ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

সৈয়দ এনামুল তাজ এর দশটি কবিতা

  সৈয়দ এনামুল

প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:৫০

সৈয়দ এনামুল তাজ এর দশটি কবিতা

আমিবাদ

বাড়ি থেকে পালাতে পালাতে ছেলেটি

জীবন থেকে পালাতে শিখে গেছে— মা

ভেতরে ভেতরে সবটা অতীত ফুলে উঠছে ভীষণ, রান্নাঘরে মা রান্না করছেন সংসার; কবরঘরে আব্বা যাপন করছেন সংসার

স্বপ্ন ছিল— লজেন্সের দোকানদার হব

শৈশব কাটল,

বাকিতে বাকিতে দোকানটা আর হয়ে উঠল না

স্বপ্ন ছিল— লাইট্যাডিঙ্গীর ডাকাত হব

কৈশোর কাটল,

বৈশাখীবান্নির কাঠভোতা পিস্তলটা সৈয়দ তাজকে ডাকাত বানাতে পারল না

পারল না অন্ধকারের শরীরে আগুন জ্বালিয়ে মায়ের সামনে গিয়ে বলতে--- মা, কারাগারের ভেতরে দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদীটি যেমন বন্দি, কারাগারের বাহিরে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রহরীটিও তেমনি বন্দী!

তাহলে?

এই ভরারোদ্দুর মাথায় করে এই ভরাবৃষ্টি মাথায় করে তুমি কার ডাকে হেঁটে যাচ্ছো এতটা পথ— সৈয়দ?

ধর্মদাগ

রমণীর তলপেটে মাতৃত্বের ফাঁটা দাগের মতন পিতামহের কাঁধেও দাসত্ব লাঙলের দাগ ছিল,

ছিল আব্বার বাসর ঘরে আম্মার ভয় ভয় লাল লাল চোখের অহেতুক ভালোবাসা ভালোবাসা।

ইদানীং, গোসলখানায় দরোজা লাগিয়ে আমিও শরীরময় খুঁজি জন্মদাগের মতন ধর্মদাগ

কিছুই নেই...

তাহলে কি আমি মানুষ নই?

ময়ূরাক্ষী নিতা

ইচ্ছারা কালসাপ হয়া ফণা ধরে থাকে রাতে

তোমারে পাব না আমি; আমারেও তুমি

যেমতি, সুবোধ লোকেরা থাকে না পাঁচে ও সাতে

গৈয়ামের ডালে বসা কুচকুচে কালা দোরা কাউয়া

তা দেখে ভুলে গেছে মনা; ফরযগোসল, খাওয়া-দাওয়া

সাপুড়ে সারাদিন ঘুরে ঘুরে একই পথে ফিরে ফিরে আসে

মলুয়াসুন্দরীর ভগ্নাঙ্গুর লাল হয়; প্রেমিকের বীণে- বিন্যাসে

উত্তরমেঘ যদি না প্রণয়ের দূত হয়া দক্ষিণে যায়

ময়ূরাক্ষী ময়ূরাক্ষী বলে সৈয়দ তাজ জমিনে লুটায়

নমঃ নমঃ বারোমাসি প্রেম, না জানি কোন বৃক্ষের ফল

তুমিই তো শীতলক্ষ্যার মা; মরণের কালে মুখে দিও জল

পৃথিবীর বুক হতে ধীরে ধীরে দূরশূন্যতায় মিলিয়ে গেছে বাঁশঝাড়, কেয়াবন নিবাসী ধলাপেট বক

আহত প্রতিটি পরিযায়ী সারসের ছানা মুখে মুখে ফেরি করে রসূলের শান ও খোদাতা'লার নাম বকবক

পোয়াতি কুকুরের স্তন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে নাশপাতি, জামরুলের মিহি ঘ্রান দিকে দিকে

বারমাসে তেরপার্বণ, ফুলের গর্ভে ঘ্রাণ; সন্তান হয়া আসে হাওয়া ও রোদের বীর্য থেকে

এমন পৌষে হরিনাম সংকীর্তন ফেরি করে মুখে মুখে বাউলের উচাটন মন ও শ্মশানের চিতা

শীতে জবুথবু ফুলহীন পাতাহীন শিউলিগাছ জানে

সৈয়দ তাজের বাম পাঁজরের হাড় ময়ূরাক্ষী নিতা

প্রেম ও হরিনাম সংকীর্তন

প্রথমে আমি ছিলাম প্রজাপতি সুতপা

তুমি পৃশ্নি ও আমার ব্যক্তিগত পতিতা

করেছি প্রেম, ছিলাম একে অপরের ছায়া

খেয়েছি বার হাজার বছর বৃন্তচ্যূত পাতা ও

নিশিগন্ধা বায়ু, যা হয়েছে গোবিন্দ তপস্যা

গোবিন্দ তুষ্ট হয়ল, করিল বরদান তথা

অবিকল চতুর্ভূজ পুত্র হয়া জন্ম নেব তোমার

পবিত্র গর্ভে, জয় নমঃ মাতা ও পিতা

জয় নমঃ প্রেম ও সুবিচার

ফুলের পাশে মিহিঘ্রাণ, কাঁটা ও ভনিতা

দ্বিতীয়ত্ব আমি কংসের কারাগারে বন্দি বাসদেব

তুমি দেবকী ও আমার ব্যক্তিগত রতিকা

সয়েছি দুঃখ, করেছি ভক্তি; ভগবানের হয়েছে মায়া

তোমার অষ্টম গর্ভ প্রমাণিত স্বয়ং

ভক্তের ভক্তি কোনদিন এঁটো হয় না

প্রেম ও মুরাকাবা

সকাল সন্ধ্যা আকাশের দিকে মুখ করে

সমস্ত জিকির ও মুরাকাবা

পশ্চিমে কা'বা ও মদিনা মোনাওয়ারাহ্

বিশ্বাসে বাড়ে প্রেম

বিশ্বাসে তৈরি হয় নূহের নৌকা

আমি ত দিনকে দিন ভুলে থাকি আমার খোদা

আমি ত রাতকে রাত ভুলে থাকি আমার রসূল

আশেক- মাসুকের খেলা নদীর ঢেউয়ের মতন

গহীনে থেমে থাকে না

পিরিতি জমে গেলে শৃঙ্গার-শিৎকারে উচ্চারিত হয়;-

"ফাজ কুরু নি আজ কুরু কুম

অয়াশ কুরু লি ওয়ালা তাক ফু রুন"

এলিজি

সকাল সকাল একটা কবিতা লিখব ভাবি

সকাল সকাল আমার অনেক অসুখ নিয়া

ডাক্তারের কাছে যাব ভাবি

সদরঘাট লঞ্চ-টার্মিনালে বসে ঢাকা-বরিশাল

ঢাকা-চাঁদপুর

ঢাকা-পটুয়াখালি যাওয়ার লঞ্চ দেখে দেখে

রাতের অন্ধকারে এই শহর ছেড়ে বুড়িগঙ্গার

লঞ্চে চড়ে অজানায় চলে যাব ভাবি

বাড়ি থেকে ঢাকায় এসেছি সাড়ে তিন মাস

এই শীতের শুরুতে মায়ের কাছে গ্রামে যাব ভাবি

গরুর গোস্তের সাথে পাতলা খিচুরি মিশিয়ে

আমার মায়ের টিনের আধপোড়া রান্নাঘরে বসে

পেট পুরে সকালের নাস্তা করব ভাবি

আব্বা গত হয়েছেন আজ ১২ বছর প্রায়

তাঁর কবরখান দূর থেকে দেখি

তাঁর মুখ আমার চোখে ঝাপসা হয়া আসে

এবার ছুটি হলে আব্বার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে

"রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা" পড়ব ভাবি

এবার ছুটি হলে আমি মেঘনার কাছে যাব

ওনার আহত বুকে বন্ধক রেখেছিলাম

আমাদের প্রথম সন্তান

ঐসব স্মৃতি ও সন্তান ফেরত চাইব ভাবি

কিশোরগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী এগারসিন্ধৃু ট্রেনে ভৈরববাজার জংসন থেকে অবিকল আমার চেহারা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে দাঁড়িয়ে বসে অনেকজন যাত্রী যাচ্ছে...;

ওনাদের সকলকে আমার চেহারা ও সীমাবদ্ধতা চুরি করার জন্য শাসিয়ে আসব ভাবি

আমার সমগ্রভাবনা মিথ্যা হয়া যায়

আমার অনেক যাওয়ার মধ্যে কোথাও যাওয়ার নাই

আমি সকাল সকাল তোমার গন্ধে তোমার কাছে যাই

তুমিই প্রেমের মামলার সাক্ষী

তুমিই আমার রায়

২৫ এপ্রিল অন নরসিংদী রোড

আমি যেদিন সুইসাইড করব

২৫ এপ্রিল কিংবা

তারও অধিক কোন নমনিয়তা এসে

খাবলে খাবে মগজ

লাউয়ের ডগায় ওড়ে এসে তখনো বসেনি ঘাসফড়িং

হাঁসের খুশিতে আসেনি বর্ষার নতুন পানি কিংবা

টিনেজ বোনদের গর্ভে ফলেনি অভিমান

আমি যেদিন সুইসাইড করব

২৫ এপ্রিল কিংবা

তারও অধিক কোন তামাশা নিয়ে অধিকারী খুলেনি

হাতি, ভল্লুকের সার্কাস

আমাকে খুব ভোরে ডাকা হবে

ঢাকা হবে...

'খুব ভোরে খুব জোরে কাঁদতে নেই'--- কথাটা

কবিতায় তখনো ভাসবে

আমি যেদিন সুইসাইড করব

২৫ এপ্রিল কিংবা

তারও অধিক কোন প্রেম এসে ঝাপটে ধরবে

শরীর

আদিবাসি কবিতা

আপনার স্তন সুন্দর— বলতেই হেসে মরি মরি সাঁওতালবেশ্যা

পাহাড়ের মতোন— যখনই বললাম,

ব্লাউজ ঠিক করতে করতে বায়না ফেরত দিয়ে দিলেন!

পেটে পাথর বাধবো— তবুও, স্তনপাহাড় শিয়াল-কুত্তাদের দখল করতে দেব না, বাপু

মনোয়ারা বেগম

বনের গোপনে ফুটছে ফুল লাল

বাতাস এসে চুপি চুপি ছুঁয়ে যায় ঠোঁট

শরমে গরম হয় এমনো শীত যে ঋতু

ও মানুষ ছদ্মবেশী বাউল

ও নদী ছন্দ না জানা নৌকোর গলুই

বড় বেশি মনে পড়ে, কার না জানি

ফেলে যাওয়া প্রেমিকা মনোয়ারা বেগম

মরা মাছের উল্টানো চোখে ছবি হয়া থাক

ক্রেতা এসে বারবার করে সন্দেহ

শরমে নরম হও এখনো শীত যে ঋতু

ও কবি নোমান নজরবী, সাদী কাউকাব

ও আমার বারভাতারি সারোগেট মন

বড় বেশি মনে পড়ে, কার না জানি

ফেলে যাওয়া প্রেমিকা মনোয়ারা বেগম

জীবন

একটু পরই ফাঁসি র্কাযকর করা হবে আপনার। কনডেম সেলে ম ম করছে হাওয়া। দুজন পেয়াদা আপনাকে দুদিক থেকে ধরে মঞ্চের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আপনার দুপা শক্ত রশি দিয়ে বাঁধা হচ্ছে, দুহাত পেছনে করে। আপনার মাথা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতেছে জল্লাদ। আপনার মা, ভাই, বোন, আপনার আব্বা গেটের বাইরে আপনার লাশের জন্য প্রতীক্ষা করছে। প্রেমিকা ও বিবিধ মসলার ঘ্রাণ আপনার স্মৃতিকে ফুঁসলে দিচ্ছে, আপনি বুঝতে পারছেন দ্রুতই মরে যাচ্ছেন... কিন্তু চিৎকার করে স্বজনদের ডাকতে পারছেন না, দেখতে পারছেন না।

জীবন, তোমাকে লাশ ভেবে কাঁধে করে বহন করছি অন্য আরেকটা জীবন

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত