ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫০ মিনিট আগে
শিরোনাম

‘অন্তরাশ্রমের সুফি’ কবি এনামূল হক পলাশের ৪৫তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা

  শিল্প-সাহিত্য ডেস্ক

প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২২, ২১:১৫

‘অন্তরাশ্রমের সুফি’ কবি এনামূল হক পলাশের ৪৫তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা

কবি এনামূল হক পলাশ বাংলা ভাষার সহজিয়া ধারার একজন প্রতিশ্রুতিশীল কবি। একাধারে তিনি একজন লেখক, কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার ও শিশু সাহিত্যিক। তিনি অন্তরাশ্রম নামে একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং একই নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিচালনা করেন।

কবি এনামূল হক পলাশ সম্পর্কে প্রগতিবাদী প্রাবন্ধিক ও লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার বলেন, “একবারে নিজস্ব ব্যক্তিগত বোধ থেকে শুরু করে সামাজিক সমস্যা-সংকট পর্যন্ত সবকিছুর মর্মানুধাবনে পলাশ অনন্যতার প্রকাশ ঘটাতে পেরেছ- ‘স্টাইল ইজ দি ম্যান’ কথাটির জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে তার প্রতিটি কবিতা। পলাশের কাব্যগ্রন্থের যে কোন পাঠকই কবিতার নতুন স্বাদ উপভোগ করে তৃপ্ত হতে পারেন বলে আমি মনে করি।”

কবি সরোজ মোস্তফা বলেন, “এনামূল হক পলাশের কবিতা 'সরল বয়ানে ক্ষত-বিক্ষত জীবনকে তুলে ধরে, সর্বনাশা সময়ে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের অখন্ড অনুভবকে তুলে ধরেন, এটাই তার স্টাইল। তার কবিতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পঙক্তিগুলো কবির মুখ ও মানবের জীবনের আয়না।”

এদিকে শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক মতীন্দ্র সরকার কবি এনামূল হক পলাশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেন, “সমকালীন সমাজ, বিশ্ব রাজনীতি, ঐতিহাসিক পরমার্থ, সসীম মানুষের অসহায়ত্ব, আধুনিক শিল্পীর অন্ধত্ব ও কৃষকের দুরবস্থাকে অতিক্রম করে এই লেখক মানবজীবনের সফলতার স্তব বর্ণনা করেছেন।”

মানবিক ও প্রকৃতি প্রেমিক এই কবি সম্পর্কে কবি মামুন খান বলেন, “এনামুল হক পলাশ। আমাদের ভাই ও বন্ধু। আপাদমস্তক একজন কবি। স্বাপ্নিক, বিপ্লবী, বন্ধুপ্রাণ, চঞ্চল এবং কর্মবীর একজন মানুষ। বহুরৈখিক এই মানুষটি থেমে থাকতে জানেন না। এক সঙ্গে বহু পথে হাটতে এবং বহুজনকে নিয়ে চলতে ভালবাসেন। একাধিক গন্তব্যে ধাবিত হওয়াটা তাঁর নেশা ও আনন্দ। এক্ষেত্রে ব্যর্থতা নিয়ে তাঁকে ভাবতে দেখিনি। ব্যর্থ হলেও কোনো কালিমায় তাঁর মুখ কালো বা করুণ হতে দেখিনি। যখন লেখেন দুহাত ভরে লেখেন। কি হলো না হলো- না ভেবে প্রাণের পংক্তিগুলোকে মর্যাদার সাথে সাজিয়ে রাখেন কবিতার উদ্যানে। নিমগ্ন অনুধ্যানে যখন ফুল ফোটান ছাদবাগান বা বারান্দায়- তিনি নিজেও পুষ্প হয়ে যান। নিজের ফোটানো ফুলের মতই তাঁর মুখ হাসতে থাকে জগতের হাওয়ায়। যখন পাখি পোষেন, এমন এক কিচিরমিচির ঘোর তাঁর চোখে মুখে- যেন পৃথিবীর সমস্ত পাখি তাঁর জন্মসহোদর। যেনো তিনি নিজেও এক বন্দীপাখি এই জীবন-সংসার খাঁচায়।”

কবি এনামূল হক পলাশ ১৯৭৭ সালের ২৬ জুন নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার বাদে চিরাম গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস একই উপজেলার বামনগাঁও গ্রামে। পিতা মরহুম এমদাদুল হক, মাতা- নুরুন্নাহার হক।

শিশুকাল নিজ গ্রামে কাটালেও পিতার ব্যবসাজনিত কারনে তাঁর শৈশব কেটেছে বারহাট্টায়। গোপালপুর বাজারে। বারহাট্টা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে একই স্কুল থেকে ১৯৮৮ সালে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি পেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। বারহাট্টা সি.কে.পি. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে তিনি অস্টম শ্রেনীতে সাধারণ বৃত্তি পান এবং পরের বছর ড. ইন্নাছ আলী বৃত্তি প্রাপ্ত হয়ে ১৯৯৪ সালে বিজ্ঞান শাখায় প্রথম বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৪ সালে উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী থেকে প্রকাশিত মাটির সুবাস নামক একটি পত্রিকায় তাঁর একটি কবিতা প্রকাশিত হয় যা ছিল ছাপার অক্ষরে তাঁর প্রথম কবিতা। প্রকাশিত কবিতার জন্য তিনি মনি অর্ডার যোগে চল্লিশ টাকা সন্মানী প্রাপ্ত হয়েছিলেন। উক্ত চল্লিশ টাকার খরচ বাদে সাতত্রিশ টাকা পঁচিশ পয়সা হাতে পেয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথম বিভাগে এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৭ সালে সরকারী তিতুমীর কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স ভর্তি হন। ১৯৯৮ সালে বন্যা জনিত কারনে পিতার ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় পারিবারিক সংকট এড়াতে নেত্রকোণা সরকারী কলেজে চলে আসেন এবং একই কলেজ থেকে ২০০২ সালে দ্বিতীয় শ্রেনীতে স্মাতক (সন্মান) উত্তীর্ণ হন। নেত্রকোনা সরকারী কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে মাস্টার্স পড়ার সুযোগ না থাকায় তিনি গুরু দয়াল সরকারী কলেজে হতে ২০০৪ সালে উদ্ভিদ বিদ্যায় দ্বিতীয় শ্রেনীতে মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৯৮ সালে একটি প্রগতিশীল বাম সংগঠনের সাথে তাঁর যোগাযোগ স্থাপন হয় এবং তিনি প্রগতিশীল বিপ্লবী রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় রাজনৈতিক বিষয়ে ব্যপক অনুশীলন ও পড়াশোনা করেন। এই সময়টা তিনি অনেক পড়াশোনা এবং কবিতা লেখার ভেতর দিয়ে কাটিয়েছেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন সময় কয়েকটি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার সাথে যুক্ত থেকে সাংবাদিকতা করেছেন। ২০০৩ সালে তিনি রাজনীতি ছেড়ে সরকারী চাকুরিতে যোগদান করেন।

২০০৯ সালে কবির প্রথম বই “অস্তিত্বের জন্য যুদ্ধ চাই” প্রকাশিত হয়। এছাড়া এখন পর্যন্ত জীবন এক মায়াবী ভ্রমণ, অন্ধ সময়ের ডানা, অন্তরাশ্রম, মেঘের সন্ন্যাস, পাপের শহরে, জল ও হিজল, তামাশা বাতাসে পৃথিবী, অখন্ড জীবনের পাঠ, লাবণ্য দাশ এন্ড কোং সহ মোট দশটি কাব্যগ্রন্থ ও বইয়ের পাতায় ফুলঝুরি, কলমিলতার ফুল, মগড়া নদীর বাঁকে নামে তিনটি শিশুতোষ কবিতার বই এবং ভূমি ব্যবস্থাপনার সরল পাঠ নামে একটি গবেষণাগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে তিনি প্রাচীন আরবি সাহিত্যের কিছু কবিতা অনুবাদ করেছেন। তার দুটি অনুবাদ গ্রন্থ হচ্ছে, ধর্ম বিশ্বাস আখ্যানের মতো সুন্দর এবং মু - আল্লাক্বা।

২০১৬ সালে কবি নির্মলেন্দু গুণ প্রতিষ্ঠিত নেত্রকোণার মালনী এলাকায় বিশ্ব কবিতার আবাসস্থল বা হোম অব ওয়ার্লড পয়েট্রি খ্যাত “কবিতাকুঞ্জ” প্রতিষ্ঠার সূচনালগ্ন থেকে অবকাঠামো গঠনের কাজে যুক্ত থেকেছেন এবং একই প্রতিষ্ঠানের প্রথম পরিচালক হিসেবে কবি কর্তৃক নিযুক্ত আছেন। ২০১৭ সালে কবি, লেখক ও সংস্কৃতি কর্মীদের ব্যবহারের জন্য তিনি নেত্রকোণা শহরের মালনী এলাকায় গড়ে তুলেছেন “অন্তরাশ্রম” নামে একটি প্রতিষ্ঠান। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য। ২০১৭ সালে নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার চর্চা সাহিত্য আড্ডা কর্তৃক তাদের শততম আসরে অন্যান্যদের সাথে “চর্চা শুভেচ্ছা সন্মাননা- ২০১৭” প্রাপ্ত হন। ২০১৮ সালে কবির চল্লিশ পূর্তি উপলক্ষে কবির জীবন ও কর্ম নিয়ে “আশ্রম পাখির মায়াপথ” নামে একটি প্রকাশনা গ্রন্থ বের হয়। ২০১৯ সালে তিনি নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে 'কুপি বাতি ' নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করেন। ভাস্কর্যটি তৈরি করে দিয়েছেন বিখ্যাত ভাস্কর অখিল পাল। ২০২২ সালে তার কিছু কবিতা নিয়ে ইংরেজিতে ভাষান্তরিত বই CROSSING FORTY NIGHTS পশ্চিম বঙ্গ থেকে প্রকাশিত হয়।

কবি এনামূল হক পলাশ সহজের সাধনা করেন। সাধারণ হয়েই থাকতে চান মানুষের কাছে। তিনি মনে করেন নিজের গাছ থেকে নিজের অক্সিজেন সংগ্রহ করবেন। তাঁর ছাদ ঘুরে দেখা গেছে ছোট ছোট চৌবাচ্চায় শাপলা- পদ্ম ফুটে আছে। ছাদে পদ্ম ফুটিয়েছেন বলে কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর বাসস্থানের নাম দিয়েছেন স্থলপদ্ম। বর্তমানে তিনি বসবাস করেন সেখানে।

তাঁর সাথে কথা বললে তিনি জানান, জীবনের বিচিত্রতা আমাকে দিন দিন সহজ হওয়ার সাধনার দিকে নিয়ে গেছে। তাই সহজের সাধনা করি। আমি সাধু নই। সাধু হতেও চাইনা। সহজ হতে চাই। অন্তরাশ্রমের পথ বেয়ে পৃথিবীর পথে পথে ছড়িয়ে দিতে চাই ভালোবাসা ফুল।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত