ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইসমত শিল্পীর বাসায় কবি হেলাল হাফিজ, ভবিষ্যত গন্তব্য কোথায়?

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ২০:৩১  
আপডেট :
 ০৭ নভেম্বর ২০২২, ২১:৪৬

ইসমত শিল্পীর বাসায় কবি হেলাল হাফিজ, ভবিষ্যত গন্তব্য কোথায়?
ইসমত শিল্পীর বাসায় কবি হেলাল হাফিজ।

হাসপাতাল ছাড়লেও ভালো নেই দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজ। হাসপাতাল ছেড়ে কবি ইসমত শিল্পীর বাসায় উঠলেও তার থাকার জায়গা নেই। কবির ভবিষ্যত গন্তব্য অনিশ্চিত।

জানা যায়, গত ২০ অক্টোবর ২০২২ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজ হাসপাতাল থেকে রিলিজ পান। কবির শারীরিক পরিস্থিতিতে তিনি আগে যে হোটেলে থাকতেন সেখানে থাকা সমীচিন নয়। এই অবস্থায় কবির থাকার জন্য অন্যত্র থাকার ব্যবস্থা করা যায়নি। কবির সম্মতি সূচক আলোচনার মাধ্যমে এবং অন্যান্যদের সঙ্গে আলাপ সাপেক্ষে ইসমত শিল্পীর বাসায় কবির থাকার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কিন্তু বর্তমানে অসুস্থ কবিকে দেখে রাখাসহ নিয়ম করে ওষুধ দেয়া একা ইসমত শিল্পীর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

এ প্রসঙ্গে কবি ইসমত শিল্পী জানান, গত ২০ অক্টোবর থেকে দুই সপ্তাহ আমি কবির শারীরিক মানসিক যত্ন যথাসম্ভব দিতে চেষ্টা করছি। আমার সামর্থ অনুযায়ী তাকে দেখাশোনা করবার চেষ্টা করছি। তিনি একটু একটু করে সুস্থতার দিকে এগোচ্ছেন।

নিয়মিত চারবার ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা, ইনস্যুলিন দেয়াসহ শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী খাবার খাওয়ানো, তাকে মানসিকভাবে সাহচর্য দিচ্ছেন ইসমত শিল্পী এবং তার ছেলে। তবে কবির যত্ন নিয়ে শিল্পী নিজেও আছেন দুশ্চিন্তায় আছেন।

শিল্পী জানান, কবি বলেছেন, হাসপাতালে থাকতে খুব খারাপ লাগে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলবেন কিনা, উনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। উনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তো নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন। উনাকে বারবার বলতে গেলে যদি কোনো কারণে বিরক্ত হন, তখন তো সেটা দুঃখজনক হবে। কিন্তু উনি তো কূলকিনারা পাচ্ছেন না। হাসপাতালে থাকার সময় কয়েকবার ‘আত্মহত্যা’র কথাও নাকি উনার মনে উঁকি দিয়েছে। হাসপাতালে থাকলে খুবই একা অনুভব করেন। এজন্য উনি হাসপাতালে থাকতে চান না।

শিল্পী বললেন, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যারা কবির জন্মদিনের আয়োজন করেছিলেন, যাদের অনুষ্ঠানে অসুস্থ শরীর নিয়েই হাজির হয়েছিলেন, তাদের অনুরোধেই তিনি কবিকে নিজের বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু সেই আয়োজকরা এখন আর কবির খোঁজ নিচ্ছেন না। আমার একার পক্ষে উনার সামগ্রিক দেখাশোনা করা সম্ভব না, তাই কবির জন্য একজন লোক চেয়েছিলাম তাদের কাছে। যারা কবিকে বাসায় রেখে গিয়েছিলেন, তারা বলেছিলেন কবির জন্য এক সপ্তাহের মধ্যে স্থায়ী জায়গার ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু পরে তাদের পক্ষ থেকে আর কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি এতদিনে কবির জন্য একজন লোকও দেয়নি।

দ্রোহ আর প্রেমের কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। শৈশব, কৈশোর, তারুণ্য কেটেছে নিজের শহরেই।

১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। উত্তাল ষাটের দশক হয়ে ওঠে তার কবিতার উপকরণ।

১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। তার কবিতা হয়ে উঠেছিল মিছিলের স্লোগান।

‘এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/ এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’ কালজয়ী কবিতার এ লাইন দুটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পরবর্তীতে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলেন সময়ও কবিতাটি মানুষের মাঝে তুমুল সাড়া জাগায়।

১৯৮৬ সালে প্রকাশিত প্রথম কবিতাগ্রন্থ ‘যে জ্বলে আগুন জ্বলে’ কবিকে নিয়ে যায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে। এরপর বইটির ৩৩টির বেশি সংস্করণ বেরিয়েছে। দীর্ঘসময় নিজেকে অনেকটা আড়ালে সরিয়ে নিয়েছিলেন হেলাল হাফিজ।

আড়াই দশক পর ২০১২ সালে তিনি পাঠকদের জন্য আনেন দ্বিতীয় বই ‘কবিতা ৭১’। তৃতীয় এবং সর্বশেষ বই ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদোনা’ প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত