ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

উন্নাসিক যাতনা, ভয়ঙ্কর ভাবনা

  রাজীব কুমার দাশ

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৫:২১

উন্নাসিক যাতনা, ভয়ঙ্কর ভাবনা
রাজিব কুমার দাস

সবেমাত্র রায় বাহাদুর চৌধুরীর কিছু ফলজ গাছের পাতা প্রতিবেশি সোনা মিয়ার ইতর বন্ধ্যা ছাগীর পেটে চলে গেছে। রায় বাহাদুর সাহেব উন্নাসিক ভাবনায় চিন্তিত।

কি প্রকারে ‘ত্যান্দর’ প্রতিবেশির গরু-ছাগলের খসখসে জিহ্বার রসনা হতে ফলজ গাছ-গাছালি রক্ষা পেতে পারে?

আজ ইজি চেয়ারে বসে বাবা’র কথা বেশ মনে পড়ছে।

--সে অনেক কথা, রায় বাহাদুর চৌধুরীর বাবা জাঁদরেল সামন্তপ্রভু।

চাষা-ভুষা প্রজাদের কি প্রকারে নিজস্ব অলিখিত মাকড়সাবিধি জালে আটকাতে হয়; বেশ ভালো করেই জানতেন। বাবা’র মুখেই বংশের পরম্পরা হিম্মত রপ্ত করে বিলেত ফেরত হয়ে সুখের জোয়ারে ভেসে চলেছেন। বাবার রেখে দেয়া অলিখিত সামন্তসুখ এখন নিজেই সামলে নিচ্ছেন।

এক সময়: আমাদের বাড়ির পাশে কানাহার খাল বিলে বাঘ-মোষ পানি তো খেতেনই; উপরন্তু সতীনের উন্মুক্ত বাকযুদ্ধে লোভনীয় পুরস্কার খেলা চৌধুরী প্রজন্ম এখনও জিইয়ে রেখেছেন।

সময়ের সাথে-সাথে সবকিছুর পরিবর্তন হলেও আমাদের জমিদার দাদুর উন্নাসিক ভাবনার পরিবর্তন

ঘটেনি। ব্যাকরণগত ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে সামনে বসা, টুক-টাক এদিক সেদিক চাহনি, এমন কি খাবারেও

ভুল ধরার জবরদখল নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করতেন।

আস্তে আস্তে প্রতিবেশি সোনা মিয়া, যদু-মধুর ছেলে-পুলে শিক্ষিত হল, ললাটের বিড়ম্বিত ভাগ্য বৈশাখী ঝড়ের কৈ মাছ হয়ে কানে ফড়াং ফড়াং করে সমৃদ্ধির বারতা নিয়ে এসেছে। রায় বাহাদুরের ইঁচড়ে পাকা ছেলেটি বংশ পরম্পরা মেনে ঝাড়বাতি হিংসা নিয়ে দিন-রাত গাদা গাদা বই মুখস্ত করছে-যেভাবে হোক; ‘বিচিত্র’ দেশের বৈচিত্র কিছু একটা হয়ে সবাইকে তাক লাগাতে হবে। সবার মুখে তালা লাগিয়ে সবখানে ভয়ের মূলা ঝুলিয়ে সুন্দরী ময়ূরী পেখমে নতুন জমিদারি কিনতে হবে।

যেমন ভাবনা: তেমন কাজ। ভোদাই গ্রামের ছেদা-মেধা ভাষায় ভর করে রায় বাহাদুরের ছেলেটি বিচিত্র দেশের সোনা মিয়া যদু-মধুদের শাসন করছে।

রায়বাহাদুর স্টাইল চতুর্গুণ করে রাতারাতি ক্ষয়িষ্ণু জমিদারি প্রথার জাল চারিদিকে বিছিয়ে দেন। আজ্ঞাবহ নায়েবে আমির, উজিরে মাওলা পদ তৈরি করে ভণ্ড দরবেশ বনে রাতারাতি পুকুর চুরি করে দেশ বিদেশে দিঘী খননকাজে তদারকি করেন।

এক সময়ে সকল চোর ডাকাত জোট করে স্ট্যাটাস দিয়ে সহজ-সরল বিচিত্র দেশের রাজাকে অক্টোপাস মনে বন্দি বানিয়ে চোখ কান নাক সিনা গুর্দা কলিজা খেয়ে হাড় পর্যন্ত সের কেজি দরে বিক্রি করে দেন।

--এদিকে ভোদাই গ্রামে সাজ সাজ রব উঠেছে। রায় বাহাদুরের সন্তান নিজে থেকে প্রচলিত পূর্বসূরি সতীন চুলাচুলি খেলা শেষে কদুর তেল, চিরুনি শাড়ি পেটিকোট বিলি করবেন।

--এদিকে রায় বাহাদুরের পূর্বসূরি ভাবনার সতীন চুলাচুলি খেলা সোনা মিয়ার আপত্তির মুখে বন্ধ থেকেছে। সোনা মিয়ার কথায় যুক্তি আছে।

--রায় বাহাদুরের চারটা বিবি, উনারা কেন সতীন খেলা দেয় না। আগে উনার বিবি সতীন খেলা দিক, এরপরে আমরা।

চারিদিকে মাইকিং চলছে। কানাহার বিলের চারপাশ ভোদাই প্রজারা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছে। মঞ্চ সাজিয়ে রাখা হয়েছে। নারীদের চেঞ্জ রুম বানানো হয়েছে। লেডি ডাক্তার, রেফারি এসে গেছে। বিচিত্র দেশের হর্তা-কর্তা বডি-গার্ড চাপরাশি নিয়ে হাজির।

সোনা মিয়া, তারা মিয়া যদু-মধু হাজির, কিন্তু তাদের বিবিদের দেখা নেই। রায় বাহাদুরের বিচিত্র দেশ কাঁপানো ভীষণ সিন্ডিকেট ব্যাচের সন্তান বডিগার্ড পাঠিয়ে প্রথমে সোনা মিয়া’কে অ্যারেস্ট করার হুকুম দেন।

--স্যার আমার অপরাধ?

আপনি আমার স্যারের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন।

--আমার বউ চুলাচুলি খেলা দিবেনা, শাড়ি কদুর তেল আমাগো লাগবো না। এখানে আমার খারাপ কি পাইনেন স্যার?

চুপ! বেয়াদব, তোমাদের সবার মন স্যারের হাতে বন্দি। স্যারে’র কথা শোনাই তোমাদের আসল কাজ।

--স্যার, এইডা কি কন? আমাগো জুলুম কইরেন না।

এরই মাঝে দারোগা সুরত আলী এসে গেছে।

--জোরে মাটি কাঁপানো একটা স্যালুট দিয়ে সুরত দারোগা দেরির অজুহাত দিচ্ছে। গোল্ডেন ফ্রেমে বাঁধানো কালো রে-বান রোদ চশমাটা নরম মকমল কাপড়ে মুছছে আর প্রশ্ন করছে;

এত দেরি কেন?

--স্যার, একটা লাশের সুরতহাল করতে দেরি হয়েছে।

আসলে কি জানো; সোনা মিয়া আর তোমাদের কোনও তফাৎ নেই, স্টুপিড কোথাকার! সোনা মিয়াকে একটা পেন্ডিং মামলায় চালান করে দাও।

--অক্ষম আক্রোশে প্রতিবেশি সোনা মিয়া তারা মিয়া যদু-মধু ফুলছে আর বলছে: ‘আপনি মস্ত বড় অফিসার হইছেন। আপনার বাপ দাদা আমার বাপ দাদা’রে মিছা মামলায় ঢুকাইয়া দিয়া জীবনটারে বরবাদ করছে। মনে করছি: আপনি শিখখিত মানুষ আমাগো বউ পোলা নাতিগো বাঁচাইয়া লইবেন।’

এদিকে বৃদ্ধ রায় বাহাদুর, খিস্তিখেউড় ধমকে বলছে, ‘জুতিয়ে ঠাণ্ডা করে দাও।’

বিচিত্র দেশের প্রথম শ্রেণির হাম্বি তাম্বি, হর্তা কর্তা বিধাতা মন, কখন কোথায় কিভাবে রায় বাহাদুর, খাঁন বাহাদুর, চৌধুরী হয়ে সোনামিয়া, সুরত আলী দারোগা’র পশ্চাতে লাথি মেরে উন্নাসিক পীড়নে, ভয়ঙ্কর মনে, সব কেড়ে নিয়ে ভূ-মধ্যসাগরে সলিল সমাধি বানিয়ে দেন; ভুক্তভোগীরা ভালো জানেন।

প্রাবন্ধিক ও কবি, পুলিশ পরিদর্শক বাংলাদেশ পুলিশ।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত