ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

দুই পুলিশের আত্মহত্যার নেপথ্যে কী!

  আসিফ কাজল, মাগুরা থেকে ফিরে

প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২২, ১৮:৪৬

দুই পুলিশের আত্মহত্যার নেপথ্যে কী!

মাগুরার টক অব দ্য টাউন এখন এএসপি খন্দকার লাবণী ও কনেস্টবল মাহমুদুল হাসানের আত্মহত্যার ঘটনা। মাত্র ৫ ঘণ্টার ব্যবধানে একই জেলায় দুই পুলিশ সদস্যের মৃত্যুতে রহস্য ও নানা কথা চাউর হচ্ছে। কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান এই নারী পুলিশ কর্মকর্তার এক সময়ের বডিগার্ড থাকায় এই মৃত্যুকে ঘিরে অসম প্রেমের গল্প ছড়াচ্ছেন অনেকেই।

পুলিশ বলছে, এই ঘটনার বিষয়ে এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। ময়নাতদন্ত করার পরই কেন ও কীভাবে মৃত্যু হয়েছে তা জানা যাবে। এএসপি খন্দকার লাবণীর মৃত্যু পরিষ্কার আত্মহত্যা হলেও মাহমুদুলের মৃত্যু হত্যা না আত্মহত্যা তা নিয়ে খোদ পুলিশেরই সংশয় আছে। এমন ঘটনার ৯৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ জানতে পারেনি পুলিশ।

তবে সংশ্লিষ্ট অনেকের দাবি, পেশাগত সম্পর্কের বাইরেও ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কারণে পরপর এ অত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা যায়, এডিসি লাবণী দাম্পত্য জীবনে সুখী ছিলেন না। নিঃসঙ্গতা কাটাতে তিনি মাহমুদুলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এরপর এই পুলিশ সদস্য বয়সে অনেক ছোট হওয়ার পরও তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিছু দিনের মধ্যেই এই পুলিশ কর্মকর্তার বিদেশ মিশনে যাওয়ারও কথা ছিল। এর আগেই মাহমুদকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মাহমুদ কিছুতেই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলেন না।

পুলিশের এক সদস্য জানান, মাহমুদের মৃত্যুর ওই দিন বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলতে শুনেছি এই টুকুই- ‘ম্যাডাম সম্ভব না, সম্ভব না’। কিন্তু কার সঙ্গে কথা হচ্ছে, বা কী নিয়ে কথা তা বিস্তারিত জানতে পারিনি।

সূত্র জানায়, সর্বশেষ এই কর্মকর্তা কনস্টেবল মাহমুদকে রাত ১টার দিকে গলায় ফাঁস নেয়ার আগে ভিডিও কল দেন। ভিডিওকলে থেকেই তিনি গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। তখনই মাহমুদ প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান এবং ডিউটি শেষে ব্যারাকে ফিরে নিজের থুতনির নিচে শটগান দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। সূত্রের দাবি, মোবাইল ফরেনসিক টিমের তদন্তে অবশ্যই ভিডিও কলের বিষয়টি উঠে আসবে।

মাহমুদুলের বোন সুমাইয়া খানম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, লাবণী ম্যাডাম আত্মহত্যা করেছেন রাত ১টায়। আর পুলিশের দাবি অনুযায়ী আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে ভোর ৬টায়। মৃত্যুর আগের রাত সাড়ে ৯টায় আমার ভাইয়ের সঙ্গে পরিবারের কথা হয়েছে। সে খুব হাসিখুশি ছিল। আমাদের সঙ্গে অনেক মজাও করেছে। এরপর মাহমুদুল সারারাত টহল ডিউটি করেছে। ডিউটি শেষে পুলিশের ওই টিমের সবার ব্যারাকে ফেরার কথা। এই পাঁচ ঘণ্টার ভেতর কী এমন ঘটলো যে সে একা ছাদে গিয়ে নিজের মাথায় গুলি ছোড়ে?

তিনি আরো বলেন, মাহমুদ কখনোই তার যে এমন সম্পর্ক আছে সে বিষয়ে কোনো শব্দ করেনি৷ তার কোনো মেয়ে বান্ধবী ছিলো না বলেও জানান তিনি।

এদিকে এডিসি লাবণীর মামা নাসির উদ্দিন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, পারিবারিক কলহের জেরেই সে আত্মহত্যা করেছে। আর যেই কথাগুলো মানুষ বলছে সেটি কিভাবে সম্ভব তা মাথায় আসছে না। এই পুলিশ কর্মকর্তার কিছু দিনের মধ্যে কঙ্গো মিশনে যাওয়ার কথা ছিল বলেও জানান তিনি। তবে ভিডিও কল বা মুঠোফোন চেক করলে সত্য-মিথ্যা জানা যাবে বলে মনে করেন তিনি।

আত্মহত্যার ঘটনায় সুইসাইড নোট সাধারণ বিষয় হলেও মাগুরা পুলিশ প্রশাসন বলছে ঘটনায় তারা কোনো সুইসাইড নোট পায়নি। এমনকি মৃত্যুর আগে কেউ পরিবারের সঙ্গেও মুঠোফোনে কোনো কথাবার্তার বিষয়টিও তারা জানে না।

মাগুরা জেলা পুলিশের অ্যাডিশনাল এসপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. কলিমুল্লাহ বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, দুটি মৃত্যুর ঘটনায় পৃথক মামলা হয়েছে। দুটি মামলায় দুজন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন ও বিশেষজ্ঞ টিম এই মৃত্যুর কারণ বলতে পারবে। এর আগে আসলে কিছুই বলা উচিত হবে না।

কেএমপির এডিসি লাবণী এবং তার সাবেক দেহরক্ষী কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের আত্মহত্যার ঘটনায় শ্রীপুর ও মাগুরা সদর থানায় পৃথক মামলা হয়েছে। লাবণীর ছোট ভাই হাসনাতুল আজম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। আর মাহমুদুল হাসানের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছে।

এদিকে দুটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের অংশ হিসাবে দুজনের মোবাইল ফোন ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

মামলার বিষয়ে শ্রীপুর থানার ওসি প্রিটন সরকার বলেন, এই ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যু) মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। এখনো কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষ হলেই জানা যাবে প্রকৃত কারণ কী।

মাগুরা সদর থানার মামলার বিষয়ে ওই থানার ওসি নাসির উদ্দিন বলেন, ওসি অপারেশন্স সাইফুল ইসলাম মামলাটি তদন্ত করছেন। এছাড়া এই ঘটনায় পুলিশের সদর দপ্তর থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জেনেছি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন লাবণী আক্তার। ছুটি নিয়ে তিনি মাগুরায় তার নানার বাড়িতে আসেন। সেখানেই বুধবার রাতে সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

এদিকে, নাইট ডিউটি শেষে বৃহস্পতিবার সকালে মাগুরা পুলিশ লাইন্স ব্যারাকে নিজের অস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান। তিনি দেড় মাস হলো মাগুরা পুলিশ লাইনে বদলি হয়ে আসেন। এর আগে এই পুলিশ সদস্য লাবণী আক্তারের বডি গার্ডের দায়িত্বে ছিলেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/একে/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত