ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

বিশ্ব শিক্ষক দিবসঃ প্রাসঙ্গিক ভাবনা

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২১, ২২:৩০

বিশ্ব শিক্ষক দিবসঃ প্রাসঙ্গিক ভাবনা

আজ ৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের প্রায় ১৭০টি দেশে ৩০ মিলিয়ন শিক্ষক ও ৫০০টি সংগঠন শিক্ষকদের সম্মানার্থে এই দিবসটি উদযাপন করছে। এই দিন বিশ্বব্যাপী শিক্ষকদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিবসে এই দিনটি উদযাপন করা হলেও মূলত ৫ অক্টোবর ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে Education International প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে-যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সাথে সাথে শিক্ষকতা পেশায় অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়। ২০২১ সালের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- 'Teachers at the Heart of the Education Recovery' বা শিক্ষকই শিক্ষা-পুনরদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে।

১৯৪৭ সালে ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে 'শিক্ষা সনদ' প্রণয়নের আলোচনার প্রেক্ষিতে শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত করার জন্য ১৯৫২ সালে 'বিশ্ব শিক্ষা সংঘ' গঠিত হয়। ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তঃরাষ্ট্রীয় সরকারের বিশেষ সম্মিলনে শিক্ষকদের পেশাগত অধিকার, কর্তব্য ও মর্যাদা বিষয়ক ঐতিহাসিক ইউনেস্কো আইএলও সুপারিশ প্রণীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ বিরতির পর ১৯৯০ সালে ১৬৭টি দেশের ২১০টি জাতীয় সংগঠনের প্রায় ৩কোটি সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হয় বেলজিয়াম ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শিক্ষা সংগঠন। বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের ১৭০টি রাষ্ট্রের শিক্ষক সম্প্রদায় ২৪ঘণ্টার জন্য হলেও ৫ অক্টোবর কে 'বিশ্ব শিক্ষা দিবস' হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার দাবি জানান ইউনেস্কোর কাছে।

বিশ্ব শিক্ষক সম্প্রদায়ের তীব্র দাবির মুখে ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ড. ফ্রেডরিক প্যারিসে অনুষ্ঠিত ২৬তম অধিবেশনে ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৯৫ সালে ৯ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এবং শিক্ষক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশে প্রথম বারের মত 'বিশ্ব শিক্ষা দিবস' পালিত হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার এই দিবসটি পালনে নিরব থাকলেও বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া আদায়ে সরব রয়েছে।

কিন্তু যে ইউনেস্কো আইএলও সনদের ভিত্তিতে এই দিবসটি নির্ধারিত হলো- বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০বছরেও শিক্ষকদের সেই অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়নি। শিক্ষার গুণগতমান ও শিক্ষকদের চাহিদা নিশ্চিত করা যায়নি। স্বাধীনতার ৫ দশকেও জাতীয় শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন করা হয়নি। শিক্ষানীতিতে অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থার চরম বৈষম্যের কারণে জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে আজ বেসরকারি শিক্ষক, শিক্ষকদের শিক্ষক বঞ্চনার শিকার হয়ে চরম হতাশায় নিমজ্জিত। হতাশা থেকে সৃজিত ক্ষোভের কারণে শিক্ষক সমাজ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আজ শ্রেণিকক্ষের পরিবর্তে রাস্তা-ঘাটে আন্দোলন করছে। অতিমারী করোনায় শিক্ষকদের বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছাটুকুও মিয়িয়ে গেছে। সরকারি উদ্যোগে যে যৎসামান্য প্রণোদনা প্রদান করা হয়েছে তার ছিটেফোঁটাও লাগেনি বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে।

দেশে ডিজিটাল-এর মহাবিপ্লব ঘটলেও বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোর দিকে চোখে যায়নি সরকারের। এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও খোদ শিক্ষক- প্রশিক্ষণের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজায় এখনো পৌছায়নি রিফ্রেশার্স ট্রেনিং-এর লেশমাত্রও। বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষক সমাজ সরকারের নানা কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করলেও সরকারি ভান্ডারের কর্মকর্তারা এখনো মুখতুলে তাকায়নি শিক্ষকদের চিরবঞ্চিত মুখের দিকে। তাই বিশ্বায়নের এ যুগে বলতে হয়- "ক্ষুদার্ত শিক্ষক দিয়ে তৃষ্ণার্ত শিক্ষার্থীর প্রয়োজন মেটানো সম্ভব নয়"।

যাইহোক, শিক্ষক দিবস আজও একটি মহান দিবস হিসেবে সূচিত হয়। প্রচীন গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটল সে কারণেই বলেছেন, " যারা শিশুদের শিক্ষাদানে ব্রতী তাঁরা অভিভাবকদের চেয়েও অধিক সন্মাননীয়। পিতামাতা আমাদের জন্ম দেয় ঠিকই, শিক্ষকরা জন্মকে সার্থক করে তোলে"। করোনাকালীন এই সংকটময় মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমাদের প্রত্যাশা- বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ এমপিওভুক্তির মাধ্যমে মুজিববর্ষে পুরো শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণের আওতায় আনা হোক।

লেখক: ড. মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম খান

অধ্যক্ষ, ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজ, ধানমন্ডি। সভাপতি, বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতি।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত