ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

মুষ্টিমেয় দেশের আয়নাবাজি আর কতোটা সময় পার করবে?

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২১, ২০:১৯

মুষ্টিমেয় দেশের আয়নাবাজি আর কতোটা সময় পার করবে?
রাজীব কুমার দাশ

পেশার মানদণ্ডে বিভিন্ন দেশের সরকারের সেবকগণ কী কী করবেন, করবেন না, সবকিছু নিজেদের বিধি-পরিপত্র, দেশের প্রচলিত আইন, সার্ভিস রুল শৃঙ্খলা নিয়মে বেঁধে দেয়া হয়েছে। সামরিক, আধা সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনীর ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন স্তর থেকে অধীনস্থদের কাছে যোগাযোগ, সমন্বয় এবং নিয়ন্ত্রণ করার একটিই ব্রহ্মাস্ত্র, তা হলো ‘চেইন অব কমাণ্ড’।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে জনগণের সেবকগণ সযত্নে নিজেদের সেরাটা উপহার দিয়ে জনগণের হৃদয়ে স্থান নিতে পারলেও এশিয়া হয়ে আফ্রিকা মহাদেশের মুষ্টিমেয় কিছু দেশের জনগণের সেবকগণ কেন নিজেদের জনগণের কাতারে নিয়ে এখনো ‘হরিহর আত্মা’ ভাবতে পারছেন না! তা বোধগম্য নয়।

:তাহলে দায়ী কে?

-রাষ্ট্র নামের লোকাল ট্রেনের অগস্ত্য মানসিকতা যাত্রা;

- রাজনীতির ‘লুটে পুটে চেটে খাই’ তত্ত্ব

-জাতিতত্ত্ব ভারসাম্যহীনতা

-রাষ্ট্রের মাঝে অসংখ্য নতুন ঘরাণা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের বুণিয়াদি প্রশিক্ষণ

-বিভিন্নভাবে জাতীয় চেতনাবিহীন প্রজন্ম তৈরি করা

-সংবিধানের বারবার বাইপাস সার্জারি করে রাষ্ট্রের চেতনার চোখ-মুখ হার্ট লিভার খুলে নেয়া

-জাতীয় সংস্কৃতিকে হত্যা করা

-যৌনতাকে পুঁজি করে জাতীয় চেতনাহীন সংস্কৃতি, ভাবধারা ছড়িয়ে দেয়া

-রাষ্ট্রের টাকায় জাতিগত/সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ঘৃণা ছড়ানো

-রাজনীতিতে সজ্জনের অনাগ্রহ

-দস্যিপনা করে দলে দলে প্রতিষ্ঠা, লাভ করে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারক সংস্কৃতি গবেষক তৈরি করা

- জাতীয় চেতনা, জাতীয় নেতাদের অসন্মান করে সরাসরি নাকচ সংস্কৃতি ভাবধারা তৈরি করা

:কিছু কিছু রাষ্ট্রের এ সমস্যাগুলো এখন প্রকট হতে প্রকটতর রূপে ধরা দিয়েছে। এমন কী সেসকল দেশে জাতীয় চেতনা বলতে ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই।

:সাধারণ আমজনতা লোকাল ট্রেনে বন্দি। ওদের দরকার প্রতিদিন ক্ষুধাসুরকে বধ করে শান্তির ঘুম। এদের শালা বললে হাসে, দুলা বললে বসে পাশে। এদের জীবনচক্র ব্যাঙের মতো, ক্ষুধা ও যৌনতার মাঝে বন্দি। কে কী করলো- না করলো সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। সহজ-সরল আমজনতার কাঁধে চেপে এসকল দেশে প্রতিদিন রাষ্ট্রের ভৃত্য হন রাজা, রাজন্য হয়ে যান রাবণ।

‘টাকা প্রথম ঈশ্বর’ তত্ত্বে রাতারাতি সবকিছু পাল্টে যায়। রাজনীতি, সমাজনীতি, সমরনীতি, অর্থনীতির বড় বড় পাঠ্যবিষয় এক হয়ে কেঁদে ঘোলা জল পান করে। দেশের কথিত বিবেক সুশীলগণ বিবেকের দংশন ভুলতে দামি পানশালায় থাকেন। তাদের পবিত্র আত্মা বেধড়ক কষ্টে বারবার মুক্তি চান।

সুখের ফোয়ারা হাতে রাষ্ট্রের চাকর-বাকর সেবক পণ্ডিত দিকে দিকে সবদিকে সামন্তপ্রভু হয়ে বসে থাকেন। তাদের চক্রব্যূহ ছলনা যাঁতাকলে পিষে আমজনতা বেঘোরে প্রাণ দিয়ে শতভাগ সুখের টিকেট ফেরত দেন।

সেইসব দেশের যুযোগসন্ধানী সরকারি-বেসরকারি সেবক হয়ে রাজন্যবর্গের দল এতোদিন পুষ্টিহীনতায় ভুগে যৌবনকে আটকে রাখতে পারলেও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যৌবনের সব সুইসগেট ফারাক্কা বাঁধের মতো একসাথে খুলে দেন। যৌবনের প্লাবনে অগুনতি নারী চিরবেদনার জলে তলিয়ে যান।

:সরকারি সেবকের কোমরে চর্বি জমে- মনের ভাষা, মুখের ভাষা পাল্টে কেউ ব্যবসায়ী, কেউ শিল্পপতি বনে রাতারাতি জমিদার হয়ে তাক লাগিয়ে দেন। প্রকৃত ব্যবসায়ী হাত গুঁটিয়ে চলে যান। কপর্দকহীন চেলা চামুণ্ডা রাজনীতির ভেলায় চড়ে নতুন বিলাসবহুল টাইটানিক প্রমোদ তরীতে অহর্নিশি রাত কাটান। সরকারের প্রতিষ্ঠানে ঘাপটি মেরে থাকা শত্রুদল দিনে সরকারের বন্দনা করেন, রাতে বেছে বেছে সরকারের আপনজনদের হত্যা করেন। এক সময়ে সরকারের কাঁধে চেপে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির মতো: নতুন দক্ষিণ আফ্রিকা দখল করে নিজেদের ক্ষমতার জানান দেন।

:এখন সভ্যতার মধ্যলগনে এসেও এই সব শতভাগ ভণ্ড দেশের ন্যাক্কারজনক ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি মামুলি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার জানামতে-দেখামতে এ পর্যন্ত পৃথিবীর কোনও সভ্য দেশে গড়ে উঠেনি এ ধরনের ভয়ঙ্কর সংস্কৃতি! মনে হয় উঠবেও না।

:গুটিকয়েক দেশের ভীষণ জাতীয় দুর্বাসা সংস্কৃতির কারণে বারবার পৃথিবীতে তৈরি হয়েছে সভ্যতার মহাসঙ্কট। সে সঙ্কটে বারবার লক্ষ কোটি প্রাণের তাজা রক্তে আলপনা এঁকেছে নিরীহ জনতা। সহজ সরল আমজনতার ভাগ্যের কোনোদিন পরিবর্তন আসেনি, তারা চেয়েছে একটু সুখের গ্যারান্টি, বিনিময়ে পেয়েছে- যাবজ্জীবন হতাশ বিবেকের চিৎকার।

:এসব দেশের জাতীয় চেতনা প্রশ্নে আপোষহীন সিপাহীরা এখনও তাদের সুচতুর দেশদ্রোহী মীরজাফর, জগৎশেঠ, খন্দকার মোশতাক ঘরাণা স্যারের গদবাঁধা কথিত ডিসিপ্লিন, ঔদ্ধত্য আচরণ, গোপন রিপোর্টের শোল বোয়াল কোরালের খোরাক হয়ে অহর্নিশি চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে। এখনও এ সকল দেশের রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানে বোয়াল কোরাল শোল মাছের নতুন পোনা কিলবিল করছে। জাতীয় চেতনা, স্বাধীনতার মহান স্থপতির হাতে গড়া চেতনা পিলারগুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। দেশপ্রেমিক সিপাহীদের আর্তনাদ কেউ কোনোদিন শুনতে পায়নি, পাবার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।

বর্ণচোরা ব্যক্তিত্বের কারণে এ সকল দেশে রাষ্ট্রযন্ত্রের বিশ্বস্ত আপনজন খুঁজে বের করতে দুরূহ এভারেস্ট জয়ের মতোই বেগ পেতে হয়েছে বারবার। এ সকল দেশের মানুষের জিহ্বা-আলজিহ্বাকে বিশ্বাস করে ঠকতে হয়; কামড় খেয়ে রক্তাক্ত হতে হয়। হৃদয় মন কখন কী বলতে চায়; নিজে ছাড়া সারাজীবন এক বিছানার সঙ্গী জানতে পারে না। এক অঙ্গের বহুরূপী চিত্র-বিচিত্র হকার ক্যানভাসার বায়স্কোপ সকাল দুপুর সন্ধ্যাবেলা গড়িয়ে নিজে ছাড়া কেউ বুঝতে পারে না।

:সুন্দর পৃথিবী! মুষ্টিমেয় কিছু অসভ্য দেশের কুৎসিত মুখগুলোর আয়নাবাজি আর কতোটা সময় পার করবে; একদিন হয়তোবা সময়ই বলে দিবে।

লেখক: রাজীব কুমার দাশ, প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক, বাংলাদেশ পুলিশ

মেইল: [email protected].

  • সর্বশেষ
  • পঠিত