ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

অসংখ্য নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন শামস মলি

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:১৩

অসংখ্য নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন শামস মলি
ইশরাত শামস মলি। ছবি: সংগৃহীত

তিনি একজন সাধারণ মানুষ। একজন নারী উদ্যোক্তা। যার হাত ধরে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে অসংখ্য নারীর। নাম ইশরাত শামস মলি। বর্তমানে তিনি ঢাকার অ্যাট্রায়েন্ট এবং কুমিল্লার আলভিরাস বিউটি কেয়ারের কর্ণধার। পাশাপাশি পারিবারিক ডেইরি ফার্ম (এস আর এগ্রো) এবং গুটি কয়েক ব্যবসায়ের সাথেও সম্পৃক্ত আছেন। তবে হুট করে তিনি একজন নারী উদ্যোক্তায় রূপান্তর হননি। এর পেছনে ছিল ব্যক্তিগত প্রবণতা, অদম্য ইচ্ছে আর প্যাশন। একদিকে পরিবার, অন্যদিকে ব্যবসা; এসবই যার ধ্যান-জ্ঞান, সেই ইশরাত শামস মলির সঙ্গে এক বিকেলে আলাপকালে উঠে আসছিল তার পথচলার গল্পের কথা।

শামস মলি বলেন, আমার পৈত্রিক বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি। বাবা ইউসুফ জামিল বাবু। তিনি ছিলেন দাউদকান্দি উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান। ছিলেন বাংলাদেশ ফোরাম এবং বাংলাদেশ অলিম্পিকের এক সময়কার সভাপতিও।

আজকের নারী উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে রয়েছে পারিবারিক সমর্থন। মিসেস শামসের ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে। এই নারী উদ্যোক্তার কণ্ঠে বারবার উঠে আসছিল সেই গল্প।

তার ভাষায়, দাদা আব্দুস সামাদ সরকার, ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ময়নামতি টেক্সটাইল মিলসের মলিক। যা ছিল তৎকালীন উপমহাদেশের বৃহত্তর টেক্সটাইল মিলস। মহৎ এই মানুষটি সে সময় দানবীর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পারিবারিকভাবে মিসেস শামস অনেক ব্যবসা ও প্রতিষ্ঠানের মালিক। ছোট ভাই দাউদকান্দি পৌরসভার বর্তমান মেয়র। সবার ছোট ভাই মূলত পারিবারিক ব্যবসাগুলো দেখাশুনা করে। পাশাপাশি কুমিল্লা জেলা পরিষদের সক্রিয় একজন সদস্যও।

শুধু বাবার বাড়ির ব্যবসাই নয়, শ্বশুর বাড়ির ব্যবসায়ের সঙ্গেও সমানতালে ব্যবসায় পরিচালনা করে যাচ্ছেন মিসেস শামস। শ্বশুর বাড়ির সদস্যদের সঙ্গে মিলে পরিচালনা করছেন এস আর এগ্রো ফার্ম। ব্যবসায় পরিচালনায় শ্বশুর বাড়ির সমর্থন ব্যাপক সাহস যুগিয়েছে বলে মনে করেন মিসেস শামস।

তার ভাষায়, নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আত্বপ্রকাশে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন আমার শ্বাশুড়ি। তাছাড়া ভাসুর আর জা-এর পরামর্শ-সহযোগীতাও ছিল সব সময়।

বর্তমানে পুরোদস্তর ব্যবসায়ী হলেও, ইশরাত শামস মলি এক সময় হতে চেয়েছিলেন একজন সামরিক বাহিনীর সদস্য। সেই অদম্য ইচ্ছে পূরণ না হলেও, একজন সেনা কর্মকর্তার মতো নিয়মানুবর্তীতাকে কাজে লাগিয়েছেন নিজের ব্যবসায়। তবে এই সফলতার পেছনে মানুষটি স্বামী বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামস। তিনি বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি জাতিসংঘে কর্মরত রয়েছেন। পড়াশোনা চলাকালীন বিয়ে, তারপর স্বামীর কাজের সুবাদে দেশ-বিদেশে অবস্থান। শুধু তাই নয়, সৈনিক পরিবারের নানা কল্যাণমূখী কাজের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন মিসেস শামস। সব মিলিয়ে নানা দেশের মানুষ আর পরিবেশের সাথে মিশে রপ্ত করতে পেরেছিলেন ব্যবসায় সফল হওয়ার রহস্য। জানতে পেরেছিলেন, ব্যবসায় গ্রাহকদের চাওয়া-পাওয়া। তবে ব্যবসায় আসার পেছনের গল্পটা কিন্তু অনেকটা নিজের সাথেই সম্পৃক্ত।

মিসেস শামস বলেন, ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত হবো এমন ভাবনা কখনই ছিল না। যেহেতু সেনা ব্যাকগ্রাউন্ডে ছিলাম তাই আমি ছিলাম এসবের সম্পূর্ণ বাইরে। আমি কুমিল্লার মেয়ে। একটু শুরু থেকেই বলি, এক ঈদে বাড়ি গিয়েছিলাম। সে সময় একটা পার্লার সার্ভিসের জন্য কুমিল্লার একটা পার্লারে যাওয়া হয়। কিন্তু সার্ভিসটি মোটেও মানসম্মত ছিল না। আর এ কারনে মনটা ভীষন খারাপ হয়। আর ভাবি, কুমিল্লার মেয়েরা এ জায়গাটাতে এতোটা বঞ্চিত! তখনই পরিবারের সদস্যদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করি। কুমিল্লায় ভালো মানের বিউটি কেয়ার গড়ার ইচ্ছে পোষণ করি। যেই ভাবনা সেই কাজ। তখন থেকেই বিউটি কেয়ারের মতো সেবামূলক ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ততা।

আলভিরাস বিউটি কেয়ার দিয়ে মিসেস শামসের যাত্রা শুরু। যেহেতু দেশের বাইরে যাওয়া হয়েছে বহুবার। আর ফ্যাশন অ্যান্ড বিউটি নিয়ে আগ্রহও ছিল প্রবল। যেহেতু ফ্যাশনও ছিল আগ্রহের কেন্দ্রে, তাই ভিন্নভাবে ভাবতে শুরু করেন মিসেস শামস। সেবামূলক ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত করেন অনলাইন শপ। যেখানে গ্রাহকরা পান দেশ-বিদেশের নানা ফ্যাশনেবল আউটফিট। আর বিকিকিনি কেবল অনলাইনেই নয়, বিউটি সেবা নিতে আসা গ্রাহকরাও পছন্দের আউটফিটটি সংগ্রহ করতে পারেন আলভিরাস এবং অ্যাট্রায়েন্ট থেকে। বর্তমানে সফল এই নারী উদ্যোক্তার ঢাকা ও কুমিল্লায় তিনটি বিউটি কেয়ার। এর বাইরে শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে অ্যাট্রায়েন্টের আরেকটি সহযোগী ফ্যাশন শপও।

যা পুরোপুরি ফ্যাশন আউটফিট সম্পর্কিত। ভবিষ্যতে রেস্টুরেন্টের ব্যবসায়ের সাথেও যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে পোষন করেন মিসেস শামস। কেবল ব্যবসাতেই নয়, সামাজিক অনেক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত মিসেস শামস। দাদার নামে একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানও চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি এবং তার পরিবার। এমনকি বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে সমাজের অবহেলিত-বঞ্চিত মানুষের পাশেও সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেন। দুই সন্তানের জনক-জননি মি. এবং মিসেস শামস। যারা এখন পড়াশোনা করছেন মোনাস ইউনিভার্সিটিতে। একদিকে দুই সন্তানের দেখাশোনা, অন্যদিকে পরিবার ও ব্যবসায়ের দায়িত্ব, বেশ শোচনীয় অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। কী করে সামলাবেন! তবে মিসেস শামস তা ঠিকই সামলে নিয়েছেন। অসম্ভব মনের জোর ইচ্ছে তাকে নিয়ে এসেছে আজকের সফল উদ্যোক্তার অবস্থানে। একজন নারী হিসেবে তিনি বলে দিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা হওয়ার মূলমন্ত্র। পরিশ্রম আর সততা; এই দুই অদম্য প্রচেষ্টাই একজন নারী উদ্যোক্তা হয়ে উঠার জন্য যথেষ্ট বলে মনে করেন সফল এই উদ্যোক্তা।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত