ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

শিকার

দানব বোয়ালের লড়াই

  মোস্তফা কামাল পাশা

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:২৪  
আপডেট :
 ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:০৭

দানব বোয়ালের লড়াই

এক সময় দুর্দান্ত শিকারি ছিলাম। মাছ বা পশু-পাখি কিছুই বাদ ছিল না। শিকারের মাছ মাংসই ছিল প্রিয় ও পছন্দের খাবার। এ’নিয়ে বেশকিছু রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা লিখেছি, নিজের সম্পাদিত ‘গাঙচিল’ শিশুতোষ পত্রিকায়, নাম-ছদ্মনামেও। কিছু গল্প আকারে ছাপা হয়েছে অন্য কাগজে। জীবনে ব্যর্থতা অনেক। ব্যর্থতার কাঁটায় রক্ত ঝরাতে ঝরাতেই প্রাপ্তির গোলাপ ছোঁয়া। আসলে এমন প্রাপ্তি সুখের কোন তুলনা নেই। সহজ প্রাপ্তি অভ্যাসের সাথে মিশে যায়, কিন্তু পাথর ক্ষুধে কোমল শাঁস ছেঁকে আনা অর্জনই বটে। এমন অর্জনের সৌরভ আত্মবিশ্বাসের গোড়ায় নিত্য সারজল যোগান দেয়। ‘গাঙচিল’টা মোটামুটি পাঠকপ্রিয় হলেও বাঁচাতে পারিনি। ২০০১ থেকে ২০০৭’র প্রথম পক্ষ পর্যন্ত বিরতি থাকলেও প্রায় প্রতি মাসে প্রকাশিত হতো গাঙচিল। উদ্বোধনী সংখ্যায় দু'বাংলার কিংবদন্তি সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হাতে লেখা আশীর্বাদ চিঠিসহ ছড়াও ছাপা হয়। দেশের প্রতিষ্ঠিত অনেক শিশুতোষ লেখকের গল্প, কবিতা, ছড়া থাকতোই বিভিন্ন সংখ্যায়। বর্ষপূর্তিতে হোটেল আগ্রাবাদে বেশ ক’বার পাঠক-লেখক সমাবেশও হয়। ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘গাঙচিল পদক ও সম্মাননা’ দেয়া হয়, নানা বিভাগের সেরা লেখকদের। হোটেল আগ্রাবাদের ইছামতি হলে বেশ জমকালো আয়োজন ছিল এটা।

মান কেমন ছিল, লেখক-পাঠকই বিচারক, আমি না। ঘা’টা খুঁচিয়ে রক্ত ঝরাল, বোয়াল শিকারের রোমাঞ্চ। মানসম্মত কিশোর পত্রিকা প্রকাশ এদেশে কত কঠিন, যারা হাত দিয়েছেন ভালো বুঝবেন। সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব। মানসম্মত শিশুতোষ লেখা সংগ্রহ যেমন কঠিন, তেমনি শিশুতোষ আকর্ষণীয় বহুরঙা প্রচ্ছদ, ইলাস্ট্রেশন, গেটআপ মিলিয়ে প্রতি সংখ্যায় খরচও বিশাল। মার্কেটিং সমস্যাতো আরো জটিল। বিক্রির টাকা হাতে আসা বিশাল সৌভাগ্যের ব্যাপার। পারিনি, বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তাই না, কোন কপি পর্যন্ত হাতে নেই। যেমন নিজের কোন লেখার কপি বা প্রকাশিত সর্বশেষ বই ‘আল্লাহর ঘরে আগন্তুক’ ছাড়া কোন বইও আমার কাছে নেই। এখনো গাঙচিল এর নিয়মিত লেখক স্বপন দত্ত, ওমর কায়সার, রাশেদ রউফ, শামসুদ্দিন হারুন, উৎপল বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা, নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ আরো অনেকে যোগাযোগ হলেই ক্ষতটা খুঁচিয়ে দেন। কিন্তু উত্তর নেই। আসলে ওনাদের আবেগ এবং ভালবাসা ছিল ‘গাঙচিল’। তো, লাশ কাটাছেঁড়া বাদ। আসি শিকার প্রসঙ্গে। চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ ডেবায় ‘৭৫ সালে ৩২ সের বা প্রায় ৩০ কেজি ওজনের বিশাল রুই শিকারের গা’ ছমছম ও বেহুঁশ শিকারির লুঙি খুলে পড়ার রসালো বর্ণনা দিয়েছেন এক সাইবার বন্ধু। পড়েই বোয়াল শিকারের পুরানো রোমাঞ্চটা তরতাজা হয়ে স্মৃতি ভাঁড়ারে গুতোগুতি শুরু করে। তাই বোয়াল চর্চা।

সালটা সম্ভবত ১৯৮৩ বা '৮৪। তখন সাংবাদিকতা পেশা, নেশার মতো রক্তে মিশে গিয়ে শিকারের নেশাকে হটিয়ে দিতে চাইছে। দু’নেশার হুলস্থুল দ্বন্দ্বের সময় সাপ্তাহিক ছুটিতে গ্রামে আসি। আগের সপ্তাহে বড় বড় পুটি মাছ যোগাড় করে মুখবন্ধ টিনের কৌটায় হিঙ মিশিয়ে রেখে যাই। রুই, মৃগেল, কাতল শিকারের চে’ বোয়াল শিকারে বেশি থ্রিল খুঁজে পাই। হুইল নিয়ে দিনভর সময়ও নষ্ট হয় না। পুকুর বা নদীতে ধারেকাছে বোয়াল থাকলেই হলো। টোপ ফেলার ১০/১৫ মিনিটের মাঝে টোপ গিলবেই। তারপর সাইজ অনুযায়ী লড়াই। কী যে শিহরণ এ’লড়াইয়ের। একমাত্র বোয়াল শিকারি ছাড়া কেউ কল্পনাও করতে পারবেন না। হুইল ছিপের বদলে বোয়াল শিকারে শক্ত বাঁশের ছিপই ব্যবহার করেছি। বক্সির হাটে বিশেষ ব্যবস্থায় যোগাড় হয়ে যেত। মাছ টোপ গেলার পর সুতো ছাড়ার অপশনই নেই। একদম ডাইরেক্ট অ্যাকশন। সাহস এবং দক্ষতাই আসল। ৩/৪ কেজির বোয়াল দ্রুতই কাবু হতো। কিন্তু বড় হলে লড়াই হতো শেয়ানে শেয়ান। হুইল ছিপে বড় রুই, কাতলের সাথে যুদ্ধে চরম উত্তেজনায় আপনার লুঙি খুলতেই পারে। কিন্তু হুইল ছাড়া বড় বোয়ালের সাথে লড়াইতে এমন সুযোগ নেই। বেশি উত্তেজনায় মুহূর্তেই বড় অঘটন ঘটবেই। প্রচণ্ড টানে আপনি হয় পানিতে ডুববেন অথবা ভয়ঙ্কর ঝটকানির পর ঝটকানি দিয়ে বড়শি ভেঙে বা উগলে বোয়াল আপনাকে লেজ দেখাবেই। মাথা ঠাণ্ডা রেখে লড়াই দিতে হয় সাবধানে। কিন্তু অপ্রিয় সত্য, বড় মাছ টোপ গিললে কোন শিকারিই মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন না। এটাই শিকারের আসল ক্লাইম্যাক্স। মারাত্মক ক্লাইম্যাক্স এর টানে হঠাৎ শিকারের নেশা ছেড়ে দেয়াও খুব কঠিন।

এদিন শিকারের খুব একটা তাগিদ ছিল না। কিন্তু বিলের মাঝে আমাদের নির্জন বড় পুকুরটায় (হাদির পুকুর) একটা দানব বোয়ালকে ঘিরে প্রচুর ফিকশন, ভুতুড়ে গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। অনেক চেষ্টায়ও ওটা ধরা যাচ্ছে না। এমনিতে পুকুরটা নিয়ে অনেক ভুতুড়ে কাহিনি ডালপালা ছড়িয়েছে আশপাশের অনেক গ্রামে। দিনেও একলা কেউ পুকুর পাড়ে যায় না। একবার রাতে মাছ চুরি করতে গিয়ে এক চোর বিশাল কাতলের গুতো খেয়ে মারা যায়। দুদিন পর লাশ ভাসে পুকুরে। এ ঘটনা নিয়েও অনেক রোমহর্ষক গল্প ছড়ায়। পুকুরটায় মাছ বাড়ে খুব দ্রুত। বিশাল বিশাল রুই, কাতলের সাথে আছে ভীতিকর বড় বড় গজার মাছ। ঘন শ্যাওলা ধাম থেকে হঠাৎ লাফ দিয়ে ছোট ছোট জলজ পাখিও ধরে ফেলে বড় গজার। বোয়ালটা এরমাঝে ছোট মাছের যম হয়ে উঠেছে। বারবার জাল ফেলেও আটকানো যায় না। জাল ছিঁড়ে বা উল্টে পালিয়ে যায়। ইচ্ছে, নিজে চেষ্টা করব ধরতে। কিন্তু সময়ে মেলে না। এবার পোষা ‘মাছি’রাও খুব জ্বালাচ্ছে। মাছি মানে ক’জন ডানপিটে, সাহসী বালক। আমার ভক্ত ও শিকারের বিশ্বস্ত সোর্স। ওরা পাহাড়ে পশু-পাখির আনাগোনা, পুকুর, দিঘি, নদীতে বড় মাছ বা বোয়ালের ঝাপ্টার খবর রাখত। সব খবর প্রায় মিলেও যায়। শিকারের সময় মাছির মতো লেপ্টে থাকে গায়ে গায়ে। ওরাও প্রায় নেশাগ্রস্ত, শিকারের ভাগও নিত। শিকারে দীর্ঘ বিরতি ক্ষিপ্রতায় মরচে ধরে যাচ্ছে। খুব বিরক্তও করছে। ওদের ধার দেয়াও দরকার। তাই অভ্যাসের টানে টোপ যোগাড় করি। সিরিয়াস না হয়ে উপায়ও ছিল না। বোয়ালটা না ধরলে গল্পগাঁথা, কেচ্ছা বাড়বে; অন্য মাছের নিরাপত্তা ঝুঁকিও। অবশেষে মাছ শিকারের কীটস, ছিপ, বাঁশ, টোপের টিন কখন জানি হাতে উঠে আসে। তখন মা ছিলেন-মমতার শীতল ছায়া বিলিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আপত্তি তোলেন, এত কড়া রোদে বোয়াল ধরতে কেন যাবি? বরং বিশ্রাম কর বাপ। তিনি উৎকন্ঠায় থাকলেও বাধা দেন না। জানেন, দিয়েও লাভ নেই।

‘দেরি হবে না মা, তাড়াতাড়ি ফিরছি’ আশ্বস্ত করে বেরিয়ে পড়ি সকাল ১০টা নাগাদ। মাছি সব আশপাশেই ছিল। বোঝার ভাগ তুলে নেয় হাত থেকে। রুই, মৃগেল, কাতল শিকারে চুপচাপ থাকতে হয়। টোপ ফেলার জায়গা সার্কেল করে আগের রাতেও তৈরি সুগন্ধি চারা ছিটাতে হয়, টোপ ফেলার আগেও। বোয়ালেরটা উল্টো। হিংপচা পুঁঠির গন্ধ অসম্ভব ঝাঁজালো। নাড়িভুঁড়ি ছিঁড়ে বেরিয়ে আসতে চায়। নাক-মুখে টাওয়েল পেঁচিয়ে নীল হয়ে যাওয়া পুঁঠি বোয়ালের বিশাল বড়শিতে গাঁথতে হয়। তীব্র ঝাঁজ ও গন্ধ ছড়ায় প্রায় এক বর্গ কিলোমিটারজুড়ে। টোপ ফেলে ছিপের দু'পাশে বাঁশ দিয়ে পানি পিটাতে হয়। পানির আলোড়ন যত জোরে হবে, হিংপচা পুঁঠির ঝাঁজ তত দ্রুত টোপের কাছে টানবে বোয়ালকে। পুকুরে একটা বোয়াল থাকলেও দোষ নেই-পাগলের মত ছুটবেই।

নির্জন পুকুর, তিন পাড়ে ঘন জঙলা। ভাদ্রের তীব্র ঝিমধরা রোদে দূর দিগন্তে আলেয়ার খেলা। বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দুরে। পরিস্কার পাড়ে সুবিধামত জায়গা খুঁজে নিয়ে বসি। বাড়ির কাছের শিকারে লুঙির নিচে সুতি সর্টস আর গেন্জিই পোষাক। ছিপটা বেশ মজবুত। বাড়তি নিরাপত্তায় খুব শক্ত নাইলন সুতো পেঁচানো আছে। বড়শির নাইলনের সুতো জলহস্তির টানেও ছেঁড়া কঠিন। টিনের সিল খুলে টোপ বের করি। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ঝাঁজালো গন্ধ হামলে পড়ে চারপাশে। মাছিরা নানা ক্যারিকেচার করে নাক ঢাকে। ঝাঁজ ডেকে আনে নীল মাছিদেরও। স্প্রে ছিটিয়ে তাড়িয়ে দিতে হয়, না হয় বিরক্ত করেই মারে। ধীরেসুস্থে বিশাল আকশি সাইজ মোটা বড়শিতে গোটা পাঁচ পুঁঠি গেঁথে টোপ ফেলি কাছাকাছি। মাছিরা পানিতে পিটাতে থাকে বাঁশ। মিনিট পর ইশারা দিতেই উঠে আসে পাড়ে। মাত্র মিনিট তিনের বিরতি। কী প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস দানব বোয়ালের! একটু নড়চড়ার পর ফাৎনা দ্রুত গায়েব। তৈরিই ছিলাম, দিলাম হেঁচকা টান। ওরে আল্লাহ! টানের সাথে সাথে টোপ গেলা শিকার প্রচণ্ড ঝাপ্টা দিয়ে লাফ দেয়। কত্তোবড় বোয়াল, কী তার শক্তি! নার্ভাস হলেও মাথা ঠাণ্ডা রাখি, নেমে পড়ি পানিতে। সর্টস থাকায় লুঙি খোলাই ছিল। বড়শি গাঁথা দানব ডানে-বায়ে-সামনে গোত্তা খেতে থাকে, সাথে ভয়ঙ্কর টান। পুকুরে কাদা পানির তীব্র ফোয়ারা ছুটছে। টানের ছোটে হাত ছিঁড়ে যাবার যোগাড়। কয়েকবার পড়েও যাই, ছিপ ছাড়ি না, উঠে দাড়াই দ্রুত। সুতো ঢিল দিলেই বিপদ, পাল্টি খেয়ে ভাগবেই। ততক্ষণে বিলে খেতের কাজ করা কিছু কৃষক জুটে গেছেন। ছিপেও হাত লাগান। বুঝলাম বেটাকে কাবু করা কঠিন হবে। শিকারের কীটসে নাইলনের শক্ত রশি ছিল। মাছি সর্দার কানুকে ইশারা দিতেই বুঝে যায়। কানু রশি বের করে ছিপের গোড়ায় নইলনের সুতোর ভেতরে ঢুকিয়ে শক্ত করে ছিপে বেঁধে নেয়। পরপরই ছিপ ছেড়ে দিয়ে রশি ধরে উঠে আসি কিনারে। ফাঁক বুঝে সর সর করে ছিপ নিয়ে উড়াল দেয় দানব। চলে যায় মাঝ পুকুরে। ছিপটা ফাৎনার মতো ডুবছে ভাসছে। আস্তে আস্তে রশি ছাড়ছি। কিছুটা শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগও পাই। লাইলনের রশিটাও স্পেশাল, ছেঁড়াই অসম্ভব। রশির বান্ডিল চৌকস কানুকে হস্তান্তর করে টাওয়েল মুড়িয়ে গায়ের কাদাজল মুছে নিই। দ্রুত পানিও গিলে নিই ক'ঢোক। কানুর দল তাকে সহযোগিতা দিচ্ছে। ফাঁকটা আধ মিনিটেরও কম। পরপর দায়িত্ব বুঝে নিই। সময় থমকে আছে একদম। দানবটা পুকুর জুড়ে দাপাদাপি, লাফালাফি করছে প্রচণ্ড শক্তিতে। অন্য কিছু মাছও ভয়ে লাফাচ্ছে। কী এক দৃশ্য! থ্রিল, সাসপেন্সে মিলেমিশে মাখোমাখো! যারা এমন দৃশ্য দেখেননি, বোঝানো সম্ভব না। টানা দেড় ঘণ্টা বেদম ফাইট দিয়ে একটু দম নেয় দানব। মাঝ পুকুরে ভেসে উঠে ছিপ। সুযোগ বুঝে ধীরে ধীরে টানতে থাকি রশি। শিকার চুপচাপ। জানি বেশি সুযোগ দেয়া যাবে না, কারণ এদের শক্তি, দম অদম্য। আস্তে আস্তে গুটিয়ে এনে ছিপের দখল পেয়ে যাই। বেটা চুপচাপ। কিন্তু ছিপ হাতে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়, সেকেন্ড বা ফাইনাল রাউন্ড ফাইট। আবারও প্রচণ্ড মোচড়ের সাথে দানবীয় টান। দু'জন কৃষক সাথে না থাকলে হয়তো পুকুরেই ভাসতাম। আর কতক্ষণ লড়াই চলে মনে নেই। শেষ পর্যন্ত কাবু হয় দানব। নেট নিয়ে কানুর সাথে পুকুরে নামেন আরও দু'কৃষক। প্রবল ধস্তাধস্তি শেষে নেটে মাথা গলান তিনি। চকচকে পুরো শরীর বাইরে। পাড়ে তোলার পর সবার কী সে উল্লাস! ওর ঝোলানো গুম্ফের সাইজ নাইলন রশির চে' মোটা। হাল্কা গোলাপী আভার চকচকে সাদা শরীরে পিছলে পড়ছে দুপুর গড়ানো তীব্র রোদ! শরীরের প্রচণ্ড ঝাঁকুনির সাথে সাথে বিশাল হা-এর ঝকঝকে তীক্ষ্ণ দাঁতেও ঝলসাচ্ছে কমলা রঙ রোদ। এই দাঁত হাঙরের ধারালো দাঁতকে টেক্কা দেয়া কোন ব্যাপার না। বড়শিটা টোপসহ ওর থলথলে পেটে। বের করা একদম অসম্ভব, সুতো কেটে মুক্ত করি।

ভয়ে ওর দাঁত থেকে অনেক দূরে সবাই। উল্লাস পর্ব শেষ হওয়ার পর বাড়িতে আসেন 'তিনি'। পথে সার ডিলারের ঝুলানো পাল্লায় ওজন দেয়া হয়। আধ মনের কয়েক সের কম, মানে ১৫ কিলো। কাটাছেঁড়ার সাথে সাথে ক' টুকরো রান্নাঘরে চালান হয়। মা, দ্রুত রান্নার ব্যবস্থা করবেন। ফ্রেশ হতে হতে রেডি হয়ে যাবে। উপহার বন্টনের পর বাকিগুলোর ঠিকানাও রান্নাঘর।

অনেক বোয়াল শিকার করেছি। এটাই বৃহত্তম। লাঞ্চের ডিশে গোলাপি হাল্কা ঝোল মেখে উঠে আসে পাতে। দু'টুকরো প্রায় হাফ কিলো। স্বাদ বর্ণনা অসম্ভব! এখনো জিভে জল ভাঙে। মজার কথা হচ্ছে, পাকা মাছ বিশেষ করে বোয়ালের টুকরো রান্নার সময় ফুলে আরও বড় হয়ে যায়। স্বাদও স্বাভাবিক তাজা মাছের চে' বহুগুণ বেশি।

মোস্তফা কামাল পাশা, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট

  • সর্বশেষ
  • পঠিত