ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

অভিনব চোর চক্রের ২ সদস্য গ্রেপ্তার

চুরির জন্য ফজরের নামাজের সময়কে বেছে নিতো চক্রটি

  সুজন কৈরী

প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২২, ০০:০৯

চুরির জন্য ফজরের নামাজের সময়কে বেছে নিতো চক্রটি
গ্রেপ্তার চোর চক্রের ২ জন। ছবি: নিজস্ব

দীর্ঘদিন ধরে একটি অভিনব চোর চক্র রাজধানীর হাতিরঝিল-তেজগাঁও এলাকার বিভিন্ন আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে চুরি করছিল। এই চোর চক্রটি চুরির জন্য ফজরের নামাজের সময়কে বেছে নিতো। ওই সময় নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় বাসিন্দারা অনেক সময় ঘরের দরজার তালা না লাগিয়েই বাইরে চলে যান। ওই সময় কোনো দারোয়ান ঘুমের ঘোরে ঝিমাতে থাকেন। পরে চোর চক্রের পুরুষ সদস্যদের সহয়াতায় চুরি করতো চক্রের নারী সদস্যরা। এই চক্রের দুই সদস্য ধরা পড়েছেন গোয়েন্দা জালে। তারা হলো- ডিভোর্সী ফাহিমা আক্তার (৩০) ও তার সহযোগী মো. ফরহাদ আলম মীর (৩৫)।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাতিরবিল থানায় গত ১৬ নভেম্বর একটি চুরির মামলা (নং-৪৫) দায়ের হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ১৬ অক্টোবর ভোর আনুমানিক ৬টার দিকে পশ্চিম হাজিপাড়া এলাকার ৫০/৬/৬/এ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. আসিফ এমরান ও তার স্ত্রী ফজরের নামাজ পড়েন। পরে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাসার দরজা বন্ধ করে হাঁটতে বের হন। ওই সময় তার বাসায় সন্তান এবং শাশুড়ি ঘুমাচ্ছিলেন। আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে বাহির থেকে বাসায় ফিরে বাসার দরজা খোলা অবস্থায় পান। পরে তারা বাসার ভিতরে ঢুকে তাদের রুমে গিয়ে দেখেন, আসিফের ব্যবহৃত গুগল পিক্সেল-৬, রিয়েলমি সি-১৭ ও রেডমি নোট-৯ মডেলের ৩টি মোবাইল নেই। সেগুলো চুরি হয়েছে। যার অনুমানিক মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।

সূত্র আরও জানায়, হাতিরঝিলে মামলা দায়েরের পর তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ। তদন্তকালে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষন করে চোর চক্রের একজন নারী সদস্যসহ দুইজনকে সনাক্ত করা হয়। পরে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ফাহিমার কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ফাহিমা তার সহযোগীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাতিরঝিল এলাকার বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে চুরি করছিলেন। তারা খুব সকালে দারোয়ান বা বাড়ির মালিকের অমনোযোগীতা বা সকালে হাটতে বের হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় থাকতেন। হাটতে বের হওয়ার পর গেট খোলা থাকার সুযোগে চোর চক্রটি বিভিন্ন বাড়িতে প্রবেশ করে হাতের কাছে মোবাইল বা ল্যাপটপ যা পায় তাই চুরি করে। পরে চক্রের অন্য সহযোগীদের সহায়তায় গুলিস্থান স্টেডিয়াম এলাকায় চোরাই মোবাইল কেনা-বেচার সাথে জড়িত লোকদের কাছে বিক্রি করে। এর আগেও এই চোর চক্র আরও ১০/১২টি বাসায় চুরি করেছে।

এ বিষয়ে গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এ চোর চক্রের নারী সদস্য বাসায় প্রবেশ করে। আর পুরুষ সদস্য বাইরে অবস্থান করে। এ চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে বিভিন্ন জাযগায় অভিযান চলছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইদানিং রাজধানীর বিভিন্ন ফজরের নামাজের পর সময় বা নামাজের পর চুরির ঘটনা ঘটনা ঘটছে। সব ঘটনায় মামলা হচ্ছে না। এ কারণে, এ ধরণের ঘটনা দিনদিন বাড়ছে। তাই আমি বলবো, কোনো চুরির ঘটনা ঘটলেই মামলা করবেন। হাতিরছিলে মামলা হওয়ার কারণেই দুইজন চোরকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। তাদের কাছ থেকে আরো ১২-১৩টি চুরির ঘটনা জেনেছি। যদি মামলা না হতো তাহলে এই অভিনব চুরির বিষয়টি আমাদের অজানাই থেকে যেতো।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, চুরির সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও অসাধু পুলিশ সদস্যদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আমরা সবাইকেই আইনের অওতায় আনবো। কাওকেই ছাড় দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে আমার পুলিশ সদস্য ‘চোর শাহীনকে’ও গ্রেপ্তার করেছি।

চোর চক্রের চুরির কৌশল সম্পর্কে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, চোর চক্রটি চুরির জন্য ফজরের নামাজের সময়কে বেছে নেয়। ওই সময় মানুষ মসজিদে গেলে বা হাটতে বের হলে চোরচক্র কৌশলে বাসায় প্রবেশ করে। বাসার দারোয়ান বসে যখন ঝিমাতে থাকে তখন মহিলা চোর বাসায় প্রবেশ করে। চোর চক্র বাসায় প্রবেশের জন্য মহিলাদের ব্যবহার করে।

ডিএমপি’র গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শহাদাৎ হোসেন সুমা বলেন, এটি একটি অভিনব চোর চক্র। তারা ফজরের নামাজের সময় গেট খোলা রাখার সুযোগের বাসা-বাড়িতে প্রবেশ করে চুরি করতো। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে বিস্তারিত জানা যাবে।

এই ধরণের চুরি রোধে করনীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, ফজরের নামাজ আদায় বা হাটতে বের হলে বাসার দরজা লক করা বা গেট বন্ধ রাখতে হবে। বাসার দারোয়ান যেন ফজরের নামাজের সময় ঝিমাতে না পারে তার জন্য তাকে সতর্ক করতে হবে। বাসায় অপরিচিত কাউকে প্রবেশ করতে দেখলে তাকে ভালভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কোন ব্যক্তিকে সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশকে জানানো বা ৯৯৯ এ কল করতে হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত