ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

মেঘ বিদায়ের দিন: মাদকে বিনষ্ট যুবসমাজের কাহিনী

  জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২২, ০১:০৯

মেঘ বিদায়ের দিন: মাদকে বিনষ্ট যুবসমাজের কাহিনী

দেশ মায়ের মুখচ্ছবি। মা-সন্তানের সম্পর্ক নিরেট ও শতাব্দীব্যাপী। মাতৃপ্রেম হলো মাতৃস্তনসম। মায়ের আঁচলে মুখ গুজে সন্তান ধীরে ধীরে মাটির মমতায় বেড়ে ওঠে। পোকামাকড় কিংবা কীটপতঙ্গ এসে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ এখন স্বনির্ভর ও উন্নয়নশীল জাতি। পেছনে টেনে ধরা ও বিনষ্টকারীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। বীর বাঙালির ঐতিহ্য চিরায়ত ও রঙিন তাই বেগবান। দুঃসাহসিক যাত্রাকে ব্যাহত করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কুটিলতা বিদ্যমান। মেঘ বিদায়ের দিন উপন্যাসে কুটিলশ্রেণি ও দেশে কীভাবে মাদক চালান করে তারুণ্যশক্তির ক্ষয় ও অর্থনৈতিক দুরবস্থা তৈরি করছে তা বিভিন্নভাবে বিশ্লেষিত। নতুন নামে মাদক আসছে- ব্রাউনি, আইস ইত্যাদি এগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে তরুণশ্রেণি।

যুবসমাজ জাতির অলংকার। তাদের মধ্যে আস্বাদনশক্তি প্রবল এবং এক্সট্রা ফিলিংস নিতে উদ্যত। এ সুযোগ নিয়ে প্রজন্মকে ধ্বংস করতে মাদক তুলে দেয়া হচ্ছে। সার্কেল অনুযায়ী ড্রাগ চালান হচ্ছে হট স্পটে। তরুণ ও মেধাবীরা গ্রহণ করছে মাদক। ধীরে ধীরে তাদের মানসিকশক্তি বিনষ্ট হচ্ছে। পাশ্ববর্তীদেশগুলো থেকে মাফিয়াচক্রের মাধ্যমে মাদকের চালান সহজেই ডুকে পড়ছে। দেশের তৃণমূলে নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সকলের মাঝে অনায়াসে যাচ্ছে। তত্ত্বাবধানের দুর্বলতা ও আর্থিকসুবিধা গ্রহণের কারণে সহজেই ড্রাগ পৌঁছে যাচ্ছে ডোর টু ডোর। এটি জাতি ও সমাজের জন্য ভয়াবহ ও বিপদজনক।

'মেঘ বিদায়ের দিন' উপন্যাসের অনুষঙ্গ ড্রাগ। চরিত্রবিন্যাসে ও সংলাপে দেখানো হয়েছে মাদকসেবীর অধিকাংশই তরুণশ্রেণি। যারা সমাজে প্রভাব বিস্তারকারী ও উচ্চচিন্তার অধিকারী। তাদের বিপথ মানে দেশের দীর্ঘমেয়াদী বিপদ। সামাজিক দায়বদ্ধতা, তত্ত্বাবধানিক দুর্বলতা, এলিটশ্রেণির উন্নাসিকতা, গ্রাম ও শহরে স্বার্থবাদীদের দৌরাত্ম্য, হুমকির মুখে গোটা সমাজ ও রাষ্ট্র। এসবের রুট ও জোন আবিষ্কার করে আসক্তিদের ফিরানো ও নতুনদের বিরত রাখার জন্য কাউন্সিলিং সচেতনতা ও প্রশাসনিক তৎপরতা বৃদ্ধি সমকালীন দাবী ও শপথ।

ড্রাগ গ্রহণে নিখিল বাপ্পি ও এবং ডালিয়া বানু কীভাবে সতেজ জীবন থেকে পলায়ন করেন এবং তাদের ফেরাতে কাজ করছে মুক্তি সংগঠন ও সংবাদকর্মী মুনির। তাইজিন ও নিশিদের পারিবারিক ভাঙন ও অধঃপতন দেখানো হয়েছে এবং বন্ধন তৈরির মাধ্যমও নানাভাবে দৃশ্যায়ন হয়েছে। এলিট মানুষ যেখানে খুনী চিনতে পারেনি; কুকুর চিহ্নিত করেছে ঘাতক ও মাদকব্যবসায়ী বাপ্পিকে। ডলফিন লকেট নিয়ে পালানো নিখিলের পেটে সমুদ্রের ডলফিন জাদুবাস্তবতার আদলে ভর করেছে। পূর্ণতার সংস্পর্শে এসে সুপথে ফিরে এলো নিখিল। এসবই মেঘ বিদায়ের দিন উপন্যাস নিরেট অনুষঙ্গ।

ড্রাগ হলো স্রেফ মহামারি। আক্রান্ত তরুণ সমাজ। মাদকাসক্তিতে তরুণদের সংখ্যা বাড়ছে অপরাধ প্রবণতাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের গ্রাম ও নগর, শহর ও মফস্বল, ঝোঁপ ও জঙ্গলে মাদকের আড্ডা। বিত্তবানদের আমোদখানা, খাস কামরা, বার, হোটেল, নাইট ক্লাব ফুর্তিবাজ মানুষের ভিড়। রমরমা ব্যবসা করছে মাদক কারবারী। অপরাধ করছে তাতেও অনুশোচনা নেই, রক্তে ও শরীরের কোষে মিশে গেছে ড্রাগের স্প্রিং। বিনষ্ট হচ্ছে মন- মানসিকতা, সৃজনশীলতা ও উন্নয়নমুখী দক্ষতা। মাদকের অর্থ যোগানে অপরাধ প্রবণতা সমূহ হরদম বাড়ছে - পারিবারিক ভাঙন, সাংসারিক দীণতা, বন্ধুত্ব সম্পর্কহানি, রাজনৈতিক দৌরাত্ম্য, দখল বাণিজ্য, মারামারি, হিংস্রস্বভাব, দুর্বলমানুষের উপর টর্চার ও আত্মসিদ্ধি, ঘুষ -বাণিজ্য, যৌনাচার, পর্যটনকেন্দ্র দখল ও নির্যাতন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ভাঙন, শিশু ও নারী ধর্ষণ ও নির্যাতন, সড়ক দুর্ঘটনা। টোটাল জনগোষ্ঠী কোনো না কোনোভাবে মাদকসেবক, মাদক সিন্ডিকেটের দ্বারা দলিত। না বলা জরুরী, দাঁড়ানো আবশ্যক, মাদকের বিরুদ্ধে চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে। সর্বপরি বলা যায়, মেঘ বিদায়ের দিন উপন্যাসের মৌলিক চিন্তা হলো সংবাদমাধ্যমের অনুসন্ধান, এলিটশ্রেণির কাউন্সিলিং ও গণসচেতনতা এবং প্রশাসনিক তৎপরতা।

ড্রাগবিষয়ক উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে প্রকাশনা সংস্থা তাম্রলিপি। প্রচ্ছদ করেছেন আইয়ুব আল আমিন। মূল্য মাত্র ৫০০ টাকা।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত