কানের দুল বিক্রি করে বাসা ভাড়া পরিশোধ করে তিনি টিসি নিয়ে নেত্রকোনা সরকারি কলেজে চলে আসেন এবং একই কলেজ থেকে ২০০২ সালে দ্বিতীয় শ্রেণীতে স্মাতক (সম্মান) উত্তীর্ণ হন। নেত্রকোনা সরকারি কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়ার সুযোগ না থাকায় তিনি গুরুদয়াল সরকারি কলেজে মাস্টার্স ভর্তি হয়ে ২০০৪ সালে উদ্ভিদবিদ্যায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

১৯৯৮ সালে একটি প্রগতিশীল বাম সংগঠনের সাথে তাঁর যোগাযোগ স্থাপন হয় এবং তিনি প্রগতিশীল বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় রাজনৈতিক বিষয়ে ব্যাপক অনুশীলন ও পড়াশোনা করেন। পিতার ব্যবসায়ীক অবস্থা খুব খারাপ থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি ও কোচিং করিয়ে নিজের খরচ সংগ্রহ করতেন। এই সময়টা তিনি অনেক পড়াশোনা এবং কবিতা লেখার ভেতর দিয়ে কাটিয়েছেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সময় কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সাথে যুক্ত থেকে সাংবাদিকতা করেছেন। ২০০৩ সালে তিনি রাজনীতি ছেড়ে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন।

২০০৫ সালে পারিবারিক সম্মতিতে নেত্রকোনা শহরে মাহবুবা এনাম সোমার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রী পেশায় একজন প্রাথমিক শিক্ষিকা। ২০০৬ সালে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় পিজি হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে মৃত কন্যাসন্তানের জন্ম হয় এবং নিজ হাতে কন্যাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করেন, যা তাঁর জীবনের বেদনাদায়ক এক অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করেন কবি।

২০০৭ সালে ঈদুল আযহার দিন নামাজে যাওয়ার রাস্তায় কবির পিতা স্ট্রোক করেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সংসারের সকল দায়িত্ব তখন থেকে কবির উপর বর্তায়। ২০০৯ সালে তিনি পুত্রসন্তানের জনক হন। তাঁর পুত্রের নাম আহনাফ তাজওয়ার হক। বর্তমানে পুত্রের বয়স আট এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। একই সালে কবির প্রথম বই “অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ চাই” প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “জীবন এক মায়াবী ভ্রমণ” প্রকাশিত হয়। ২০১৬ সালে তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ “অন্ধ সময়ের ডানা” প্রকাশিত হয় ও “লেখা প্রকাশ সাহিত্য সন্মাননা- ২০১৬” এবং বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষক সোসাইটি কর্তৃক “অমর একুশে স্মৃতি পদক- ২০১৬” প্রাপ্ত হন।

২০১৬ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রতিষ্ঠিত নেত্রকোনার মালনী এলাকায় বিশ্ব কবিতার আবাসস্থল বা হোম অব ওয়ার্লড পয়েট্রি খ্যাত “কবিতাকুঞ্জ” প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে অবকাঠামো গঠনের কাজে যুক্ত থেকেছেন এবং একই প্রতিষ্ঠানের প্রথম পরিচালক হিসেবে কবি কর্তৃক নিযুক্ত আছেন। ২০১৭ সালে কবি, লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যবহারের জন্য তিনি নেত্রকোনা শহরের মালনী এলাকায় গড়ে তুলেছেন “অন্তরাশ্রম” নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা।

২০১৭ সালে চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ “অন্তরাশ্রম” ও পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ “মেঘের সন্ন্যাস” প্রকাশিত হয় এবং নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চর্চা সাহিত্য আড্ডা কর্তৃক তাদের শততম আসরে অন্যান্যদের সাথে “চর্চা শুভেচ্ছা সন্মাননা- ২০১৭” প্রাপ্ত হন। ২০১৮ সালে ষষ্ঠ কাব্য গ্রন্থ “পাপের শহরে” প্রকাশ হয় এবং কবির চল্লিশ পূর্তি উপলক্ষে কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে “আশ্রম পাখির মায়াপথ” নামে একটি প্রকাশনা গ্রন্থ বের হয়।

২০১৯ সালে সপ্তম কাব্য গ্রন্থ “জল ও হিজল” ২০২০ সালে একটি শিশুতোষ বই “ বইয়ের পাতায় ফুলঝুরি” এবং “ভূমি ব্যবস্থাপনার সরল পাঠ” নামে একটি গবেষণাধর্মী বই প্রকাশিত হয়। একই বছর তিনি ভারত ভ্রমণ করেন। ২০২১ সালে শিশুতোষ বই “ কলমি লতার ফুল” এবং “ধর্মবিশ্বাস আখ্যানের মত সুন্দর” নামে একটি প্রাচীন আরবী সাহিত্যের কবিতা অনুবাদ বই প্রকাশিত হয়।

কবির সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জীবনের বিচিত্রতা আমাকে দিন দিন সহজ হওয়ার সাধনার দিকে নিয়ে গেছে। তাই সহজের সাধনা করি। আমি সাধু নই। সাধু হতেও চাই না। সহজ হতে চাই। অন্তরাশ্রমের পথ বেঁয়ে পৃথিবীর পথে পথে ছড়িয়ে দিতে চাই ভালোবাসা ফুল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত